Web bengali.cri.cn   
বিভিন্ন ডেটিং এজেন্সির ধোঁকাবাজির পদ্ধতি
  2015-04-13 15:10:00  cri


সম্প্রতি বিবিসির ওয়েবসাইট চীনের 'লেফ্টওভার উইমেন; বা 'বয়স পেরিয়ে যাওয়া নারী'-এর বিষয় নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। প্রবন্ধে মিস হুয়াং নামে একজন মেয়ের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। হুয়াং-এর বয়স ২৯ বছর। তিনি বলেন, এখন বিয়ের জন্য তিনি খুব উদ্বিগ্ন। কারণ বিয়ের বয়স হয়েছে তার, কিন্তু তার ছেলে বন্ধু নেই, আত্মীয়স্বজন সবাই তাকে বিয়ের জন্য চাপ আরোপ করছেন। আসলে হুয়াং খুব ভালো একজন মেয়ে। খুব আস্থাবান, সুন্দরী, বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রি আছে, নিজের বাড়ি আছে, বেশি বেতনে চাকরি করেন, বন্ধুও অনেক বেশি।

সমাজে এমন এক ধরনের চিন্তাধারা প্রচলিত আছে যে, নারীদের বয়স বেশি হলে, তাদের মূল্য হয়তো কমে যায়। কিন্তু এখন চীনা মেয়েদের জীবন সম্পর্কে চিন্তাধারার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। তারা খুব ভালোভাবে শিক্ষিত, তাই বিয়ে সম্বন্ধে তাদের চাহিদাও আগেকার মানুষের চেয়ে বেশ উঁচু। হ্যাঁ, বয়স হলে বিয়ে করা স্বাভাবিক এটা ব্যাপার এবং তা যথার্থ। তবে শুধু বিয়ের জন্য বিয়ে করা, তা বর্তমানে আধুনিক মেয়েদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

তাই এখন বিভিন্ন ডেটিং এজেন্সি বা প্রিয় মানুষ খোঁজার এজেন্সির সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের লক্ষ্য হলো এমন মেয়ে বা ছেলেকে প্রিয় মানুষের খোঁজার জন্য সাহায্য করা। হ্যাঁ, তাদের উদ্দেশ্য ভালো, কিন্তু এ ক্ষেত্রে কিছু ধোঁকাবাজিও রয়েছে, তাই আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়টি নিয়েই আপনাদের সঙ্গে আলাপ করবো।

প্রথমে আমরা দৃষ্টি ফেরাবো জাপানের দিকে। ৪১ বছর বয়সী জাপানি পিকি কেনজি টোকিও'র প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং তিনি এখন মাধ্যমিক স্কুলের একজন শিক্ষক। তার বার্ষিক আয় প্রায় ৪০ লাখ ইয়েন অর্থাত্ প্রায় ৩৩ হাজার মার্কিন ডলার। নি:সন্দেহে বলতে পারি তাঁর ব্যক্তিগত অবস্থা অনেক ভালো। তিনি ভালোভাবে শিক্ষিত এবং আর্থিক অবস্থাও সন্তোষজনক। তবে তাঁর চরিত্র খুব লাজুক স্বভাবের বলে এখনো কোনো বান্ধবী পান নি। তিনি জাপানের ৮ লাখ 'প্রেম খোঁজা কঠিন লোকের' অন্যতম একজন।

অবশেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে কেনজি ডেটিং এজেন্সির কাছ থেকে সাহায্য নেন। তিনি এজেন্সির ব্যবস্থাপনায় ২১ বার অভিসারে যান, তবে তা সবই ব্যর্থ হয়। এতে তাঁর বিভিন্ন ব্যয় হয় মোট ৮ লাখ ইয়েন অর্থাত্ ৭ শ মার্কিন ডলার।

কেনজির নিবন্ধন করা ডেটিং এজেন্সি পুরুষদের কাছ থেকে অনেক বেশি ফি আদায় করে। যেমন নিবন্ধন ফি, অনুষ্ঠান আয়োজনের ফি, মেয়ের সঙ্গে দেখা করার ফি ইত্যাদি ইত্যাদি। অবশেষে কেনজি আবিস্কার করেন যে, তিনি এজেন্সির ধোঁকাবাজিতে পড়েছেন। প্রতি বার এজেন্সির ব্যবস্থাপনা করা মেয়ে আসলে তাদের কর্মী, শুধুই টাকা অর্জনের জন্য এই মেয়েকে ব্যবহার করেছে এজেন্সি।

কেনজির গল্প টেলিভিশন কেন্দ্রের দৃষ্টিও আকর্ষণ করে এবং তার গল্প টিভিতে প্রচার করা হয়। এ খবর শুনে অনেকেই তাঁর প্রতি অনেক সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

এবারে দৃষ্টি ফেরাবো দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের মিস্টার কিমও এমন ধোঁকাবাজির শিকার হন। ৩৬ বছর বয়সী মিস্টার কিম সংবাদদাতাকে জানান, কয়েক বছর আগে তিনি একটি ডেটিং ওয়েবসাইটের সদস্য হন। তিনি আশা করেন, এ এজেন্সির মাধ্যমে নিজের প্রিয় একজন মেয়ে খুঁজে পাবেন। তবে ওয়েবসাইটটি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁর জন্য উপযোগী মেয়ের ব্যবস্থা করে নি। কিম বলেন, মাঝে মাঝে আমি মেয়েকে দেখে আতংক হই, বিভিন্ন ধরনের মেয়ে আছে, কিন্তু স্বাভাবিক মেয়ে নয়। তিনি শুরুতে তিনি অনেক আশাবাদী ছিলেন, কিন্তু পরে তিনি পুরোপুরি হতাশ হন। এতে তাঁর হৃদয় যেমন ভেঙে যায়, তেমনি খরচও করে ফেলেন অনেক বেশি টাকা। অবশেষে কোনো মেয়ে খুঁজে পান নি তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার ডেটিং ওয়েবসাইটে কাজ করা একজন কর্মী সংবাদদাতাকে জানান, ডেটিং ওয়েবসাইটের সাহায্য চাইলে এর সদস্য হতে হয়। সদস্যের দেয়া ফি বেশি হলে অভিসারে যাওয়ার সংখ্যাও বেশি হয়। আর যদি ফি কম হয়, তাহলে মেয়েকে দেখার সুযোগও কম। কিছু ওয়েবসাইট মুনাফা পাওয়ার জন্য মন্দ মেয়েকে ভালো পুরুষের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে।

এর ফলে ওই পুরুষ সন্তুষ্ট না হয়ে আবার অভিসারে যেতে চান। এর জন্য তাকে আরো বেশি ফি দিতে হয়, ওয়েবসাইট এভাবেই অনেক মুনাফা লাভ করে।

এখন তথ্য মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ধোঁকাবাজির রিপোর্ট বা খবর দেখা যায়। তাই অনেকেই জানতে পারেন যে, ডেটিং এজেন্সি ততটা নির্ভরযোগ্য নয়। এখন তরুণ তরুণীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেইসবুক, টুইটার অনেক জনপ্রিয়। তাই কেউ কেউ এর মাধ্যমে প্রিয় মানুষ খুঁজতে চান। এ ব্যাপারে ফ্রান্সের একটি উদাহরণ আছে। ফরাসী ক্লেয়ার স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর নিজেই একটি ছোট ক্লিনিক পরিচালনা করেন। একটি কুকুর আর দু'টি বিড়াল তাঁর সঙ্গী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি তিনজন পুরুষের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে তিনি আবিস্কার করেন এই তিন পুরুষের অবস্থা একদম একই। তাদের সবার একটি মেয়ে ও একটি ছেলে আছে, ছেলেমেয়েরা বিদেশে থাকে। তিনজন পুরুষই ক্লেয়ারের জন্য কবিতা লিখে প্রেমের কথা জানান। তাঁরা তিনজনই বলেন যে, পশ্চিম আফ্রিকায় ব্যবসায়ীক সফর করবেন এবং ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার পর ক্লেয়ারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তবে যখন ক্লেয়ার তাদের সঙ্গে দেখা করতে চান, তিনজনই বলেন যে, আফ্রিকায় তাদের ঝামেলা হয়েছে এবং স্থানীয় আইন লঙ্ঘন করার মামলা থেকে জামিন পাওয়ার জন্য ১.৫ ইউরো প্রয়োজন। তাঁরা ক্লেয়ারের কাছে আর্থিক সাহায্য চান। ভাগ্যের বিষয় হলো তাঁরা ক্লেয়ারকে বোকা বানাতে পারেন নি। এখন তিনি এই তিন জনের সঙ্গে কথা বলে না।

প্রতি বছর ভালোবাসা দিবসের আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় পরিষদ ও এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা অভিসার ধোঁকাবাজির ইঙ্গিত দেয়। গত বছরের ভালোবাসা দিবসে এফবিআই ওয়েবসাইট অভিসারের বিরুদ্ধে একটি ধোঁকাবাজি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, যারা সহজেই প্রতারিত হন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই ৪০ বছর বয়সের বেশি একা থাকা নারী। তাদের মধ্যে কারো কারো বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, কেউ কেউ প্রতিবন্ধী, তবে তাদের একই অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা হলো অন্যের যত্ন নেয়া ও সঙ্গী পাওয়া। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040