0406huanqiu
|
অস্ট্রেলিয়ার কথা উল্লেখ করলে অনেকেই বলেন, এ দেশটির প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি সুন্দর, বিশেষ করে সিডনির সমুদ্রসৈকতের কথা একবাক্যে সবার মুখে মুখে। হ্যাঁ, এ কথা অতি সত্য। কিন্তু যদি আপনি একটু খেয়াল করেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন সমুদ্রসৈকতে যার বুকে একটি ছোট শিশু রয়েছে তিনি একজন পুরুষ। অস্ট্রেলিয়ার নারীরা অনেক আরামপ্রিয়। তারা সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পছন্দ করেন। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তারা শিশুকে যত্ন নেন।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সর্বশেষ গবেষণা থেকে জানা গেছে, পরিবারে চার বছরের নিচে ছোট শিশু রয়েছে, এমন পরিবারের বাবা অন্যান্য দেশের বাবার চেয়ে প্রতিদিন অফিসে কাজ করা, শিশুদের লালনপালন করা ও পরিবারে কাজ করার জন্য আরো বেশি সময় বরাদ্দ করেন। এর তুলনায় একই অবস্থায় ফরাসি বাবাদের কর্মের সময় অস্ট্রেলিয়ার বাবার চেয়ে দুই ঘণ্টা কম। ইতালি ও ডেনমার্কের বাবার প্রতিদিন কাজের সময় অস্ট্রেলিয়ার বাবার চেয়ে এক ঘণ্টা কম।
এমন একটি মজার খবর রয়েছে যে, চীনের বাবারা শিশুকে বলেন, তুমি নিজে খেলাধুলা করো, আমি একটি বিশ্রাম নেবো। কাজের বাইরে চীনা বাবার অবকাশ জীবন মানে বন্ধুর সঙ্গে মদ পান করা, বাইরে পার্টি করা ইত্যাদি ইত্যাদি। শিশুকে যত্ন নেয়া, শিশুকে স্নান করা এসব কাজ সম্বন্ধে চীনা বাবা ততটা ভালো করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে মার্কিন বাবা সবসময় বলেন, কিউটি, বাবা তোমার সঙ্গে খেলাধুলা করবো,কেমন? মার্কিন বাবারা পরিবারে পার্টি আয়োজন করা, শিশুকে নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া এমন কাজের জন্য বেশি সময় বরাদ্দ করেন। এর তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার বাবারা শিশুদের লালন ও পরিবারে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সময় বরাদ্দ করেন। তারা শুধু অফিসে যে খুব পরিশ্রম করেন তা নয়, বরং বাসায় ফিরে আসার পর শিশুদের সঙ্গে থাকা এবং তাদের যত্ন নেয়ার জন্যও অনেক কাজ করেন।
এক সংবাদদাতা অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি সাধারণ পরিবারের বাবার সাক্ষাতকার নেন। তারা একমত হন যে, ক্লান্ত কি না, তা আসলে নির্ভর করে পরিবারের ওপর আপনি কতটা গুরুত্ব দেন এ বিষয়ের ওপর। সিডনিতে থাকা টেরি দুই শিশুর বাবা। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, শিশুদের লালনের বিষয়ে ক্লান্ত কি না, তা নিয়ে আসলে ভিন্ন মানুষের ভিন্ন অবস্থা রয়েছে। অফিসের কাজ ও পরিবার সবই ভালোভাবে করতে হয়। একটি পরিবারে মা বেশি ক্লান্ত নাকি বাবা বেশি ক্লান্ত তা আসলে ভিন্ন পরিবার, ভিন্ন চরিত্রের উপর নির্ভর করে। টেরি বলেন, আমি প্রতিদিন আট ঘণ্টা অফিস কাজ করি। তারপর প্রতিদিন অন্তত পাঁচ ঘণ্টা সময় দিয়ে শিশুদের লালন ও পরিবারের কাজ করি। তিনি ও তার স্ত্রী এসব কাজ ভাগাভাগি করেন। স্ত্রী নাস্তা রান্না করেন, টেরি রাতের খাবার রান্না করেন। সকালে টেরি ছোটশিশুকে কিন্ডারগার্টেনে পৌঁছে দেন। স্ত্রী বড় মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেন। তারপর রাতে টেরি ছোট শিশুকে বাসায় নিয়ে আসেন, আর তার স্ত্রী বড় মেয়েকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে যান। তারপর একসাথে খাবার খান এবং শিশুদের যত্ন নেন।
টেরি মনে করেন, যদিও কাজের ক্ষেত্রে পুরুষের চাপ বেশি, তবে শিশুদের লালন ও শিক্ষার বিষয়ে বাবার বিশেষ সুবিধা রয়েছে, এমন বাস্তবকে উপেক্ষা করা যায় না। কারণ পুরুষ ও নারীর চিন্তাধারার পদ্ধতি ভিন্ন। তাই শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও পার্থক্য থাকে। যেমন বাবা শিশুদের সঙ্গে এডভেঞ্চার করতে পারেন, তা শিশুদের শিক্ষার জন্যও অনেক সহায়ক হয়।
নারী ও পুরুষের সম্মান মর্যাদা-এমন চিন্তাধারা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই এখন আরো বেশি বাবা শিশুদের লালনে আরো বেশি ভূমিকা পালন করছেন। কিছু পাশ্চাত্য দেশের সুপারমার্কেট বিশেষ করে সঙ্গে শিশু নেয়া পুরুষের জন্য দ্রুত চেক ব্যবস্থা স্থাপন করে, যাতে তারা আরো সহজভাবে চেক করতে পারেন। তা থেকে আমরা বুঝতে পারি, শিশুদের লালনে পুরুষও ভালোভাবে অংশ নিতে পারেন-এমন চিন্তাধারাও বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
কেউ কেউ মনে করেন, শিশুর বাবা-মার সঙ্গে বড় হওয়া এবং থাকা উচিত, তা মানসিক অবস্থার জন্য বেশ ভালো। আর কেউ কেউ মনে করেন, শিশুরা সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে বড় হতে পারে, তাই যথেষ্ট, অন্য বিষয় বিবেচনা করার দরকার নেই। তবে এখন লোকজনের কাজের চাপ অনেক বেশি, বাবা মা'র মত মধ্য বয়সী লোকজনের বোঝাও অনেক বেশি। তাদেরকে শিশুদের লালনপালন করতে হয়, বয়স্কদের যত্ন নিতে হয়, তাই কেউ কেউ শিশুদেরকে দেখাশোনার জন্য লোক ভাড়া করেন। আসলে কোন পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো তা নির্ভর করে বিভিন্ন পরিবারের অবস্থার ওপর।(ফেইফেই/টুটুল)