Web bengali.cri.cn   
প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সরকারী কার্যবিবরণীর ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
  2015-03-13 19:19:34  cri

 


৫ মার্চ চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং দ্বাদশ চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশনে দেয়া সরকারি কার্যবিবরণীটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উচ্চ মানের গুরুত্ব অর্জন করেছে। বিদেশী বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, এই কার্যবিবরণীটি 'নতুন স্বাভাবিক অবস্থায়' চীনের অর্থনীতির জন্য স্থায়ীভাবে উন্নতি অন্বেষণ করার কৌশল নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি বিশ্বকে চীনের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু উন্নয়ন এবং সমাজের সম্প্রীতিময় ও স্থিতিশীল হবার বিশাল সম্ভাবনা দেখাবে। চীন নিশ্চয়ই সারা বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য আরো বড় অবদান রাখবে।

কিরগিজস্তানের একজন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, গত এক বছরে চীনের অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নের 'সাফল্য সুস্পষ্ট'। ওই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, গত বছর ৭.৪ শতাংশ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার চীনের অর্থনীতির সুষ্ঠু উন্নয়নের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। পাশাপাশি জীবিকা উন্নত করা, ন্যায্যতা সুরক্ষা করা এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও রাজনীতির পদ্ধতিগত উন্নতি করার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রচেষ্টা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস সংস্থার একজন গবেষক বলেছেন, গত বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের অর্জিত সাফল্য বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জটিল ও পরিবর্তিত অভ্যন্তরীণ ও বাইরের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও চীন সরকার সাহসী ও নিষ্পত্তিমূলকভাবে দুর্নীতি দমনে কাজ করেছে। এছাড়া চীন সরকার সার্বিকভাবে আইন দ্বারা রাষ্ট্র শাসন করে। এর ফলে প্রতিটি নাগরিক কল্যাণ অর্জন করেছে। চীনের অর্থনীতি নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রবেশ করেছে। আরো বাস্তবসম্পন্ন, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মানের ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যথাযথ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীর করতে অর্থনৈতিক কাঠামো সমন্বয়ের পাশাপাশি অর্থনীতির বিভিন্ন চত্রু বৃদ্ধির স্থিতিশীলতা ত্বরান্বিত করা অনুকূল হবে।

ভারতের একজন শিল্পপতি মনে করেন, সরকারের কার্যবিবরণীতে পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বাস্তব কথা বলা হয়েছে। গত বছর চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র্য জনসংখ্যা ১ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার কমেছে। এটা আশ্চর্যজনক সাফল্য। তাছাড়া গত বছর চীনের বিদেশগামী পর্যটকের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। এর ফলে অন্য দেশের জন্য কর্মসংস্থান ও ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির গতিসঞ্চার হয়েছে।

৫ মার্চ লি খ্য ছিয়াং চলতি বছর মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপি ৭ শতাংশের অভিষ্ট লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। বিদেশী ব্যক্তিরা এর ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী বব কার বলেছেন, যদিও চীন সরকার ২০১৫ সালের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ শতাংশ পর্যন্ত খর্ব করেছে, তবুও বর্তমানে চীনের অর্থনৈতিক সমষ্টি বেশ বড় হওয়ার কথা। চীনের অর্থনীতিতে উত্পাদন মূল্য কয়েক বছর আগের তুলনায় ১০ শতাংশের চেয়ে বেশি। তিনি মনে করেন, চীনা নেতাদের সঠিক নেতৃত্বে সাফল্যজনকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। চীনের অর্থনীতি আরো পরিপক্ক হয়ে উঠছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ডেভিড হেল মনে করেন, সরকারের কার্যবিবরণী দেশের মানুষের উদ্বেগজনক সমস্যার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং খুবই বাস্তব। তিনি মনে করেন, এ বিবরণীতে উত্থাপিত ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির গতি খুবই বাস্তব। গত বছর যদিও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি ধীর হয়ে গেছে, তবুও চীন সাফল্যের সঙ্গে ১.৩ কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন করে আরো ১ কোটি কর্মসংস্থান বাড়ানো। এটা খুবই আশ্চর্যজনক। পানি ও আবহাওয়া দূষণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন চীন কয়লার ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি অগ্রসর প্রযুক্তি দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করছে। এসব পরিবেশ সহায়ক ব্যবস্থা বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাং কিউন কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাং কিউন চীন বিষয়ক গবেষনালয়ের প্রধান লি সি ইয়ু বলেছেন, এবার সরকারি কার্যবিবরণীতে উত্থাপিত নীতি ও লক্ষ্যবস্তু স্পস্টভাবে উপস্থাপন করা হয়। দুর্নীতি ও বিশেষ অধিকার বিমোচন না করলে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি অস্থিতিশীল বাজারে দুর্নীতি, বিশেষ অধিকার এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন আচরণ বৃদ্ধি হতে পারে। তা হলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে না। দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে বাজারে শৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করতে চাইলে আইন অনুযায়ী দেশ শাসন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের লেকফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রাজুয়েট স্কুলের অধ্যাপক স্টিভ বলেছেন, গত কয়েক দশকের বিস্ময়কর দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বর্তমানে চীন আরো বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও বিনিয়োগে নেতৃত্ব পর্যায় থেকে চীনের ভোক্তাচালিত ব্যবস্থায় পরিবর্তন হচ্ছে এবং পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় অনিবার্য দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ সমাধান করার চেষ্টা করছে। সরকারের কার্যবিবরণীতে চীনা নেতৃত্বাধীন পর্যায়ের দ্বারা এসব সমস্যা বিবেচনা করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং সংস্কার গভীরতর করার সিদ্ধান্ত প্রতিফলিত হয়েছে। যদিও পরিবেশের অবনতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আয় বৈষম্যসহ বিভিন্ন সমস্যা এখনও রয়েছে। তবুও যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, চীন সরকার কার্যকরভাবে এসব সমস্যা সমাধান করছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক সচিব, সিঙ্গাপুরের নান ইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হু ই শান বলেছেন, সরকারের কার্যবিবরণী অনুযায়ী বিদেশী বিভিন্ন মহল চীনের ধারাবাহিক ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রতি আস্থাশীল। বিবরণীতে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে যে, চীন সামগ্রিকভাবে সংস্কারের মাধ্যমে নতুন করে বিরাট সাফল্য অর্জন করবে। তারপর উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি বাড়াবে।

কার্যবিবরণীতে সৃজনশীল ব্যবস্থার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৃজনশীলতাকে উন্নীত করার বিষয়টি কিরগিজস্তানের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেছেন, বর্তমানে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের গতি বিশ্ব তালিকার সামনের দিকে রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সঙ্গে মেশানো, ক্লাউড কম্পিউটিং, বিগ ডেটাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির আধুনিক নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতার ফলে চীনের অর্থনৈতিক কাঠামো আরো বহুমুখী হয়েছে। একটি নতুন শিল্প চীনে গড়ে উঠছে ও বড় হচ্ছে। ফলে চীনের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি হচ্ছে।

ব্রুনেই-চীন মৈত্রী সমিতির প্রধান হোং রুইছুয়ান বলেছেন, চীনের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য নিম্ন প্রযুক্তিগত নির্মাণ শিল্প এবং উচ্চ শক্তিসম্পন্ন শিল্প উন্নত বা আপগ্রেড করতে হবে। পাশাপাশি অর্থনীতির রূপান্তরকে মূল্য দিতে হবে। সুতরাং চীনের নিজের রূপান্তর ও উন্নয়ন দ্রুততর করে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার মান উন্নত করে চীনের অর্থনীতির ধারাবাহিক, সুষ্ঠু ও ভারসাম্যমূলক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা যাবে।

প্রেমা...

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040