Web bengali.cri.cn   
বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মুখে চীন ও ভারত আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করে সৃষ্টি করবে 'এশিয়া শতাব্দী'
  2015-05-22 16:36:02  cri

চীন ও ভারত উভয়ই হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার অধিকারী উন্নয়নশীল দেশ। এছাড়া দেশ দু'টো সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক নবোদিত অর্থনৈতিক গোষ্ঠী। দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন দু'দেশের জনগণের ভবিষ্যত ও কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনৈতিক কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস করবে এই দুই উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি। চীন-ভারত সম্পর্ক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কগুলোর অন্যতম। চলতি বছর দুই অঞ্চলের উন্নয়নের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের আমন্ত্রণে ১৪ থেকে ১৬ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে চীন সফর করেছেন।

আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উত্যপ্ত সমস্যায় চীন ও ভারতের ব্যাপক মতৈক্য থাকায় পেইচিং সফর নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেক আগ্রহ ছিল। কিন্তু দেখা গেছে, বর্তমানে চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়ন, বিশেষ করে চীন-ভারত আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। চ্যালেঞ্জটি প্রধানত বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে। এর প্রধান বিষয় হলো, মার্কিন মুদ্রানীতির অনিশ্চয়তা; ইউরোপের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অস্পষ্টতা; জাপানের অর্থনীতির উন্নয়নের অনির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ এবং নবোদিত অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে স্পষ্ট বিভেদ। এ সময় বিশ্বের অর্থনীতি বিরাট ভারসাম্যহীনতার মুখোমুখি হয়েছে। তবে এশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নবোদিত ও উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক গোষ্ঠী উন্নয়নের দিক থেকে প্রথম সারিতে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং শক্তিশালী হচ্ছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে জাপান ও ইউরোপ। এ প্রেক্ষাপটে চীন-ভারতের সম্পর্ক জোরদার করা, আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং দু'দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন করাই একমাত্র পথ। এমন অবস্থায় এশিয়ার ভবিষ্যৎ গঠনে জোরাল ভূমিকা রাখতে পারে চীন ও ভারত। পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে নিজেদের শক্তি বাড়ানো ও সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে নবোদিত বাজারের স্বার্থ রক্ষা এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন শৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে এ দেশ দু'টি।

প্রাচীনকাল থেকে চীন ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতার আদান-প্রদানের ঐতিহ্য আছে। ১ম শতাব্দী থেকেই চীন ও ভারত ব্যাপক ও ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। প্রাচীন সিল্ক রোডের মাধ্যমে দু'দেশের ঘনিষ্ঠ আর্থ-বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান অব্যাহত ছিল। বর্তমানে 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশলটি কার্যকর, 'বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর' ধারণা বাস্তবায়ন করা চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন বিষয়। এশিয়ার অর্থনীতির দু'টো চালিকাশক্তি হিসেবে 'চীনা শক্তি' এবং 'ভারত বুদ্ধি'র মিশ্রণ উন্নয়নের সুপ্ত শক্তিকে জাগিয়ে তুলবে। এটি চীন-ভারত অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে এবং বড় ধরনের সহযোগিতামূলক সুপ্ত শক্তি বিকাশের পথ তৈরি করেছে। অবকাঠামো নির্মাণ, নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, বিশেষ করে বিশ্বায়নের অভিজ্ঞতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত চীন থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারে। পাশাপাশি ভারতের অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধি, সফটওয়্যার শিল্পের উন্নতি, বায়ো-ফার্মাসিউটিক্যালসে বাইরের প্রভাব লক্ষণীয়। এসব অভিজ্ঞতা চীনের জন্যও উল্লেখযোগ্য।

চীন-ভারত আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার মজবুত ভিত্তি আছে। চীন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। পাশাপাশি অনেক আগে থেকেই ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীন-ভারতের সহযোগিতার হাইওয়ে, রেলপথ, বিমানবন্দর, বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র, বন্দর ও সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্র, সফটওয়্যার শিল্প, বায়ো-ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প রয়েছে। পাশাপাশি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ব্রিকস দেশগুলোর ব্যাংক এবং এশিয়া অবকাঠামো পুঁজি বিনিয়োগ ব্যাংক অর্থাৎ এআইআইবিসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক ক্ষেত্রগুলোরা এ অঞ্চলে বিনিয়োগের বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে। অবশ্য ভারত ও চীনের মধ্যে এখনও সীমান্ত ও ভূখণ্ড বিরোধ রয়েছে। বেশ কিছু ইস্যুতে এখনও মতপার্থক্য রয়েছে। তবে দু'দেশ অব্যাহতভাবে 'শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতি' অনুসরণ করে পারস্পরিক আস্থা বাড়ানো, ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা, দু'দেশের পারস্পরিক কল্যাণমূলক সম্পর্ক উন্নয়ন করা এবং একে অপরের কেন্দ্রীয় স্বার্থ ও উদ্বেগের প্রতি নজর রাখবে। এতে চীন-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হবে বলে আশা করা যায়।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040