0309huanqiu
|
গত ২০ জানুয়ারি ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির হাতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ একটি সনদ তুলে দেয়। গত বছরের আগস্ট মাসে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার রেকর্ড সৃষ্টি করে দেশটি। অনন্য এ দৃষ্টান্ত স্থাপনের কারণে দেশটিকে এ সম্মানে ভূষিত করা হয়।
অর্থনীতিতে এমন মাইলফলক সৃষ্টিকারী ঘটনা ছাড়াও ভারতের মানুষ নিত্য-নতুন অদ্ভুত ও আশ্চর্য সব বিষয়ে বিশ্ব রেকর্ড তৈরিতে খুবই আগ্রহী। সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাদে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে সবচেয়ে বেশি দরখাস্ত আসে ভারতীয়দের কাছ থেকে। বিশ্ব রেকর্ড তৈরিতে ভারতীয়দের এই অদম্য আকাঙ্ক্ষার কারণ কী—এর অনুসন্ধান করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
ভারতীয়দের অন্যতম বিশ্ব রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে ২০০৫ সালে ৬৪ কেজি ওজনের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চাপাতি রুটি তৈরি, ২০১২ সালে কলকাতায় গান্ধীর মতো দেখতে ব্যক্তিদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ, ২০১০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা গোঁফধারী ব্যক্তি (দৈর্ঘ্য ৪ মিটার ২৯ সেন্টিমিটার) ইত্যাদি। ভারতের উদ্ভট বিশ্ব রেকর্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে, জেমস সিয়েমিয়ং নামের এক জুতার কারিগর যিনি মাত্র এক মিনিটের মধ্যে শরীরের ২৬টি আলাদা গিঁঠ মটকে ছিলেন। অথবা রাধাকান্ত বাজপেয়ী যার কানের লোম পৃথিবীতে যেকোনো মানুষের চেয়ে সবচেয়ে লম্বা (২৫ সেন্টিমিটার)।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের বিপুল জনসংখ্যা দেশটির মানুষকে রেকর্ড সৃষ্টিতে আগ্রহী করে তুলেছে। কেননা এই জনস্রোতের ভিড়ে আলাদাভাবে নিজেকে ব্যতিক্রম হিসেবে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে, রেকর্ড সৃষ্টি একটি ভালো উপায়।
বিশ্ব রেকর্ডের প্রতি আলাদাভাবে ভারতীয়দের বিশেষ আকর্ষণের পেছনে যে বিষয়গুলো কাজ করে তা হলো, প্রথমত, ক্রিকেট বা দাবা ছাড়া বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত খেলাগুলোতে (যেমন ফুটবল) ভারতীয়রা এ পর্যন্ত তেমন দক্ষতার ছাপ রাখতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, ভারতীয়রা সহজেই তাঁদের সাবেক শাসক ইংরেজদের নানান বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে থাকেন। এ ছাড়া ভারতীয়রা দানশীল। তাই রেকর্ড সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁরা যে অর্থ উপার্জন করেন, তা মানবতার সেবায় দান করেন। তৃতীয়ত, ভারতীদের স্বভাবের মধ্যেই কিছুটা খেয়ালিপনা রয়েছে।
চতুর্থ ও সর্বশেষ বিষয়টি হলো, সৃষ্টিকে কোনো কোনো ভারতীয় জনপ্রিয়তা ও অর্থ উপার্জনের শালীন উপায় বলে মনে করেন। এমন একজন হলেন দিল্লির গিনেস ঋষি। একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি করার বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে তিনি তাঁর নিজের নাম পাল্টে এমন নামকরণ করেছেন। তিনি গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ পর্যন্ত সাতটি সনদ পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে নিজের দেহে পতাকার ২২০টি উল্কি আঁকা, কম সময়ের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত ও বেশি পরিমাণে সস খাওয়া, পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম কোরআন তৈরি ইত্যাদি। এই ব্যক্তি এক বিদেশি সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, 'বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। আমি যদি এটি না করি, তাহলে মানুষ আমাকে ভুলে যাবে।'(ফেইফেই/টুটুল)