Web bengali.cri.cn   
বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা
  2015-05-25 16:30:45  cri


আমরা সবাই জানি, একটি দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সেদেশের সামরিক বাহিনী খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশেরই আরো কিছু সংস্থা রয়েছে যারা খুব গোপনে নিজের ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই সংস্থাগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব সংস্থা দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক গোপন খবর সরকারকে সরবরাহ করে। হ্যাঁ, এই সংস্থা হলো একটি দেশের 'গোয়েন্দা সংস্থা'।

গোয়েন্দা সংস্থার কথা উল্লেখ করলে যুক্তরাষ্ট্রের 'সিআইএ' ও 'এফবিআই'-এর কথা বলতেই হবে, তাই না?

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন একটি বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা হলো সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা সিআইএ। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উচ্চপদস্থ নীতিনির্ধারকদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করাই হলো এই সংস্থার প্রধান দায়িত্ব।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গঠিত অফিস অফ স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস বা ওএসএস-এর উত্তরসূরি হিসেবে সিআইএ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সিআইএ গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র। এর কাজ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করা।

সিআইএ'র প্রাথমিক কাজ হচ্ছে বিদেশি সরকার, সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা এবং জাতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে তা সরবরাহ ও পরামর্শ প্রদান করা। এছাড়াও বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা, গুপ্তহত্যা, বৈদেশিক নীতিনির্ধারণে সহায়তা, কাউন্টার টেররিজম, নিজস্ব লোক সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক তৈরি, বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি, শত্রু এজেন্টদের সন্ধান, সাইবার ওয়ারফেয়ার পরিচালনা, নতুন প্রযুক্তি সংগ্রহ, ড্রোন আক্রমণ, গুপ্ত কারাগার পরিচালনা, বিশ্বের বড় কর্পোরেশনগুলোর নীতিনির্ধারণের চেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি।

যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাংলি, ভার্জিনিয়ার জর্জ বুশ সেন্টার ফর ইন্টেলিজেন্সে এর সদর দফতর। সিআইএ'র কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগ, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ, রাশিয়ান ও ইউরোপিয়ান বিভাগ, এশিয়া প্যাসিফিক, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকা বিভাগ।

আমরা সবাই জানি, হোয়াইট হাউস যেন বিশ্বের ক্ষমতার কেন্দ্র, তা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রতিনিধিত্বকারী ভবন। একই সঙ্গে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট ফ্যামিলির সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়েরও জায়গা।

এ ভবনের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন অর্থাত্ এফবিআই, ওয়াশিংটন বিশেষ এলাকার পুলিশ ব্যুরো এবং ওয়াশিংটনের স্থল বাহিনীর দফতর নিয়োজিত। ভবনটির নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি নিয়োজিত থাকেন।

এফবিআই ও ওয়াশিংটন পুলিশ ব্যুরো হোয়াইট হাউসের বাইরে নিয়মিত টহল দিয়ে থাকে, সেই সঙ্গে তারা হোয়াইট হাউসের বিরুদ্ধে আক্রমণের আচরণ নজরদারি করে এবং তা প্রতিরোধ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে এফবিআই হোয়াইট হাউসের কাছাকাছি ১২টি ব্লকে থাকা লোকজনের তথ্য ও বাড়িঘর নির্মাণের অবস্থা পরীক্ষা করে, যাতে সন্ত্রাসীরা বাইরে থেকে সুড়ঙ্গ খনন করে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে না পারে।

এখন আমরা ব্রিটেনে যাবো। প্রিয় শ্রোতা, আপনারা নিশ্চয়ই জেমস বন্ড সিরিজের চলচ্চিত্র দেখেছেন, তাইনা? হ্যাঁ, বন্ড হলেন ব্রিটেনের সবচেয়ে বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের একজন গুপ্তচর।

সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস বা এমআই৬ যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক গুপ্তচর বিভাগের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে এমআই৫, সরকারি যোগাযোগের প্রধান দপ্তর বা জিসিএইচকিউ, প্রতিরক্ষা সংস্থা বা ডিআইয়ের সাথে একযোগে কাজ করছে। যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটি বা জিআইসি'র নিয়ন্ত্রণে থেকে নির্দিষ্ট নির্দেশনার মাধ্যমে কাজ করে সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস নামটি বহুনামে উল্লেখ হয়, তখন এমআইসিক্স নামকরণটি নিশ্চিত হয়ে যায়। ১৯৯৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত এমআই৬ নামটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়নি ও খুব বেশি স্বীকৃতও ছিল না।

সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস বা এসআইএস বা এমআই৬ বর্তমানে ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে গুপ্তচরের প্রধান ভূমিকা পালনে সক্ষম।

১৯০৯ সালে উইলিয়াম মেলভিল নামক সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরো'র একজন কর্মকর্তা সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা। দপ্তরটি নৌ-সেনাবিভাগ এবং যুদ্ধ অফিসের যৌথ উদ্যোগে গ্রেট ব্রিটেন ও বিদেশের মধ্যে গোয়েন্দা অভিযানের দায়িত্ব নিয়োজিত ছিল। এটি বিশেষ করে জার্মান সাম্রাজ্যের কার্যকলাপের উপরই সবিশেষ মনোযোগ দিয়েছিল। ব্যুরো বা দপ্তরটি নৌ এবং সেনা-এই দুই বিভাগে বিভাজন করা হয়েছিল। এগুলো হলো, বিদেশি গুপ্তচরবৃত্তি এবং অভ্যন্তরীণ গুপ্তচরবৃত্তি।

১৯৯৫ সাল থেকে সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সদর দপ্তর লন্ডনের টেমস নদীর পাশে ৮৫ ভক্সহল ক্রসে অবস্থিত। ১৯৬৬-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী সদর দপ্তর সেঞ্চুরি হাউস, ১০০ ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজ রোড, ল্যাম্বেথে ছিল। তারপূর্বে এ ভবনের অবস্থান ছিল ১৯২৪-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনের ভিক্টোরিয়া স্ট্রীটে। যদিও সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস ব্রডওয়ে থেকে পরিচালিত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে এটি পরিচালিত হতো সেন্ট জেমস স্ট্রিট থেকে।

সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস সংস্থাটির ভবনের অঙ্গসজ্জা জেমস বন্ড চলচ্চিত্রের 'গোল্ডেনআই', 'দি ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ' এবং 'ডাই এনাদার ডে' ছবিতে দেখানো হয়েছে। এমআইসিক্স প্রথমবারের মতো ভবনের অঙ্গসজ্জা জেমস বন্ড সিরিজের 'দি ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ' চলচ্চিত্রে প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করে। উক্ত চলচ্চিত্রে ভবনের অভ্যন্তরে ব্রিফকেস পরিপূর্ণ টাকায় বিস্ফোরণ ঘটানোর দৃশ্য ধারণ করা হয়। ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত নিবন্ধে জানা যায় যে, ব্রিটিশ সরকার চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ ধারণ করার প্রস্তাবে বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এই দাবীটি আদৌ সত্য নয় বলে বৈদেশিক এবং কমনওয়েলথ দপ্তরের একজন মুখপাত্র নাকচ করে দেন।

চীনের গোয়েন্দা সংস্থাটি মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটি বা 'এমএসএস' নামে পরিচিত। এমএসএস এর সদর দফতর চীনের রাজধানী বেইজিং-এ অবস্থিত। সংস্থাটি ১২টি ব্যুরোতে বিভক্ত হয়ে কাজ করে থাকে। সংস্থাটির মূল দায়িত্ব হচ্ছে বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা, গুপ্তহত্যা, বর্ডার সার্ভেইল্যান্স, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কাউন্টার টেররিজম, নিজস্ব লোক সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক তৈরি, বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি, শত্রু এজেন্টদের সন্ধান, কাউন্টার রেভিউল্যুশনারি কার্যক্রম দমন, সাইবার ওয়ারফেয়ার পরিচালনা, নতুন প্রযুক্তি সংগ্রহ, বিশ্বের বড় কর্পোরেশনগুলোর নীতিনির্ধারণের চেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি।

পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার নাম ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই। এটি ছাড়াও পাকিস্তানে আরো দু'টি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। এ দু'টি সংস্থা দেশের অভ্যন্তরে গোয়েন্দা তত্পরতা পরিচালনা করে। আইএসআই'র কাজ দেশের বাইরে। ১৯৪৭ সালে ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তান মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স উল্লেখযোগ্য কোনো গোয়েন্দা তত্পরতা পরিচালনা করতে না পারায় বহির্বিশ্বের জন্য পৃথক গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজন হয়।

এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৪৮ সালে ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। নাম দেয়া হয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। প্রথম দিকে এটি মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের পৃথক একটি ইউনিট ছিল। অফিসও করা হয় মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিস থেকে আলাদা স্থানে রাওয়ালপিন্ডিতে। অবশ্য কিছু দিনের মধ্যে রাজধানী ইসলামাবাদে এর হেডকোয়ার্টার স্থানান্তর করা হয়।

মোটকথা, গোয়েন্দা সংস্থা হলো বিভিন্ন দেশের সরকারি বিশেষায়িত সংস্থা যা আইন প্রয়োগে, জাতীয় নিরাপত্তা সংরক্ষণে, সামরিক প্রতিরোধে ও বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে সহায়তার জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, গবেষণা ও প্রয়োগ করে। সরাসরি কিংবা গোপনীয় বিভিন্নভাবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্যাদি সংগ্রহ করে থাকে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজের প্রেক্ষিতে দুটো অংশে ভাগ করা যায়। প্রথমত, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থা: যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। দ্বিতীয়: বৈদেশিক কাজে নিযুক্ত গোয়েন্দা সংস্থা: যা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তথ্যাদি সংগ্রহে নিযুক্ত থাকে। এছাড়া,কিছু কিছু গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন গুপ্তহত্যা, সামরিক অভ্যুত্থানের সাথেও সংশ্লিষ্ট থাকে। সূত্র: বিভিন্ন তথ্যমাধ্যম

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040