0601huanqiu
|
খুবই মজার না? আমরা সবাই আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের কথা জানি। ১ মে হলো 'আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস'। কিন্তু এ দিবসের আগের দিনই হল 'শিশুকে আঘাত না করা আন্তর্জাতিক দিবস'।
এদিন শিশুরা খুব খারাপ কাজ করলেও বাবা-মা তাকে আঘাত দিতে পারবেন না। মনে হয় এ দিবসটি শিশুদের অনেক পছন্দের, তাই না? বিশেষ করে দুষ্টু প্রকৃতির শিশুদের কাছে।
আপনারা কি জানেন, কারা এ দিবসটিকে নামকরণ করেছে? যুক্তরাষ্ট্রের 'কার্যকর শিক্ষা কেন্দ্রের' উদ্যোগে এ দিবসটি নির্ধারিত হয়।
তাই সকল বাবা-মাকে বলতে চাই, যদি আপনার শিশু অনেক দুষ্টুমি করেও থাকে তারপরও এ দিনটিতে তাদের প্রতি সহনশীল আচরণ করবেন প্লিজ।
১ জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের নিজস্ব শিশু দিবসও রয়েছে এবং তা উদযাপনের পদ্ধতিও ভিন্ন রকমের এবং খুব মজার। আসলে আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের জন্ম রাশিয়ায়। ১৯৪৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র ও নারী কমিশন মস্কোয় একটি সম্মেলন আয়োজন করে এবং সে সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাস্থ্য অধিকার এবং শিক্ষার অধিকার রক্ষা করাসহ শিশুদের জীবন উন্নয়ন করার জন্য প্রতি বছরের ১ জুনকে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
অধিকাংশ মুসলিম দেশ রমজান মাসের পরের ১৪ দিনকে মিষ্টি দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। তা শিশুদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের শিশু দিবস। তা সাধারণত তিনদিন ধরে উদযাপন করা হয়। শিশুরা ছোট বন্ধুদের সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি বিভিন্ন পরিবারের কাছে মিষ্টি বা ক্যান্ডি প্রত্যাশা করে। স্থানীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বয়স্করা শিশুদের চাহিদা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না। তাই শিশুরা এদিন নিজের পকেট পূর্ণ করে আনন্দের সঙ্গে বাসায় ফিরে যেতে পারে।
সুইডেনে 'ছেলে শিশু দিবস' এবং 'মেয়ে শিশু দিবস' নামে দুটি শিশু দিবস রয়েছে। প্রতি বছরের ৭ আগস্ট হল ছেলে শিশু দিবস। তারা এ দিবসকে গলদা দিবস হিসেবেও ডাকেন। মানে তারা আশা করেন দেশের ছোট ছেলেরা সব গলদার মত সাহসী হবে। এদিন শিশুকে গলদার মত করে সাজানো হয় এবং তারা খুব আনন্দময় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। অন্য দিকে ১৩ ডিসেম্বর হল সুইডেনের মেয়ে শিশু দিবস। অর্থাত্ 'সেইন্ট লুসিয়া'স ডে'।
সেইন্ট লুসিয়া হল সুইডেনের রূপকথায় বিশেষ করে মেয়েদেরকে রক্ষা করার দেবী। তাই এ উত্সবের সময় মেয়েরা লুসিয়ার মত করে সাজবে এবং অন্যান্য শিশুর জন্য ভালো কাজ করবে এবং সাহায্য করবে।
স্নায়ু যুদ্ধের সময় পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির শিশু দিবস ছিলো একদম ভিন্ন। প্রথমত, দুই শিশু দিবসের তারিখও ছিলো ভিন্ন। পূর্ব জার্মানির শিশু দিবস হল ১ জুন আর পশ্চিম জার্মানির শিশু দিবস হলো ২০ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয়ত, নামও ছিলো ভিন্ন। পূর্ব জার্মানিতে তাকে বলা হতো 'আন্তর্জাতিক শিশু দিবস', আর পশ্চিম জার্মানিতে তাকে বলা হতো 'বিশ্ব শিশু দিবস'। এ ছাড়া দিবস পালনের রীতিনীতিও ভিন্ন। গণতান্ত্রিক জার্মানিতে শিশু দিবসের জন্ম ১৯৫০ সালে। প্রতি বছরের এ দিনটি সেদেশের শিশুদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের দিন। তারা বাবা মা'র শুভেচ্ছা ও উপহার পায় এবং স্কুলেও বিশেষ উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ফেডারেল জার্মানিতে শিশু দিবসের কোনো বিশেষ অর্থ ছিলো না। অনেকেই এ দিবস সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না। তারপর ১৯৯০ সালে জার্মানির একীকরণের পর পশ্চিম জার্মানির শিশু দিবসের তারিখ এবং নাম আস্তে আস্তে পুরো জার্মানিতে জনপ্রিয় হয় এবং একটি সরকারি মানদণ্ডে পরিণত হয়।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, ইরাকের শিশুরা অনেক অসহায়। যখন অনেক দেশের শিশুরা নিজের বিশেষ উত্সব উদযাপন করে, তখন ইরাকের শিশুরা একদমই জানে না যে বিশ্বে নিজেদের জন্য এমন একটি বিশেষ উত্সব আছে। এদিন তারা আগের মতই স্কুলে লেখাপড়া করে, দোকানে কাজ করে অথবা রাস্তায় ভিক্ষা করে। কারণ সাদ্দাম হোসেনের শাসন আমলের ২০ বছরে ১ জুন ছিল ইরাকের 'তেল দিবস', তাই এদিন সারা দেশ শুধু তেল উত্সবই উদযাপন করে, সেদেশের শিশুদের জন্য কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান ছিলো না।
আপনারা কি জানেন, আফ্রিকার শিশু দিবস এক মাস স্থায়ী হয়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ যেমন মালিসহ আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম দেশে রমজান মাসকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এক মাসব্যাপী উদযাপনী অনুষ্ঠান শিশুদের সবচেয়ে আনন্দের সময়। আমরা সবাই জানি, আফ্রিকার জনগণ খুব ভালো নাচগান করেন। তাই তারা এ কার্নিভালে যত খুশি আনন্দ ও নাচ গান করেন, অথবা বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নেন। আরো একটি মজার বিষয় হল, নাচার সময় আফ্রিকান শিশুরা বিভিন্ন রকমের পশুর মুখোশ পড়তে পছন্দ করে। আর পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হোক, অপরিচিত হোক, সবাই অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ, বন্ধুর মত উদযাপন করে, যেন পরিবারের মত।
ব্রাজিলের শিশু দিবস প্রতি বছরের ১৫ আগস্ট। এদিন ঠিক ব্রাজিলের রাষ্ট্রীয় মহামারি দিবস। তাই প্রতি বছরের এ দিনে বিভিন্ন স্থানের ডাক্তাররা শিশুদের চিকিত্সা সেবা প্রদান করেন এবং বিশেষ করে ৫ বছর বয়সী এবং আরো ছোট শিশুদেরকে টিকা প্রদান করেন। মানে সরকার শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর অনেক গুরুত্ব দেয়।
আসলে বিশ্বে অনেক বেশি দেশ রযেছে, আর প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব শিশু দিবস আছে। সময়ের কারণে আমাদের পক্ষে সব দেশের শিশু দিবস নিয়ে বলা সম্ভব হলো না।
কিন্তু এখানে আমরা বলতে চাই, আজকের শিশু, আগামী দিনের ভবিষ্যত। আমাদের নিজের দেশের ভবিষ্যতকে যত্ন নিতে হবে এবং তাদেরকে রক্ষা করতে হবে, তাই না? আর যদি ভালোবাসা থাকে, তাহলে প্রতিদিনই হতে পারে শিশু দিবস, ঠিক না? (ফেইফেই/টুটুল)