Web bengali.cri.cn   
উত্তর কোরিয়ার ছেলে-মেয়েদের প্রেম ও বিয়ের রীতিনীতি
  2015-06-08 18:43:58  cri


উত্তর কোরিয়ায় যাদের বিয়ের বয়স হয়েছে, তাদের ভালোবাসা ও বিয়ে নিয়ে চিন্তাধারার পরিবর্তন হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। তাদের বাবা-মার চেয়ে ভালোবাসা ও বিয়ের বিষয়ে তাদের চিন্তাধারা আরো উন্মুক্ত, আরো স্বাধীন। তারা নিজের প্রিয় মানুষটিকে খুঁজতে চান এবং তাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চান। তারা তাদের বাবা-মায়ের মতো ঘটকের মাধ্যমে অপরিচিত ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান না।

আসলে বিয়ের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার যুবকদের মানদণ্ড অনেক সাধারণ এবং সহজ। দেশটির ছেলে-মেয়েদের কাছে সুদর্শন, স্থিতিশীল চাকরি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে যদি ওই মানুষটি উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য হন, তাহলে সেটি আরো ভালো।

আমাদের সংবাদদাতা উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এর রাস্তায় দেখেছেন, যদিও প্রকাশ্য স্থানে চুমু খাওয়া এমন প্রেমিক-প্রেমিকার সংখ্যা খুব কম, তবে পার্কে দেখা যায় ছেলেমেয়ে একটি ছাতার নিচে একসাথে বসে মিষ্টি কথা বলেন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ছেলেদের মতো উত্তর কোরিয়ার ছেলেরাও মেয়েদেরকে বাইরে গিয়ে একসাথে টেনিস খেলা, বনভোজন করা, মজা করা বা পার্কে ঘুরে বেড়ানোর আমন্ত্রণ জানান। ছেলেরা অন্যান্য দেশের ছেলেদের মতো মেয়েদেরকে উপহারও প্রদান করেন।

উত্তর কোরিয়ায় সাধারণত ছেলেরা মেয়েদেরকে ফুল, চকলেট, পুতুল ইত্যাদি জিনিস উপহার দেন। আর যদি ছেলের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়, তাহলে তারা মেয়েকে মোবাইলফোন, সোনার আংটি এমনকি কণ্ঠহারও উপহার হিসেবে প্রদান করেন।

এখন মোবাইলফোন উত্তর কোরিয়ার জনগণের চোখে খুবই ভালো জিনিস। পিয়ংইয়ং-এ অনেকেই মোবাইলফোন ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। যুবকরা ইতোমধ্যেই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছেন। তবে আইফোন বা স্যামসাং এমন বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ড সেখানে প্রায় বিরল। চীনের বা উত্তর কোরিয়ার নিজস্ব ব্র্যান্ডই সেখানে বেশি। এমন মোবাইলফোনের দামও বেশি নয়। প্রায় একশো বা দুইশো মার্কিন ডলার। মোবাইলফোনে ওয়াই-ফাই নেই। তবে উত্তর কোরিয়ার ভাষার অভিধান, ইংরেজি অভিধান, উত্তর কোরিয়ার নেতার লেখা বই এমন সব অ্যাপ্লিকেশন সেসব মোবাইলে আছে। পাশাপাশি শিক্ষা বা খেলাধুলা সম্পর্কিত গেমস এসব মোবাইলে দেখা যায়।

তাই যদি কোনো ছেলে তার ভালোবাসার মেয়েটিকে একটি মোবাইলফোন উপহার দেন, তাহলে সেই মেয়ে অনেক খুশি হন। এসব অবস্থা বিবেচনায় উত্তর কোরিয়ায় যদি একজন সাধারণ মেয়ের হাতে একটি মোবাইলফোন থাকে, তাহলে লোকেরা মনে করেন, এ মেয়ের নিশ্চয়ই ছেলেবন্ধু আছে। কারণ মোবাইলফোন তাদের কাছে অনেক দামি জিনিস, সাধারণ মেয়ের পক্ষে তা কেনা প্রায় অসম্ভব।

উত্তর কোরিয়ায় ছেলে-মেয়ের প্রেম বা সম্পর্ক স্থিতিশীল হলে সাধারণত তা বিয়ের পর্যায়ে প্রবেশ করে। দেশটির ছেলেরা সাধারণ ৩০ বছর বয়সে বিয়ে করেন, আর মেয়েরা সাধারণত ২৭ বা ২৮ বছর বয়সে বিয়ে করেন।

বিয়ের এক মাস আগে একটি বাগদান অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়ে থাকে। বাগদানের দিনে ছেলের বাবা-মা বিয়ার নিয়ে মেয়ের বাসায় যান। দুই পরিবার একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং বিয়ার পান করেন।

আর দুই পরিবার পরস্পরকে স্যুট এবং কোরীয় জাতির ঐতিহ্যবাহী পোষাক তৈরি করার কাপড় উপহার হিসেবে প্রদান করেন। যদি কোনো পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়, মাঝে মাঝে তারা পরস্পরকে মার্কিন ডলার উপহার হিসেবে দেন। আর্থিক অবস্থা আরো ভালো হলে দশটি একশো মার্কিন ডলারের নোট নগদ প্রদান করেন। আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো না হলে তিনটি নগদ বা চারটি নগদ নোট দেন।

বিয়ের আগে বাবা-মা নিজের ছেলে-মেয়ের জন্য লেপ ও বালিশ তৈরি করেন। বর ও কনে পরস্পরকে বেশ কয়েকটি কাপড় কিনে দেন। তাছাড়া পরস্পরের জন্য বিয়ের অনুষ্ঠানে পরার সব কাপড়, মোজা ও জুতাও কেনেন। বরকে কনের জন্য আরো কিছু জুয়েলারি বা অলঙ্কারও কিনতে হয়।

উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের বাড়িঘরের জন্য চিন্তা করতে হয়না। নতুন দম্পতি সরকারের কাছে অবৈতনিক বাড়িঘর পাওয়ার আবেদন জানাতে পারেন। আর বর বা কনের মধ্যে যিনি প্রথমে অবৈতনিক বাড়িঘর পান, তার বাড়িতেই থাকেন দম্পতিরা।

এখন আমরা উত্তর কোরিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু বলবো। উত্তর কোরিয়ার ঐতিহ্য অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠান সাধারণত বাসায় আয়োজন করা হয়। এর জন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিস বা খাবার বাসায় নিজেদেরকেই রান্না বা প্রস্তুত করতে হয়। সাধারণত দুই পরিবারই এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। দুপুরে কনের বাসায় আর রাতে বরের বাসায়।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ রীতিনীতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। রাজধানী পিয়ংইয়ংসহ বড় শহরগুলোতে লোকজন রেস্তরাঁয় বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন। সাধারণত কম টাকাপয়সাওয়ালা পরিবার ছোট রেস্তরাঁ বাছাই করে। আর ধনি পরিবার বড় এবং উচ্চ পর্যায়ের রেস্তরাঁ বাছাই করে। অনেক সময় এর দাম অনেক বেশিও হতে পারে।

আমাদের সংবাদদাতা পিয়ংইয়ং-এর একটি উচ্চ পর্যায়ের রেস্তরাঁয় গিয়ে জানতে পারেন, এ রেস্তরাঁয় প্রতিদিন তিনটি বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

৮০ জনেরও বেশি লোকের বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় ২ ঘণ্টা। কখনও কখনও তা ৩ ঘণ্টাও স্থায়ী হতে পারে। এর খরচও খুব বেশি নয়, প্রত্যেক জনের জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ থেকে ৫ শো টাকা। আর যদি পিয়ংইয়ং-এ থাকা বিদেশিরা সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চান, তাহলে অল্প কয়েকটি বিদেশিদের জন্য সেবা দেয়া রেস্তরাঁয় তা আয়োজন করতে হয়। ছোট রেস্তরাঁদের বিদেশিদের জন্য বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিষেধ।

বিয়ের দিন কনে দেশটির ঐতিহ্যিক পোষাক পরেন। আর বর সাধারণত স্যুট পরেন। অনেক দেশের তুলনায় উত্তর কোরিয়ার আরেকটি রীতিনীতি বলতে গেলে একদম ভিন্ন, তা হলো বিয়ের দিন যারা বর বা কনের সাথে উপস্থিত থাকেন তাদেরকে বিবাহিত হতে হয়।

বিয়ের দিন রূপসজ্জাকার প্রথমে কনেকে সুন্দর করে সাজিয়ে থাকেন। তারপর বর কনেকে বাইরে নিয়ে একসাথে রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক স্থান মানসুদেতে যান। সেখানে দেশের নেতার ভাস্কর্যের ছবি তোলা এবং ফুল দেয়া হলো উত্তর কোরিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছবি তোলার পর নতুন দম্পতি বিয়ের ভোজসভায় অংশ নেন এবং পরস্পরের সঙ্গে আংটি ও ঘড়ি বিনিময় করেন।

এ ছাড়া বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অতিথিরা উপহার হিসেবে বিভিন্ন জিনিস প্রদান করেন। পিয়ংইয়ং-এর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র সাংবাদিককে জানান, বিশ বছর আগে লোকেরা সাধারণত হাতমুখ ধোয়ার বেসিন এবং কেটলি উপহার হিসেবে দিতেন। এখন লোকেরা সাধারণত ছোট ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং নতুন স্টাইলের কাপড় ‌উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন।

বিয়ের পর উত্তর কোরিয়ার স্বামীরা পরিবারের প্রধান ভূমিকা পালন করেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসসহ বিশেষ দিবস ছাড়া স্বামীরা রান্না করেন না। আর স্ত্রীরা অফিসের কাজ ছাড়া বাসার সব কাজ করে থাকেন। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040