Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের শীর্ষ নারী নেত্রীদের স্বামীদের কথা
  2015-05-16 18:20:30  cri


বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের অধিকাংশই পুরুষ। আমরা দেখতে পাই, এসব নেতাদের স্ত্রীদের অধিকাংশই কোনো চাকরি করেন না, তবে তাঁরা সুন্দর ভাবমূর্তি বজায় রাখেন এবং তাদের স্বামীদের সাহায্য করেন।

অনেকে মনে করেন পুরুষরাই কাজের ক্ষেত্রে বা চাকরির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে আমরা এটাও জানি যে, বিশ্বের কিছু কিছু দেশের শীর্ষ নেতাও কিন্তু নারী। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই জানতে ইচ্ছে করবে এসব শীর্ষ নারী নেত্রীদের স্বামীরা কি করেন? উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তাদের স্বামীদের কথা কিন্তু তথ্য মাধ্যমে খুব একটা বেশি চোখে পড়েনা ।

জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেলের মতো নারী নেত্রীর সংখ্যা কম নয় বিশ্বে। তাদের ক্ষমতা ও শক্তির পিছনে কেমন একজন পুরুষ সমর্থন করছেন? পারিবারিক সম্পর্ক তাদের রাজনৈতিক জীবনের ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে, এসব বিস্তারিত নিয়েই আলোচনা করবো আজকের 'দৃষ্টির সীমানায়'।

২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ গঠনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। যখন ২৭টি সদস্য দেশের শীর্ষ নেতারা ভোজসভায় অংশ নিচ্ছিলেন, তখন এক ভদ্রলোক ২৬ জন সুন্দরী লেডির সঙ্গে বার্লিনের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। হ্যাঁ, এই ভদ্রলোক হলেন জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেলের স্বামী আচিম সাউর। আর ওই ২৬ জন সুন্দরী লেডি হলেন অন্যান্য সদস্য দেশের ফার্স্ট লেডি। আসলে সাউর একজন কেমিস্ট্রি বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্বের বিজ্ঞান মহলে তাঁর মর্যাদা অনেক উঁচুতে। তবে এখন স্ত্রী মার্কেলের কারণেই বাইরের বিশ্ব তাঁর নাম জানতে শুরু করে।

তবে তিনি মার্কেলের স্বামী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হতে চান না বা বিখ্যাত হতে চান না। তিনি একজন বিজ্ঞানী হিসেবেই পরিচিত হতে চান বা সুনাম অর্জন করতে চান।

২০০৫ সালে এ্যাঙ্গেলা মার্কেল বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচনে অংশ নেন। এসময় কিছু তথ্য মাধ্যম তাঁর স্বামী সাউরের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। তবে সাউর তথ্য মাধ্যমের সঙ্গে খুব কম যোগাযোগ করেন এবং সারা দিন নিজের কাজ নিয়ে একাডেমিতে ব্যস্ত থাকেন। এতে তথ্য মাধ্যম অনেক চেষ্টা করেও মূল্যবান তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় ।

তাই নির্বাচনের সময় কিছু কিছু তথ্য মাধ্যম উল্লেখ করে, মার্কেলের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় শত্রু হলেন তাঁর বদমেজাজি স্বামী। জার্মানির এক ম্যাগাজিন একটি নিবন্ধে সাউরের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ করে। ওই নিবন্ধে লেখা হয়, সাউর কোনোমতেই 'দয়ালু মিস্টার মার্কেল' হতে চান না। নির্বাচনের কৌশলে দম্পতির সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এমনটি একেবারেই বুঝতে চান না তিনি।

আরো কিছু তথ্য মাধ্যম উল্লেখ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর হিসেবে সাউর বলেন, যদি কোনো ছাত্রছাত্রী তথ্য মাধ্যমে তাঁর সম্পর্কিত মতামত দেয় অথবা তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে সাংবাদিকদের সাক্ষাতকার প্রদান করে, তাহলে তিনি এ ছাত্রছাত্রীকে বাদ দেবেন। আরো কিছু তথ্য মাধ্যম জানায়, মার্কেলের চ্যান্সেলর নির্বাচনের পরিস্থিতির ওপর কোনো গুরুত্ব দেন নি সাউর। ২০০৫ সালে নির্বাচনের সময় সাউর স্ত্রীর কাছে থাকেন নি, বরং বাসায় টেলিভিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল দেখেন।

তবে সাউর যে তাঁর স্ত্রীকে ভালোবাসেন না তা কিন্তু নয়। তিনি হয়তো তাঁর মতো করে নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে রক্ষা করতে চান। এটি অবশ্যই কোনে ভুল বাছাই নয়। কারণ প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব একটি জগত আছে, নিজস্ব চিন্তা-চেতনা আছে। তবে প্রয়োজন হলে সাউর শীর্ষ নেত্রীর দম্পতির ভূমিকা খুব ভালোভাবেই পালন করেন। প্রয়োজন না হলে তিনি নিজের দুনিয়ায় ফিরে যান এবং বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। আসলে মার্কেল আগে বলেছিলেন, আমি ও আমার স্বামীর নিজ নিজ কাজ রয়েছে। আমি গৃহিনী নই, আমার স্বামীও গৃহস্বামী নন। হ্যাঁ, প্রতিদিন সকালে তাঁরা সাধারণ দম্পতির মতোই নাস্তা খান, পত্রিকা পড়েন।

মার্কেলকে রাজনৈতিক পত্রিকা সরবরাহ করেন সাউর। তাছাড়া, সাউর হলেন মার্কেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবকারী। আসলে মার্কেল প্রতিদিন বিছানা থেকে উঠে প্রথমেই যে কাজটি করেন তাহলো স্বামীর জন্য নাস্তা তৈরি করা।

মার্কেলের তুলনায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের বিবাহিত জীবন ততটা সুখের নয়। তিনি দুইবার বিয়ে করেন । ১৯৬৮ সালে তিনি উগ্রপন্থী সাংবাদিক ক্লাউডিওকে বিয়ে করেন। স্বামীর উত্সাহে তিনি গেরিলা বাহিনীতে যোগ দেন।

২১ বছর বয়সে রৌসেফ রিও ডি জেনিরোয় যান এবং তাঁর দ্বিতীয় স্বামী কার্লোসের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৯৭৭ সালে তাদের একমাত্র মেয়ে পোলার জন্ম হয়।

রৌসেফ ও কার্লোসের প্রেম ছিলো সাগরের উন্মাতাল ঢেউয়ের মতো। যখন কার্লোস গ্রেফতার হন, তখন রৌসেফ তাকে উদ্ধারের জন্য বাবার জমি বিক্রি করে ফেলেন। কার্লোস যখন আবারো গ্রেফতার হন, তখন স্বামীকে একবার দেখার জন্য রৌসেফ ওই কারাগারে একটি চাকরি নেন।

বিপ্লবের কঠিন সময়গুলো একসাথে পার করেন তাঁরা। তবে ১৯৯৪ সালে কার্লোস অন্য এক মহিলাকে ভালোবাসা শুরু করেন। এ কারণে ২০০০ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় রৌসেফ ও কার্লোসের মধ্যে।

আসলে শীর্ষ নারী নেত্রীর পদ ততটা আরামের নয়। তাদের অনেক চাপ রয়েছে। আমরা সবাই কম বেশি ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচারের নাম জানি। তিনি 'লৌহ মানবী' হিসেবে পরিচিত । তিনি অনেক শক্তিশালী ও কঠোর চরিত্রের অধিকারী।

১৯৮৫ সালে থেচার ও তাঁর স্বামীর একসাথে চা পানের একটি ছবি প্রকাশ করে তথ্য মাধ্যম। লোকজন এ ছবির মধ্যে 'লৌহ মানবী' থেচারের স্নেহশীল চরিত্র আবিষ্কার করেন।

তাঁর মেয়াদে ব্রিটেন একটি যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ড দ্বীপে আক্রমণ চালালে থেচারের নির্দেশে ব্রিটিশ বাহিনী আর্জেন্টাইন সেনাদেরকে হটিয়ে দিয়ে ফকল্যান্ড দ্বীপ দখলে নেয়।

তবে স্বামীর কাছে থেচার নারীর স্নেহশীল চরিত্রের কথা ভুলে যান নি। তিনি তথ্য মাধ্যমকে একটি কথা সবসময়ই বলতেন, পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলতেন, তাঁর স্বামী খুব চমত্কার একজন পুরুষ, ভালো স্বামী ও ভালো বন্ধু।

একবার থেচার তথ্য মাধ্যমের সামনেই তাঁর মেয়ের সঙ্গে মেয়ের বাড়িঘর চুনকাম করেন। তখন থেচার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী হলেও সত্যি সাধারণ মায়ের মতো তিনি।

তবে থেচারের মৃত্যুর পর কিছু আত্মীয়স্বজনের স্মৃতিসংকলন থেকে জানা যায়, 'লৌহ মানবী' থেচার একজন মা হিসেবে তেমন সফল ছিলেন না । তাঁর ছেলে মার্ক থেচার সবসময়ই বিভিন্ন মামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর মেয়ে মনে করেন, থেচার একজন মহান প্রধানমন্ত্রী, তবে একজন ভয়ানক মা।

ব্রিটেনের একজন রাজনীতিবিদ বলেন, আমার মনে হয় খুব কম মানুষই জানেন, শীর্ষ নেতারা পারিবারিক জীবনে কত বড় চাপের সম্মুখীন হন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ব্রিটেনের রানীর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিন জনেরই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, আপনি বুঝতে পারেন থেচার কত বড় চাপের সম্মুখীন হয়েছিলেন।

ভবিষ্যতে নারী নেত্রীরা বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে আরো বড় ভূমিকা পালন করবেন। তাদের অংশগ্রহণে রাজনীতির মঞ্চে নারীদের সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। হয়তো এসব নেত্রীদের সফল হওয়ার পিছনে তাদের স্বামীরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাবেন নীরবে নিভৃতে। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040