Web bengali.cri.cn   
নতুন পরিস্থিতিতে চীন-দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্ক নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন পাকিস্তানে চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত
  2015-05-08 16:44:03  cri

 


গত ২৭ এপ্রিল চীনের সাংবাদিক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত জাং ছুন শিয়াং নেপালের ভূমিকম্প, চীন ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দেশি-বিদেশি সংবাদদাতাদের সঙ্গে মতামত বিনিময় করেছেন।

গত ২৫ এপ্রিল নেপালে রিখটার স্কেলে ৮.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। জাং ছুন শিয়াং বলেছেন, ভূমিকম্প হবার পর নেপালের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীন সময়োচিত সাহায্য দিয়েছে। চীনের আন্তর্জাতিক ত্রাণ দল ভূমিকম্প হবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাঠমান্ডুতে পৌঁছেছে। চীন সরকার নেপাল সরকারকে ২ কোটি ইউয়ানের জরুরী মানবিক সহায়তা দিয়েছে। তিনি বলেন,

নেপালে ভূমিকম্পে আমি খুবই দু:খিত। নেপালের দুর্গত অঞ্চলের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। পাকিস্তানে দায়িত্ব পালনের সময়ও আমি ভূমিকম্প দেখেছিলাম। তখন চীন সরকার দ্রুত ত্রাণ দল পাঠিয়েছে। নেপালের ভূমিকম্পে চীন সরকারও দ্রুত ত্রাণ দল ও চিকিত্সক দল পাঠিয়েছে। চীনের আন্তর্জাতিক ত্রাণ ক্ষেত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আরো বাড়ছে।

নেপালে ভূমিকম্প হবার পর ভারতও ইতিবাচকভাবে ত্রাণ দেয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর জন্য বেশ কয়েকটি বিমান পাঠিয়েছে। রয়টার্সের সংবাদদাতা সন্দেহ প্রকাশ করেছে যে, এতো দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর কারণ হলো ভারতের সঙ্গে নেপালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। রাষ্ট্রদূত জাং স্পষ্টভাবে বলেন,

নিকটবর্তী দেশে সবাই ভাই-ভাই, ভাল বন্ধু, ভাল প্রতিবেশী এবং ভাল অংশীদার। চীনের বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী এতো বড় সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় চীনের অপরিহার্য দায়িত্ব আছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ ক্ষেত্রে আমরা এবং ভারতের মধ্যে তথাকথিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।

জাং ছুন শিয়াং জোর দিয়ে বলেন, নেপালের বন্ধু প্রতিবেশী দেশ হিসেবে 'চীনের প্রথম সময় সাহায্য দেয়া উচিত'। আসলে চীন ভারতের সঙ্গে অভিন্নভাবে আরো বেশি প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

সংবাদ সম্মেলনে এ জাং ছুন শিয়াং চীন-দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন,

দক্ষিণ এশিয়া হলো ২১ শতাব্দীর সম্ভাবনাময় উপমহাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে স্থিতিশীলতা রক্ষা, অর্থনীতি গতিশীল করা, নিজেদের বাস্তব অবস্থা উন্নয়নের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পথ অন্বেষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

তিনি বলেছেন, চীন ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক হলো দাঁত-ঠোঁটের মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ভাল বন্ধু। চীন দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যত ও নিয়তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার উচিত সুযোগ কাজে লাগানো। হাতে হাত রেখে সহযোগিতা করে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি উন্নয়ন জোরদার করা।

জাং ছুন শিয়াং উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সালে চীন 'এক অঞ্চল এক পথ' ধারণা উত্থাপন করেছে, যা এ অঞ্চলের উন্নতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন সার্বিকভাবে অগ্রগতি বাড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত করেছে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করবে চীন। এছাড়া চীন দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে অব্যাহতভাবে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান সম্প্রসারণ করবে। আগামী ৫ বছর দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশকে চীন ১০ হাজার বৃত্তি দেবে। তা ছাড়া চীন এশিয়া অবকাঠামো পুঁজি বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

চীনের উদ্যোগে 'এক অঞ্চল এক পথ' প্রতিষ্ঠায় কোন মানুষের আশংকা ও সন্দেহ সম্পর্কে জাং ছুন শিয়াং বলেন,

'এক অঞ্চল এক পথ' বরাবর ৬৪টি দেশ আছে। যারা সবাই এ প্রকল্পে উপকৃত হবে। কিন্তু বর্তমান পরিচালনা ও কার্যকর করার প্রক্রিয়া হলো যৌথভাবে 'এক অঞ্চল এক পথ' গড়ে তোলা। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন, এক অঞ্চল এক পথ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ করা, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো, উন্নয়ন বিস্তৃত করা, সৃজনশীল সহযোগী হিসেবে সিল্ক রোড অর্থনৈতিক বেল্ট প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিভিন্ন দেশের অভিন্ন চেষ্টা দরকার। বর্তমানে এ কাজে আরো বেশি মতৈক্য অর্জিত হয়েছে।

জাং ছুন শিয়াং সবশেষে বলেন, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমষ্টিগতভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। বিভিন্ন দেশ জীবিকা অর্জনের ওপর মনোযোগ দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমষ্টিগতভাবে ভালো রয়েছে। দেশগুলোর সম্পর্কও দিন দিন বাড়ছে। উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়া হলো চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। চীন এতদাঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে 'এক অঞ্চল এক পথ' ধারণা বাস্তবায়ন করতে চায় এবং এ কাজে অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানায়।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040