Web bengali.cri.cn   
চীন-আসিয়ানের বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় জোরদার করা হবে
  2015-03-20 18:20:29  cri

সম্প্রতি শেষ হওয়া ২০১৫ সালের চীনের দুই অধিবেশনে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং কুয়াংসি প্রতিনিধিদলে পর্যালোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন, তার দেশ 'এক অঞ্চল এক পথ' প্রকল্প তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্মুক্তকরণ কাঠামোয় কুয়াংসি'র অবস্থান আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং ঐতিহাসিক উন্নয়নের সুযোগকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। নতুন পরিস্থিতিতে কিভাবে উন্নয়নের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হয়, তা গণকংগ্রেসের আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক প্রতিনিধিরা মনে করেন, যুবকরা দেশের ভবিষ্যৎ। আসিয়ান দেশগুলোর শিক্ষা সহযোগিতা খাত জোরদার করা এবং আরো বেশি চীন-আসিয়ান বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের 'বীজ' লালন-পালন করা হলো চীন-আসিয়ান সহযোগিতা গভীরতর করার চাবিকাঠি। জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি, চীনের কুয়াংসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছেন পাও শান বলেন,

কুয়াংসি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগে থেকেই ছাত্র ছাত্রী ভর্তি শুরু হয়। গত শতকের ৬০ দশক থেকে এর শুরু। কিন্তু সংস্কার ও উন্মুক্ত হবার পর বিশেষ করে গত দশ-বার বছরে এর মাত্রা অনেক বেড়েছে। বেশরিভাগই হলো ভিয়েতনামের ছাত্রছাত্রী। এছাড়া লাওস, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। ডক্টরেট ও মাস্টার্স থেকে স্নাতক পর্যন্ত পড়ানো হয় এখানে। বিষয়গুলো আর্থ-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাকি রয়েছে স্থাপত্যবিজ্ঞান ও কৃষিবিজ্ঞান। এসব ছাত্রছাত্রী হচ্ছেন 'বীজের' মত। তারা এখানে লেখাপড়া করে। তৃণমূল থেকেই তাদের মনে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করা হয়। ভবিষ্যতে এসব শিক্ষার্থী সমাজের স্তম্ভে পরিণত হতে পারে।

ছেন পাও শান

কুয়াংসি ও আসিয়ান অঞ্চলকে নদী ও পর্বত দ্বারা সংযুক্ত করা হয়েছে। গত শতাব্দীর ৫০ দশকে ভিয়েতনাম ইয়ু ছাই স্কুল, ও লাওস ছয়-সাত স্কুলের মাধ্যমে ভিয়েতনাম ও লাওসের শিক্ষাদানের সঙ্গে ঐতিহাসিক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৪ সালে নান নিংয়ে চীন-আসিয়ান মেলা শুরু হয়। এরপর মেলাটি স্থায়ী ও সফলভাবে আয়োজিত হয়। চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর থেকে কুয়াংসি ও আসিয়ানের শিক্ষা কার্যক্রমেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কুয়াংসি'র আঞ্চলিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে, আসিয়ানের সহযোগিতায় কুয়াংসি'র শিক্ষাদান উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতার নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং নতুন পথ খুলে গেছে। ছেন পাও শান বলেন,

আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামে আমাদের কুয়াংসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি সহযোগিতামূলক মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় আছে। থাইল্যান্ডে ৩টি সহযোগী স্কুল আছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় মৈত্রী স্কুল আছে। আসিয়ানে অধ্যয়নরত চীনা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১১ শতাধিক। এছাড়া আমাদের কিছু শিক্ষার্থী বিনিময় পরিকল্পনাও আছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক যাত্রায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আসিয়ানকে একটি প্রধান বিষয় হিসেবে মূল্যায়ন করে। থাইল্যান্ডে কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট আছে। সেটা খুব ভালো চলছে এবং চীনের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট সদর দপ্তর অর্থাৎ হানবানের সমর্থন পেয়েছি আমরা।

২০০৬ সাল থেকে কুয়াংসির ১ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক চীনা ভাষা স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় শিক্ষাদান করছেন। ২০০৫ সালে কুয়াংসি বিশ্ববিদ্যালয় চীন-আসিয়ান গবেষণালয় প্রতিষ্ঠা করে, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ডসহ ১০টি দেশের গবেষণালয় এবং চীন-আসিয়ান প্রতিবেশগত গবেষণালয়সহ ৮টি পেশাগত গবেষণা সংস্থা স্থাপন করেছে। এর মধ্য দিয়ে চীন-আসিয়ান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব, নীতি এবং বাস্তব সমস্যা নিয়ে গবেষণা করা যায়। এটা চীনে এমনকি আসিয়ান দেশগুলোর ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। ছেন পাও শান ব্যাখ্যা করে বলেন,

বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করছি। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও থাইল্যান্ডের মধ্যে একটি ভারতীয় গবেষণা পরিকল্পনা আছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেটা কার্যকর করেছি। ঠিক আত্মীয়স্বজনের বাসায় যাবার মতো আমরা আসিয়ান দেশগুলোতে খুব বেশি যাতায়াত করে থাকি। কুয়াংসি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিয়ান গবেষণালয়ে আসিয়ানের ১০টি দেশের গবেষণাগার আছে। এটি চীন সরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনেক দিকনির্দেশনা দিয়েছে। শিক্ষক ও ছাত্ররাও সারা বছরই আসিয়ান দেশগুলোতে যাতায়াত করছে। আমাদের সরকার এবং দেশের 'এক অঞ্চল এক পথ' কৌশলের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চলতি বছরের দু'টো অধিবেশনে, চীন-আসিয়ান উচ্চ শিক্ষা সহযোগিতা জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রতিনিধিদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কুয়াংসি উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের পরিচালক হুয়াং ফাং ফাং চীন-আসিয়ান যৌথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন। গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি, ছিন জৌ শহরের চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক সিয়াও ইং জি'ও বেইবুওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন,

সিয়াও ইং জি

আমরা আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেইবু ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণে আমাদের শিগগিরি সমর্থন দেবে। কারণ আমাদের মতো সংখ্যালঘু জাতীগুলো এ ধরনের সমর্থন পেয়ে উন্নত অঞ্চল হতে পারে। দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিয়ম অনুযায়ী, সে মানদণ্ডে পৌঁছানো আমাদের জন্য খুবই কঠিন। এর মধ্যে অধ্যাপক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ফলাফল, মাস্টার্স ডিগ্রীর স্থাপন এবং বিশেষ বিষয়ের প্রবর্তন ইত্যাদি মান বজায় রাখত হয়। কিন্তু, দেশটির বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন অনুযায়ী, আমাদের কিছুটা পার্থক্য আছে। কুয়াংসি'র মতো একটি বিশেষ উন্মুক্ত ও উন্নয়নমুখী অঞ্চল হিসেবে এবং আসিয়ানের একটি প্রশিক্ষণ অঞ্চল হিসেবে, বেইবু ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।

ছিন জৌ শহর কুয়াংসি বেইবু উপসাগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের লজিস্টিক কেন্দ্রীয় অঞ্চল। ২০১১ সালের মে মাসে, কুয়াংসি সরকার রাজি হয়েছে যে, ছিন জৌ শহর ছিন জৌ ইনস্টিটিউটের ভিত্তিতে বেইবু ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে। ৫ বছরের মধ্যেই তা সম্পন্ন করা হবে। একই বছরের জুলাই মাসে, বেইবু ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নির্মাণ সদর দপ্তর ছিন জৌ ইন্সটিটিউটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু হবে। শিয়াও ইং জি বলেন,

আমাদের ছিন জৌ ইনস্টিটিউটে অনেক আসিয়ান ছাত্রছাত্রী রয়েছে। বেইবু ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রক্রিয়ায় আমরা বেইবু উপসাগর উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়ন উপযোগী বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করবো। আমরা আরো বেশি আসিয়ান অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের এখানে লেখাপড়া করার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। যেমন সমুদ্র বিষয়, ঘূর্ণনযন্ত্র বিষয়, পাইলটের তত্ত্বাবধান ইত্যাদি। আসিয়ানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এ বিষয়গুলো খুবই আকর্ষণীয়।

২০১৩ সালে কুয়াংসি বিশ্ববিদ্যালয় চীন-আসিয়ান গবেষণালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। চীন-আসিয়ান গবেষণা আন্তর্জাতিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং চীন-আসিয়ান হলোগ্রাফিক তথ্য গবেষণা (Holographic data research) ও উপদেষ্টা প্ল্যাটফর্ম শুরু করে, নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীন-আসিয়ান শিক্ষামূলক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে নতুন রূপ শুরু হবে। এ সম্পর্কে চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রতিনিধি, চীনের বিজ্ঞান একাডেমির কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তথ্য কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী অধ্যাপক ইয়ান পাও পিং বলেন,

ইন্টারনেট ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও শিক্ষার আরো গভীর ও ব্যাপক উন্নয়ন শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালে কুয়াংসিতে অনুষ্ঠিত আসিয়ান মেলার ভিত্তিতে 'চীন-আসিয়ান নেটওয়ার্ক স্পেস ফোরাম' করা হয়েছে। কুয়াংসিতে এটা প্রথমবার। চলতি বছরের দু'টো অধিবেশনে আমি একটি প্রস্তাব দিয়েছি, ফোরামে অব্যাহত যোগাযোগ রাখা, শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা জোরদার করা হবে, জনশক্তি আদান-প্রদান ও পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষামূলক সহযোগিতাকে আরো বড় মাত্রায় তুলে ধরার আশা করছি।

প্রেমা/ তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040