Web bengali.cri.cn   
আমরা আবারো নেপালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি
  2015-05-15 18:38:46  cri

৭ মে সকালে থাই এয়ারওয়েজ টিজি ৩১৯ ফ্লাইট ব্যাংকক থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দিকে যাচ্ছিল। ২৬৯জন ধারণক্ষমতার বিমানটিতে ১১৬জন যাত্রী ছিল। ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর নেপাল মহামারী ঝুঁকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় এসব যাত্রী কেন এখন সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ? তাহলে শুনুন, নেপালে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাদিক ওয়াং ছি'র রিপোর্ট।

"ভদ্র মহিলা ও মহোদয়গণ শুভ সকাল। টিজি ৩১৯ ফ্লাইটে কাঠমান্ডুতে যাওয়ার জন্য স্বাগতম। পুরো ফ্লাইট হবে ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের। আশা করছি, আপনাদের যাত্রা শুভ হবে।" এভাবেই বলছিলেন বিমানবালা।

বিমানবালা নরাওয়াট এন সাংবাদিকদের জানান, ভূমিকম্পের পর কাঠমান্ডুতে যাওয়া অধিকাংশ যাত্রী হলেন স্বেচ্ছাসেবক। তিনি বলেন,

ভূমিকম্পের আগে, কাঠমান্ডুতে যাওয়া ফ্লাইট সাধারণত পরিপূর্ণ থাকতো। ভূমিকম্পের পর কয়েক দিন আমাদের বিমানে অনেক যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে গিয়েছে। এই দিনগুলোতে কাঠমান্ডুগামী মানুষের সংখ্যা কমেছে। বিপরীতদিকে ফিরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা খুব বেড়েছে। কারণ অনেক স্বেচ্ছাসেবক বাসায় ফিরে গেছেন।

জনাব নিসিট থংসিরি একটি ইসিজি মেশিনসহ সহকর্মীর সঙ্গে বসে ছিলেন। তাদের সবাই নীল রঙের ওয়েস্টকোট পরা। ওয়েস্টকোটের পিছনে থাই চিকিত্সক দলের চিহ্ন রয়েছে। নিসিট জানান, তাদের দলে মোট ২৪জন সদস্য আছে। তারা হলেন ত্রাণকাজে যাওয়া থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় চিকিত্সক দল। প্রথম দলটি ভূমিকম্পের পরপরই দুর্গত অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন,

আগের দলটি যাবার পর কিছু সময় পার হয়েছে। আমাদের প্রধান কর্তব্য আহত ব্যক্তি উদ্ধার করা নয়, বরং স্বাভাবিকভাবে চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করা। এবং নেপালের চিকিত্সকদের সহায়তা দেয়া।

আমেরিকান চেস্টার ই সুটের্লিন হচ্ছেন ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহায়ক অধ্যাপক। দুর্গত অঞ্চলে সার্জনের অভাবের কথা শুনে তিনি একাই বিমানে করে এসেছেন। তিনি বলেন,

আমার কিছু নেপালী চিকিত্সক বন্ধু আছে। আগে তাদের সঙ্গে অস্ত্রোপচারের কাজ করেছি। নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের খবর শোনার পর, আমি তাদের ফোন করেছি। এক দিকে তাদের নিরাপত্তার বিষয় অন্যদিকে তাদের কী ধরনের সাহায্য দরকার-এই বিষয়ে জিজ্ঞাস করেছি। তারা বলেছেন, আহত মানুষের সংখ্যা খুবই বেশি। সার্জনের অভাব দেখা দিচ্ছে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে চলে আসুন। আমি আসলাম। ৯-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিয়েছি।

জাপানি হিসাশি ইওয়ামোটো ফুকুওকা আন্তর্জাতিক ইনস্টিটিউটে কাজ করেন। এবার তিনি কাঠমান্ডু এবং রাজধানীর পশ্চিম দিকে ২শ' কিলোমিটার দূরে পোখরায় গিয়ে নেপালী বন্ধু এবং অংশীদারকে দেখতে যান। তিনি বলেন,

আগে আমি একদফা ত্রাণ পাঠিয়েছি। এবার আমি নিজে জাপান থেকে ১০ কেজি খাবার নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে রয়েছে টিনজাত দ্রব্য, শুকনো ফল এবং নুডলস ইত্যাদি।

দুর্যোগ যখন আঘাত হানে, সাহায্য চতুর্দিক থেকে আসে। বিদেশে বসবাসরত নেপালীদের এক্ষেত্রে অপরিহার্য দায়িত্ব রয়েছে। কমলা রঙের ফ্রক পরা বান্না মুর্টি বর্তমানে থাইল্যান্ডে বৌদ্ধধর্ম নিয়ে ডক্টরেট করছেন। তিনি বলেন,

আমি নেপালী। থাইল্যান্ডে বসবাস করি। এবার আমি তাঁবু এবং অন্যান্য সাজসরঞ্জাম নিয়ে এসেছি। যাতে ভূমিকম্পে দুর্গতদের জন্য আর্থিক, মানসিক ও ধর্মীয় সাহায্য দেয়া যায়।

নেপালী যুবক শারেমা শিভা বর্তমানে টোকিওতে চাকরি করছেন। তাঁর দু'টো চেক লাগেজে ৬ কেজি ওষুধ রয়েছে। তিনি বলেন,

আমার পরিবারের সদস্যরা ভালো আছে। কিন্তু আমাদের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এবার আমি টোকিও থেকে ৬ কেজি ওষুধ নিয়ে এসেছি। আমি সবচেয়ে দুর্গত স্থানে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে চাই। আমি জাপানি ভাষা বলতি পারি। জাপানি চিকিত্সক দলের জন্য অনুবাদ সেবা দিতে পারবো।

স্কটল্যান্ড থেকে আসা এক মাদাম সংবাদদাতাকে নিজের নাম জানাতে চান না। তাঁর দু'টো মেয়ে স্থিরভাবে তাঁর পাশে বই পড়ে। তাঁর পরিবার নেপালে প্রায় এক বছর ছিল। তাঁর স্বামী জাতিসংঘে চাকরি করেন এবং দু'টো মেয়ে সেখানে পড়াশোনা করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল সেখানে আরো এক বছর থাকা। কিন্তু ভূমিকম্পের সময় তাঁর পরিবারের সবাই কাঠমান্ডুর বাসায় ছিল। ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ড পর নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পান। সুতরাং তারা নিচে নেমে ভারবাহী দেয়ালের ওপর অবস্থান নেয়। যখন আন্দোলন একটু স্থির হয়, তখন তারা বাইরে চলে যান। ভূমিকম্পের পরাঘাতের ভয়ে তিনি দেরি না করে দুই মেয়েকে নিয়ে ব্যাংককে চলে যান । এ সময়ে ফিরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন,

এখন আমাদের থাকার জায়গা মোটামুটি নিরাপদ। তারপর আমার স্বামী তো সেখানেই আছেন। গুরুত্বপূর্ণ চাকরির কারণে তিনি সেখান থেকে আসতে পারছেন না। এছাড়া আমার বাচ্চাদের পরীক্ষা আসছে। তাদের স্কুলে অনেক বন্ধু আছে। নেপালই আমাদের বাসা। অবশ্য ফিরে যাবার পর হয়তো জীবন অনেক কঠিন হবে। যদি খুব বেশি কষ্ট হয়, তাহলে নতুন করে পরিকল্পনা করবো।

দুর্যোগের পর সাধারণত মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে নেপালে যাওয়া মানুষের জন্য আমেরিকান ডঃ চেস্টার ই সুটের্লিন কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন,

মাঝে মাঝে হাত ধোয়া। খাবার পানি পরিষ্কার করে খাওয়া। কুকুর ও অন্যান্য প্রাণী থেকে দূরে থাকা। নেপালে যাওয়ার শর্ত হলো কিছু টিকা নিয়ে নেওয়া। যেমন আমি তিন ধরনের টিকার কথা বলছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাবার ও পানি বিশুদ্ধ হতে হবে। সবকিছু রান্না করে, সেদ্ধ করে খেতে হবে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040