Web bengali.cri.cn   
'আকাশের সাথে-০৫০২
  2015-05-02 18:46:18  cri

ট: প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, da jiahao! আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন 'আকাশের সাথে'। আর এ আয়োজনে আপনাদের সঙ্গে রয়েছি আমি এনামুল হক টুটুল এবং আমি শিয়েনেন আকাশ।

ক: বন্ধুরা, আমার মনটা ভীষণ খারাপ। অনেক দু:খ, কষ্ট, যন্ত্রণা নিয়ে এ সপ্তাহটি পার করছি। কারণ নেপালের ভাইবোনেরা ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত। তারা ভীষণ দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।

ভাই বোনেরা, আপনারা জানেন না, নেপাল আমার কতটা প্রিয়। নেপাল আমার জন্য একটি বিশেষ দেশ, একটি বিশেষ জায়গা। আমি দুইবার দেশটিতে গিয়েছি। বিশেষ করে গত বছরের শেষ দিকে আমি আমার আম্মাকে নিয়ে সেখানে গিয়েছি। নেপালের মানুষ আমার আত্মীয়-স্বজনের মতো। তারা আমার ভাইবোন। নেপালে আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রেমাসহ তাদের কথা সবসময় আমার মনে পড়ে। ভূমিকম্পের পর থেকে তাদের জন্য আমি খুবই চিন্তা করছি।

ট: নেপালের ভূমিকম্পের ঘটনায় আমি হতবাক হয়ে পড়েছি। দেশটির ধ্বংসস্তূপ দেখে আমি বলবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডু এখন ভাঙ্গা, বিধ্বস্ত একটি শহর । হাজার হাজার মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। মানুষের আর্তচিত্কারে কেঁপে উঠছে নেপালের আকাশ। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো বদলে গেছে নেপালের দৃশ্যপট। সেখানে এখন নেই কোনো আনন্দ, নেই কোনো উল্লাস, কেবল আর্তনাদ আর আর্তনাদ।

ক: ভাই, তুমি জানো? আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় আমি নেপালে কাটিয়েছি। সেখানকার নীল আকাশ, সেখানকার বরফের পাহাড়, সেখানকার নাচ, গান, মোমো, চব্র, সেখানকার বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি, আমাকে দেয়া আপেল, তাদের ভালোবাসা, দরবার স্কয়ার, মাংকি টেম্পল সবকিছুই প্রতিনিয়ত মনে পড়ে । আর এসব মনে পড়ে পড়ে মনের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে চোখের পানি।

ট: ভাই তোমার কথা শুনে আমারও কান্না পাচ্ছে। বুঝতে পারছি এ ঘটনা তোমাকে কতটা কষ্ট দিচ্ছে। তুমি অনেক বেশি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছো । কারণ তুমি সেখানে যতটা আদর, ভালোবাসা, সুখ, শান্তি, আনন্দ পেয়েছো তা সত্যিই অসাধারণ । হ্যাঁ ভাই, নেপালের এ ভূমিকম্পের ঘটনায় আমরা আবারও জানলাম প্রকৃতির কাছে মানুষ সত্যিই অসহায়। প্রকৃতি যেকোনো সময় যেকোনো কিছু করতে পারে। (লাইভ)

আ: ভাই, ওইদিন আমি দেখেছি কাঠমান্ডুর সব পুরোনো ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে পড়েছে, অনেক মানুষ মারা গেছে, অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে, অনেকে কান্নাকাটি করছে। ভাই, এসব দেখে মনে হলো আমার নিজের অংশও এর সাথে মারা গেছে।

ট: আমিও যখন ওই দৃশ্য দেখি তখন চোখের পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি । মানুষের চিত্কার, আর্তনাদ দেখে আমিও কেঁদেছি নীরবে। সবসময় পত্রিকা, টেলিভিশনে চোখ রেখেছি সবকিছু জানার জন্য। মনে হয়েছে আর কিছু করতে না পারি যদি উদ্ধার কাজে অংশ নিতে পারতাম। (লাইভ)

আ: ভাই, একদিন গভীর রাতে আমার নেপালি বন্ধু প্রেমা আমাকে উইচ্যাটে ম্যাসেজ পাঠায় । সে বলে, এখন ভূমিকম্প হচ্ছে, আমি খুবই চিন্তার মধ্যে আছি। তাকে বললাম : বের হও, বের হও, তাড়াতাড়ি, দ্রুত। এর পর সে বাসা থেকে বের হয়। আমি সারা রাত তাকে নিয়ে খুব চিন্তা করি। তার জন্য দোয়া করি সে যেন নিরাপদে থাকে, ভালো থাকে।

ট: হ্যাঁ, ভাই আমিও তার জন্য দোয়া করি তিনি যেন ভালো থাকেন, নিরাপদে থাকেন । নেপালসহ যারা এই ভূমিকম্পের শিকার হয়েছেন তারা খুব দ্রুত যেন শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন সেই দোয়া করি। তাদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। আমরা দূরে থাকলেও সবসময় তাদের সঙ্গে আছি, পাশে আছি । আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাদের সাথে আছি।

আ: ভাই, নেপাল আমার জীবনে প্রাণের মতো, আত্মার মতো। দেশটিকে যেকোনো সাহায্য করার জন্য আমি মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবো। আমি চিরদিন দেশটির সঙ্গে থাকতে চাই।

ট: আমিও তোমার মতো নেপালের জন্য কিছু করতে চাই। হ্যাঁ, আমাদের সিআরআইতে নেপালের সাহায্যের জন্য বুথ খোলা হয়েছে, আমি সেখানে অংশ নিয়েছি, নেপালের জন্য দোয়া চেয়ে ভিডিও করা হয়েছে, সেখানেও আমি অংশ নিয়েছি । ভিডিওতে সবার উদ্দেশে আমি বলেছি, প্রার্থনা নেপালের জন্য।

আকাশ ভাই, আমরা দেখেছি, ভূমিকম্প ঘটার পরপরই বিভিন্ন দেশ নেপালকে সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছে। চীন,বাংলাদেশ, ভারত যত দ্রুত সম্ভব সাহায্য করেছে। ভূমিকম্পের পরই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী লি খ্যা ছিয়াং নেপালের নেতাদেরকে সমবেদনা জানান।

সি চিন পিং বলেন, এ বিপদের সময় চীনা জনগণ দৃঢ়ভাবে নেপালের জনগণের পাশে থাকবে এবং সব ধরনের সহায়তা করবে ।চীনের উদ্ধারকারী দল হচ্ছে নেপালে আসা প্রথম আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল। চীনের জনগণ নেপালের জনগণের জন্য আসলে খুবই চিন্তা করছে। নেপালের বেদনা হচ্ছে চীনের বেদনা, নেপালের কষ্ট হচ্ছে চীনের কষ্ট।

অ: বাংলাদেশও নেপালের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ নেপালকে সাহায্য করবে যেন দেশটি কঠিন সময় পার করতে পারে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ চিকিত্সা ও মানবিক ক্ষেত্রে নেপালকে সহায়তা করবে। তাছাড়া, হাসিনা আরো বলেন, নেপাল চাইলে এই দুর্যোগের সময় বাংলাদেশের বিমানবন্দর বিশেষ করে সীমান্তের কাছের হ্যালিপ্যাড বা বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে ।

আসলে বাংলাদেশেও এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরপর তিনদিন এ ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন মারা যান।

লি ইয়া নান হচ্ছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকার কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের চীনা ভাষার শিক্ষক। তিনি উত্তরায় থাকেন।

তিনি এবারের ভূমিকম্প সম্পর্কে আমাকে বলেন,'গতকাল ভূমিকম্পের সময় আমি খাটে ঘুমাচ্ছি, তখন হঠাত অনুভব করি যে, আমার খাট নড়ছে । তারপর দেখি পুরো ভবন নড়ছে। আম দৌড়ে জানালার পাশে গিয়ে দেখি পুরো ভবনের মানুষ চিত্কার করতে করতে নিচে নামছে । তখন আমার বাঙ্গালি প্রতিবেশী আমার দরজা নক করে আমাকে নিচে নিয়ে যায়। যখন তার সাথে নিচে নামি তখন বাইরে ঝর। রাস্তা ভরা মানুষ সবাই আতঙ্কিত এবং সবাই দেখছি আত্মীয়স্বজনদেরকে ফোন করছেন।

আমাকে এ ঘটনা বর্ণনা করার পর লি ইয়া নান নেপালিদের জন্য প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, দুর্যোগে আমরা হাতে হাত রেখে একসাথে তা মোকাবিলা করবো। আমি নেপালের ভূমিকম্পদুর্গতের জন্য প্রার্থনা করবো খুব দ্রুত তারা যেন তাদের ঘরবাড়ি আবার নির্মাণ করতে পারেন।

ট: ভাই, তার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমিও উত্তরায় ফিরে এসেছি। আসলে এ কথা শুনে খুব ভয় পেয়েছি।

আ: ভাই, ভয় করবে না। আমাদের সামনে যত কঠিন সমস্যাই আসুক না কেন আমরা সবসময় একসাথে আছি, আমরা একসাথে এগিয়ে যাবো, একসাথে নতুন ভবিষ্যত গড়বো এবং একসাথে সেখানে উড়বো। ভুলে যাবে না ভাই, আমরা সবাই সাটেক পালাই ।

ট: ইয়েস, একশোভাগ ঠিক বলেছো ভাই, আমরা সাটেক পালাই । আমরা এগিয়ে যাবোই যাবো।

বন্ধুরা, সম্প্রতি আমি ও আকাশ ভাই চীনের শানতুং প্রদেশে আয়োজিত এক সবজি মেলায় গিয়েছিলাম। একদিন সন্ধ্যার সময় সেখানকার মি নদী পার্কে হাঁটার সময় আকাশ ভাই আমাকে একটি নেপালি গান শুনিয়েছিলেন, গানটির নাম হচ্ছে 'রেশাম ফিরিরি'।

আ: আসলে যখন নেপাল গিয়েছিলাম তখন অন্নপূর্ণা পাহাড়ে উঠার সময় আমি ও আম্মা এ গানটি শুনি। আমি এখন এ গানটি সবাইকে শোনাতে চাই।

মনে রাখবেন ভাইবোনেরা, আমরা সাটেক পালাই, আমরা সবসময় একসাথে থাকবো। আমাদের ভালোবাসা অনেক গভীর,অনেক পবিত্র। যত কঠিন সমস্যাই আসুক না কেন আমরা তা ভালোবাসা দিয়ে জয় করবো।

আমরা আবার সেই বরফের পাহাড় অন্নপূর্ণার উপরে এ গান গাইবো।

প্রিয় নেপালবাসী, আমরা সবসময় আপনাদের সাথে আছি, থাকবো, আমরা কখনও পৃথক হবো না।

ট: হ্যাঁ বন্ধুরা, আমরা অন্তর থেকে, হৃদয় থেকে আপনাদের সাথে আছি। সবকিছুকে জয় করে একসাথে সামনে এগিয়ে যাবো এ আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ।

বন্ধুরা, আগামী সপ্তাহে আমরা আপনাদের নিয়ে চীনের শানতুং প্রদেশের শউকুয়াং জেলায় যাবো, কেমন? এবার তাহলে আমরা নেপালের বরফের পাহাড়ে 'রেশাম ফিরিরি' গানটি শুনবো । আর এর সঙ্গে সঙ্গে আমরা নেপালের জন্য প্রার্থনা করবো।

(গান)

ট: বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্তই। আপনারা যদি নিজেদের কোনো কথা আমাদের সাথে শেয়ার করতে চান বা কোনো কথা বলতে চান, তাহলে আমাদের কাছে টেলিফোন করতে পারেন বা ইমেইল করতে পারেন। আমাদের টেলিফোন নম্বর হচ্ছে: ০০৮৬১০৬৮৮৯২৪২০ এবং আমাদের ইমেইল হচ্ছে enamulhoquetutul@yahoo.com.

ক: বন্ধুরা, এবার তাহলে বিদায়। সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। থাকুন সুস্থ ও আনন্দে।

নেপালের ভাইবোনেরা, আপনারা সবসময়ই আমাদের মনে, আমাদের হৃদয়ে, আমাদের আত্মায়।

ট: হ্যাঁ ভাইবোনেরা, জীবনে মরণে আমরা কখনো পৃথক হবো না। আমরা দূরে থাকলেও সাথে আছি আপনাদের । তাই মনকে শক্ত করে এগিয়ে যান। নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়ুন জীবন যুদ্ধে। আমাদের শক্তি আপনাদের সাথে। (আকাশ/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040