Web bengali.cri.cn   
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আলোচিত খবর
  2015-03-30 19:44:20  cri


কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের পরাজয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভের ঝড়

বাংলাদেশের ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সমাপ্তি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে। ভারতের কাছে ১০৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে দলটিকে। এই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি আলোচিত, কিংবা বলা ভালো 'সমালোচিত' ছিল আম্পায়ারদের একাধিক প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত। এ সবকিছু মিলিয়েই এখন বেশ উত্তপ্ত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। কেউ ক্ষোভে ফুঁসছেন, কেউ বা আবার দলের পরাজয়ের শোকে মুহ্যমান। বাজে আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদে খোলা হয়েছে একাধিক প্রতিবাদ ইভেন্টও।

আইসিসির সভাপতি এখন বাংলাদেশেরই একজন। তাঁর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। অনেকেই তো আবার আবেগের আতিশয্যে আইসিসি বয়কটের ডাক দিয়ে বসেছেন। আম্পায়ারদের কুশপুত্তলিকা জ্বালানোর ইভেন্টও তৈরি হয়ে গেছে এরই মধ্যে।

এভারেস্টজয়ী ওয়াসফিয়া নাজরিন ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'একজন ক্রীড়াবিদ হয়ে আমি চাইব যে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা হিসেবে আইসিসি থাকবে সৎ এবং নিরপেক্ষ। কারও ব্যবসায় একক আধিপত্য বিস্তারে সহায়তা, পক্ষপাত কিংবা দুর্নীতিতে সাহায্য করা আইসিসির কাজ নয়। ফলাফল যদি পূর্ব নির্ধারিতই হয়ে থাকে তাহলে ক্রিকেট খেলব কেন আমরা? একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি আমার দলের সকল খেলোয়াড়কে 'স্যালুট' জানাতে চাই। নক-আউটের চাপ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ম্যাচটিতেও তারা সত্যিকারের খেলোয়াড়ি মানসিকতা এবং সততার পরিচয় দিয়েছে।'

চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও একাধিক স্ট্যাটাসে বাজে আম্পায়ারিং এবং তাদের পক্ষপাতদুষ্ট স্বভাব নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। তবে নিজ দলের ব্যাটিং নিয়েও সন্তুষ্ট নন তিনি, 'এমন ব্যাটিংয়ের পর কোনো অজুহাত দেওয়া চলে না। যা হোক, দারুণ এক বিশ্বকাপ কাটানোর জন্য অভিনন্দন টাইগারদের। অভিনন্দন ভারতকেও! আমি নিশ্চিত মাঠের ভেতরে-বাইরে এত বিতর্কের জন্ম না দিলে জয়টা তোমাদের জন্য আরও আনন্দের হতো।'

অনেকে তো আম্পায়ারদের সরাসরি 'প্রতিপক্ষ' বানিয়ে ভারতের একাদশকে 'চৌদ্দ'জনের বানিয়ে ফেলেছেন। বিরাট কোহলির ক্যাচটি মুশফিক লুফে নেওয়ার পর আম্পায়রকে ব্যঙ্গ করে সিমু নাসের লেখেন, 'এইটা কেমনে আউট হয়? উইকেট কিপার তো গ্লাভস পরে ক্যাচ ধরল!' একজন তো ঠাট্টা করে বলেই ফেলেছেন, 'বুঝতে পারছি না ভারত বাকি বিশ্বকাপগুলো হাতছাড়া করল কেমনে?'

হেরে গেলেও দর্শকদের সমর্থন পাচ্ছেন মাশরাফি-মুশফিকরা। জিনাত জোয়ার্দার রিপা লিখেছেন, 'তবুও আমরা ফুল নিয়ে বিমানবন্দরে যাব।'

মাঠে মাশরাফিরা হেরেছে, কিন্তু সমর্থকদের মনে তো তাদের জয় হয়ে গেছে সেই কবেই!

ক. এবারে শ্রীলঙ্কার খবর

বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে বিদায় শ্রীলঙ্কার সাঙ্গাকারার

ওয়ানডে ক্রিকেটের শুরুটা জয় দিয়ে করলেও বিদায় নেওয়ার ম্যাচে হেরে গেছেন তিনি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে কোয়ার্টার-ফাইনালে শ্রীলঙ্কা হেরে গেলেও সুখের একটা অনুভূতি নিয়ে বিদায় নেওয়ার কথা বলেছেন সাঙ্গাকারা।

শ্রীলঙ্কার গলে ২০০০ সালের ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট শুরু করেছিলেন সাঙ্গাকারা। বুধবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৯ উইকেটে হারে তার দল।

দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের দিন 'ধ্রুপদী' ব্যাটসম্যান সাঙ্গাকারা ৪৫ রান করেন। এই বিশ্বকাপে নিজের রান নিয়ে যান ৫৪১ রানে।

এই রান করার পথে টান চারটি শতক করে অনন্য এক ইতিহাস রেকর্ড গড়েন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেটে এর আগে টানা চারটি শতক করতে পারেননি কেউই।

ম্যাচটি হেরে যাওয়া নিয়ে অবশ্য কিছু হতাশা আছে সাঙ্গাকারার।

"হেরে যাওয়াটা হতাশার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একটি দলের বিপক্ষে জেতার জন্য সত্যি ভালো করতে হয়। কোয়ার্টার-ফাইনালে কেউ হারতেই পারে। এটা বাঁচা-মরার ম্যাচ। হতাশা আমাদের ক্যারিয়ারের অংশ।"

১৪ হাজার ২৩৪ রান নিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে শচিন টেন্ডুলকারের পর সাঙ্গাকারাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৩৭ বছর বয়সী সাঙ্গাকারা টেস্ট ক্রিকেটটা খেলে যাবেন আরও কিছু দিন।

শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটকে ভালো অবস্থানে রেখে যেতে পারছেন বলে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলার ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর নিজেকে সুখী মনে করছেন সাঙ্গাকারা।

তিনি বলেন,"আমি নিশ্চিত, আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, আমি যেখান থেকে শুরু করেছিলাম; শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট তার চেয়ে অনেক এগিয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের ছেলেরা খুব ভালো করবে।"

শ্রীলঙ্কা দলের গুরুভারও এখন যোগ্য লোকের ওপর আছে বলে মনে করেন সাঙ্গাকারা।

"আমি মনে করি, দল খুব ভালো হাতে আছে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস শুরু থেকেই অসাধারণ একজন নেতা।"

সাঙ্গাকারার সতীর্থ এবং ভালো বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনেও ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন সিডনিতে। ৪৪৮ ম্যাচে ১২ হাজার ৬৫০ রান করেন তিনি।

এই দুই অসাধারণ ব্যাটসম্যান আর প্রিয় দুই বন্ধু একই সঙ্গে ক্রিকেটের রঙিন দুনিয়াকে বিদায় বললেন, যাদের অভাব শুধু শ্রীলঙ্কা নয় পুরো ক্রিকেট বিশ্বই বোধ করবে।

খ. মারকুটে ব্যাটসম্যানদের খবর

বোলারদের আতঙ্ক ক্রিস গেইল

বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম দুটো ম্যাচে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন ক্রিস গেইল। এতটাই নিষ্প্রভ যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি কবে অবসর নেবেন, এ নিয়ে শুরু হয়েছিল জোর আলোচনা। গেইলকে কটাক্ষ করেই অবসর-আলোচনায় বাতাস দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। ক্যানবেরায় জিম্বাবুয়েকে পেয়ে যাবতীয় সমালোচনা ও কটাক্ষের যন্ত্রণাই যেন মেটালেন এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে করলেন ডাবল সেঞ্চুরি। ২১৫ রানের দানবীয় ইনিংসটি খেলতে গিয়ে মারলেন ১৬টি সুবিশাল ছক্কা। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডটিও করে নিলেন নিজের। মারলন স্যামুয়েলসকে সঙ্গে নিয়ে ৩৭২ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে শামিল হলেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ যুগলবন্দীতে। একই সঙ্গে তাঁর এই ইনিংস জিম্বাবুয়েকে চাপা দিয়েছে ৩৭২ রানের পাহাড়ে। কিছু দিন আগে ব্রিসবেন উপকূলের ওপর আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মার্সিয়া আর লামের মতোই ক্যানবেরা যেন দেখল আরেক ঝড়ের প্রলয়। আবহাওয়াবিদেরা পরবর্তী সময়ে যেকোনো ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্দ্বিধায় রেখে দিতে পারেন ক্রিস গেইলের নামে। ঝড়ের নাম হিসেবে ক্রিস গেইলই বোধ হয় সবচেয়ে যথাযথ নাম।

ক্রিস গেইলের ইনিংসটি এসেছে মাত্র ১৪৭ বলে। ১০৫ বলে শতক পূর্ণ করা গেইল ২১৫ রানে পৌঁছে যেতে বল খেলেন আর মাত্র ৪২টি। চারের থেকে যে ইনিংসে ছয়ের মার বেশি, সে ইনিংসটি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সেটা খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে। টেলিভিশনের সামনে বসা দর্শকদেরও এই ইনিংসটি দেখতে দেখতে এক ধরনের মিশ্র অনুভূতি কাজ করেছে। বোলারদের প্রতি এতটা নির্দয় হওয়া যায় নাকি।

পুরো ইনিংসটিই ছিল গেইলের নানা ধরনের কীর্তিগাথায় ভরপুর। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর, ছয় মারার সংখ্যা, জুটি ইত্যাদির রেকর্ড ছোঁয়ার আগেই গেইল সেদিন প্রবেশ করেছেন নয় হাজার রানের ঘরে। কেবল দ্বিতীয় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে এই মাইলফলক ছোঁয়া গেইল প্রমাণ করে দিয়েছেন, যে যা-ই বলুক ক্যারিবীয় ক্রিকেট ইতিহাসের ভয়ংকরতম ব্যাটসম্যানের অভিধা দিতে হবে তাঁকেই।

ক. দক্ষিণ আফ্রিকার ডি ভিলিয়ার্স

আবারও খুনে মেজাজে ডি ভিলিয়ার্স।ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত মাসে জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে এবি ডি ভিলিয়ার্সের সেই বিস্ফোরক ইনিংসটার কথা নিশ্চয় মনে আছে। ৩১ বলে করলেন সেঞ্চুরি! খেললেন ৪৪ বলে ১৪৯ রানের ইনিংস। মাত্র ১ রানের জন্য সেদিন করা হয়নি ১৫০। আজ একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সে 'অপূর্ণ খায়েশ' মেটালেন প্রোটিয়া অধিনায়ক! সিডনিতে খেললেন ৬৬ বলে অপরাজিত ১৬২ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস!

ক্যারিবীয় বোলারদের রীতিমত কাঁদিয়ে ছাড়লেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। তবে সবচেয়ে বেশি চড়াও হয়েছিলেন উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের ওপর। হোল্ডারের শেষ দুই ওভারেই ডি ভিলিয়ার্স তুললেন ৬৪ রান (৩৪ ও ৩০)!

মাত্র দুই বলের জন্য ভাঙা হলো না বিশ্বকাপে কেভিন ও'ব্রায়েনের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আইরিশ ব্যাটসম্যান করেছিলেন ৫০ বলে সেঞ্চুরি। ডি ভিলিয়ার্সের সেখানে ৫২ বলে সেঞ্চুরি। পরের ৫০ করলেন মাত্র ১২ বলে! ওয়ানডেতে এটিই দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ড। টর্নেডো-ইনিংসটা সাজিয়েছিলেন ১৭ চারে ও ৮ ছয়ে। ক্যারিবীয়দের দুর্ভাগ্য, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিপক্ষেই কেন যেন 'স্টিম রোলার' চালান 'নিষ্ঠুর' ডি ভিলিয়ার্স!

ক. বিশ্বকাপের যত ঝড়

ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঝড় তুললেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। করলেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। বিশ্বকাপে এমন কিছু ঝোড়ো সেঞ্চুরি-ফিফটির গল্প জেনে নেওয়া যাক:

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ও'ব্রায়েনের সেই কাব্যিক ইনিংস। গত বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আইরিশ-রূপকথার মূল নায়ক ছিলেন কেভিন ও'ব্রায়েন। ঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো—কোনো উপমাতেই যেন বোঝানোর উপায় নেই ডানহাতির দুর্দান্ত সেই ইনিংসটির কথা। আয়ারল্যান্ডকে ইংল্যান্ড লক্ষ্য দিয়েছিল ৩২৮ রান। ছয় নম্বরে নেমে ও'ব্রায়েন আবির্ভাব হলে খুনে চেহারায়। ৫০ বলে করলেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড! খেললেন ৬৩ বলে ১১৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ৫ বল বাকি থাকতে আইরিশরা জিতল ৩ উইকেটে।

খ. হেইডেন-ঝড়

সেদিন সেন্ট কিটসে উঠেছিল হেইডেন–ঝড়! ও'ব্রায়েনের আগে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল ম্যাথু হেইডেনের। ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে প্রথম ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ঝোড়ো সূচনা করেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও হেইডেন। ৪২ রানে গিলক্রিস্ট ফিরলেও প্রোটিয়া বোলারদের কচুকাটা করতে উইকেটে ছিলেন হেইডেন। সেঞ্চুরি করতে লাগল ৬৬ বল। ইনিংসটা সাজিয়েছিলেন ১৪ চার ও ৪ ছয়ে। এটি এখন বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি।

বিশ্বকাপে দ্রুততম ফিফটির দুটি রেকর্ডই ম্যাককালামের দখলে।

এ ক্ষেত্রে ম্যাককালামকে কিছুটা দুর্ভাগাই বলতে হবে। বিশ্বকাপে বেশ কবার উইকেটে ঝড় তুলেছেন তিনি। দুই অঙ্কের মধ্যেই একটা রেকর্ড দুবার করেছেন। তবে ওয়েলিংটনে ইংলিশ বোলারদের চোখের জল-নাকের জল এক করে ছেড়েছেন কিউই অধিনায়ক! ফিফটি ছুঁতে ম্যাককালামের লেগেছে মাত্র ১৮ বল। এটিই এখন বিশ্বকাপের সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটি। আগের রেকর্ডটিও ছিল তাঁর, ২০০৭ বিশ্বকাপে সেন্ট লুসিয়ায় কানাডার বিপক্ষে ফিফটি করেছিলেন ২০ বলে।

বাউচারের রুদ্ররূপ

২০০৭ বিশ্বকাপে সেন্ট কিটসে বৃষ্টির কারণে ম্যাচটা নেমে এসেছিল ৪০ ওভারে। হল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে করল ৩৫৩ রান। প্রোটিয়াদের স্কোরকার্ডে কোনো রান যোগ না হতেই ফিরে গিয়েছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। এরপরও থামানো যায়নি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের। সর্বোচ্চ ১২৮ করেছিলেন জ্যাক ক্যালিস। ফিফটি করেছিলেন গ্রায়েম স্মিথ, হার্শেল গিবস ও মার্ক বাউচার। এ ম্যাচে বাউচার ফিফটি করলেন মাত্র ২১ বলে, যেটি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি। তবে ম্যাচসেরা ক্যালিস কিংবা বাউচার কেউ হননি। হয়েছিলেন গিবস, কেন? এক ওভারে ছয় ছক্কার কথা নিশ্চয় মনে আছে!

অবশেষে স্বপ্নের ফাইনালে নিউ জিল্যান্ড

সপ্তমবারের চেষ্টাতে শিকে ছিড়ল; সেমি-ফাইনালের গণ্ডি পেরিয়ে অবশেষে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল নিউ জিল্যান্ড। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৪ উইকেটে হারিয়ে মেলবোর্নের ফাইনালের টিকেট পেয়েছে বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকরা।

দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের ৩৮তম ওভারে বৃষ্টি নামলে প্রায় দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। এতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৩ ওভারে। এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ডুদ প্লেসির দুই মেজাজের অর্ধশতকে ৫ উইকেটে ২৮১ রান করে প্রোটিয়ারা।

তবে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে নিউ জিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৮ রান। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও কোরি অ্যান্ডারসনের দুই অর্ধশতক ভিত গড়ে দিলেও স্বাগতিকদের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান গ্র্যান্ট এলিয়টের। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে এক বল বাকি থাকতে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কিউইরা।

তিনশ' রানের কাছাকাছি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউ জিল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ম্যাককালাম। মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পথে তিনি করেন ৫৯ রান। তার ২৬ বলের বিধ্বংসী ইনিংসটি ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

ম্যাককালামকে ফেরানোর পর কেন উইলিয়ামসনকেও বিদায় করেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার মর্নে মরকেল। ৫৯ রানে তিন উইকেট নেন এই পেসার।

রস টেইলর ও মার্টিন গাপটিল এগিয়ে নিতে থাকেন নিউ জিল্যান্ডকে। কোয়ার্টার-ফাইনালে এই দু্ই জনের জুটি ভেঙেছিল টেইলরের রান আউটে। এবার ভাঙে সেই ম্যাচে দ্বিশতক করা গাপটিল রান আউট হলে।

উইকেটে থিতু হয়ে টেইলর বিদায় নিলে অস্বস্তিতে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব এলিয়ট-অ্যান্ডারসনের। ৯৮ বলে ১০৩ রানের দারুণ এক জুটি উপহার দেন এই দুই জন।

রান আউট হয়ে আগেই বিদায় নিতে পারতেন অ্যান্ডারসন। ৩৩ রানে তাকে ফেরানোর সেই সুযোগটি হাতছাড়া করেন ডি ভিলিয়ার্স। অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর ফিরে যান অ্যান্ডারসন (৫৮)। তার ৫৭ বলের ইনিংসটি সাজানো ৬টি চার ও ২টি ছয়ে।

এরপর লুক রনকির দ্রুত বিদায় আবার অস্বস্তিতে ফেলে দেয় সহ-আয়োজকদের।

তবে ড্যানিয়েল ভেটোরিকে নিয়ে বাকি কাজটুকু ঠিকই সারেন ম্যাচ সেরা এলিয়ট। ডেল স্টেইনের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেয়া এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৮৪ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া নিউ জিল্যান্ডের এই ব্যাটসম্যানের ৭৩ বলের ইনিংসটি ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় গড়া।

৪২তম ওভারের শেষ বলে জীবন পেয়েছিলেন এলিয়ট। ফারহান বেহারদিন তার ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারলে চিত্রটা ভিন্ন হতে পারতো। ক্যাচ ধরতে গিয়ে আরেকটু হলেই সংঘর্ষ হতে যাচ্ছিল জেপি ডুমিনি ও বেহারদিনের মধ্যে।

শেষ ওভারে ১২ রান প্রয়োজন ছিল নিউ জিল্যান্ডের। ভেটোরি একটি চার মেরে কাজটা একটু সহজ করেন আর পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে আরেকটি সেমি-ফাইনাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায় নিশ্চিত করেন এলিয়ট।

এর আগে মঙ্গলবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ট্রেন্ট বোল্টের দারুণ বোলিংয়ে ৩১ রানে বিদায় নেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক।

অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান আমলা। ৬ রানে একবার জীবন পাওয়া ডি কক থার্ড ম্যানে টিম সাউদির হাতে ধরা পড়েন।

রাইলি রুশোর সঙ্গে ১১০ বলে ৮৩ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেন দু প্লেসি। অ্যান্ডারসনের বলে মার্টিন গাপটিলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে রুশোর বিদায় ভাঙে প্রতিরোধ গড়া জুটি।

এসেই রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। ৮৫ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন দু প্লেসিও। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে এই সময়ে ৭১ বলে ১০২ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।

বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে এই জুটি টিকে মাত্র দুই বল। অ্যান্ডারসনের প্রথম বলে এক রান নেন ডি ভিলিয়ার্স। পরের বলে লুক রনকির গ্লাভসবন্দি হন দু প্লেসি। ১০৭ বলে খেলা তার ৮২ রানের ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও ১টি ছক্কায়।

ক্রিজে এসেই ঝড়ো ব্যাটিং করেন ডেভিড মিলার। মাত্র ১৮ বলে ৪৯ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলার পথে ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি উপহার দেন তিনি। মিলারের ইনিংসটি ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

বৃষ্টির পর খুব বেশি বল খেলার সুযোগ না পাওয়া ডি ভিলিয়ার্স অপরাজিত থাকেন ৬৫ রানে। তার ৪৫ বলের ইনিংসটি ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো।

সূত্র: প্রথম আলো, বিডিনিউজ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040