Web bengali.cri.cn   
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রামান্যচিত্র ‌'সুপার চায়না'র প্রযোজকের সাক্ষাত্কার
  2015-03-06 18:25:34  cri

 


চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার কেবিএস টিভি কেন্দ্র প্রচারিত প্রামান্যচিত্র ‌'সুপার চায়না' দেশটিতে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দর্শক হার ছিল সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার কোন কোন দর্শক প্রামান্যচিত্রকে চীন সম্পর্কে জানার ও চেনার ‌'বিশ্বকোষ' বলে মনে করছেন। কিন্তু পাশাপাশি কেউ কেউ আবার চীনের দ্রুত উন্নয়নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমনকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রামান্যচিত্রটি দেখা অনেক চীনা দর্শক মনে করেন, এই প্রামান্যচিত্রে চীনকে অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কেবিএস কেন এ সময়ে এ ধরণের একটি প্রামান্যচিত্রের শুটিং ও প্রচার করলো? গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কেবিএস টিভি কেন্দ্রের 'সুপার চায়না'র অন্যতম প্রযোজক চিন-বুম পার্ক দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাদদাতা ছেন মেংকে একটি বিশেষ সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন,

কেবিএস টিভি কেন্দ্র থেকে বিশেষ পরিকল্পনা করে প্রচারিত প্রামান্যচিত্রটিতে চীনের বর্তমান উন্নয়নের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেশটির লোকসংখ্যা, অর্থনীতি, কূটনীতি ও সামরিক অবস্থা, ভূমি, সংস্কৃতি ও রাজনীতিসহ ছয়টি দিক দর্শকদের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

তাহলে এ ধরনের একটি প্রামান্যচিত্র তৈরি ও শুটিং করার প্রাথমিক লক্ষ্যটা কী? এ প্রসঙ্গে প্রযোজক চিন-বুম পার্ক বলেছেন, চীনের অর্থনৈতিক শক্তি উন্নত হবার প্রেক্ষাপটে চীনকে নতুন করে জানার আগ্রহই হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার তীব্র দর্শক চাহিদার মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন,

গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আন্দাজ করেছে, চীনের নিজস্ব মুদ্রা বিনিয়োগের হার যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে চীনের প্রতি দক্ষিণ কোরীয় দর্শকদের দৃষ্টি আরো শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা মনে করি, দক্ষিণ কোরীয় দর্শকদের সার্বিকভাবে চীনকে জানা দরকার। সুতরাং দর্শকদের সামাগ্রিকভাবে চীন ও চীনের উন্নয়নের ধারা সম্পর্কে জানাতেই আমরা বড় ধরনের একটি প্রামান্যচিত্র নির্মানের পরিকল্পনা করি।

দেশের নেতাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম থেকে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগ পর্যন্ত, চীনা সেনাবাহিনীর অস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জামের নবায়নসহ চীন ও নিকটবর্তী দেশের সঙ্গে ভূখণ্ড বিরোধ পর্যন্ত, 'সুপার চায়না' প্রামান্যচিত্রটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

চীনে লেখাপড়া ও চাকরি করা চিন-বুম পার্ক মনে করেন, বর্তমানে যদিও দক্ষিণ কোরিয়া-চীন সম্পর্কের দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে তবুও দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রতি এখনও কিছু ভিন্ন ধারণা রয়েছে। এ সব ধারণা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। প্রামান্যচিত্রটি তৈরি করার এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তিনি বলেন,

বর্তমানে চীনাদের প্রতি দক্ষিণ কোরীয়দের কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। ক্রমশ চীনের জাতীয় শক্তি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। সুতরাং কোন কোন দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক মনে করেন এটা তাদের জন্য হুমকি। এছাড়া কোন কোন দক্ষিণ কোরিয়ান মনে করেন চীন এখনও দরিদ্র্য বা সস্তা কপির দেশ। সুতরাং আমরা এই প্রামান্যচিত্রের মাধ্যমে এসব ভ্রান্ত ধারণাগুলো পরিবর্তন করতে চাই।

চিন-বুম পার্ক মনে করেন, জাতীয় শক্তি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিবর্তন হচ্ছে। চীনের এই উন্নয়নের পরিবর্তনকে অনুসরন করে দক্ষিণ কোরিয়ার তা খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি দক্ষিণ কোরীয় দর্শকদের কাছে বাস্তবমূখী ও সার্বিকভাবে চীনকে তুলে ধরার জন্য 'সুপার চায়না' প্রামান্যচিত্রটির শুটিং গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীস, আর্জেন্টিনা, কেনিয়া ও ভিয়েতনামসহ ২০টিরও বেশি দেশে গিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে স্থানীয় দেশগুলোর ওপর চীনের এই উন্নয়নের প্রভাব তুলে ধরেছে। এ প্রসেঙ্গ চিন-বুম পার্ক বলেন,

কারণ চীনের উন্নয়ন হলো একটি বৈশ্বিক ঘটনা। সুতরাং আমরা ৫টি মহাদেশের ২০টিরও বেশি দেশের মানুষের সাক্ষাত্কার নিয়েছি। এতো বেশি দেশের বিশেষজ্ঞ ও জনগণের সাথে কথা বলে চীন সম্পর্কে বিশ্ব জনগণের ধারণা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি। সারা বিশ্বের মানুষের চীন সম্পর্কে ধারণা ও বর্তমান পরিস্থিতি এবং চীনের উন্নয়নের বিষয়গুলো উপলব্ধি করেছি।

'সুপার চায়না' প্রামান্যচিত্রটি দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রচার করার সময় শুটিং গ্রুপের অনুমান ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর্শক হার অর্জন করেছে। এই সংখ্যা প্রামান্যচিত্রটির দর্শক হারের গড়পড়তা মানের চেয়ে অনেক বেশি। পাশাপাশি প্রামান্যচিত্রটি চীনে নানা বিতর্কও সৃষ্টি করেছে। কোন কোন চীনা নেটিজেনের মনে হয়, 'সুপার চায়না' প্রামান্যচিত্রে বেশি করে চীনের প্রশংসা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে প্রযোজক চিন-বুম পার্ক বলেন,

আমরা যুক্তিসংগত ও বিষয়গতভাবে চীনকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি এবং 'অতিরঞ্জন' করিনি। আমরা সার্বিকভাবে চীনকে তুলে ধরতে চেয়েছি। শুধু ইতিবাচক দিক নয়, বরং প্রামান্যচিত্রটিতে চীনের কিছু নেতিবাচক অংশও রয়েছে।

প্রামান্যচিত্রটি প্রচারিত হবার পর 'সুপার চায়না' সম্পর্কে আলোচনায় দক্ষিণ কোরিয়ার হোসিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ছুন কা-লিম মনে করেন, বর্তমানের বাস্তবতায় চীন এবং দক্ষিণ কোরীয় জনগণের মধ্যে কিছু বৈষম্য রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের মতে চীনের জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির গতি আশ্চর্যজনক। সুতরাং এখান থেকে সৃষ্ট 'চীনের হুমকি' যুক্তি অদ্ভুত নয়। 'সুপার চায়না' প্রচারিত হওয়ায় দক্ষিণ কোরীয় জনগণ চীনকে গভীরভাবে দেখার সুযোগ হবে এবং তারপর চীনের উন্নয়নের প্রতি এই উদ্বেগ নির্মূল করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ছুন কা-লিম জানিয়েছেন, 'সুপার চায়না' প্রামান্যচিত্রটির কিছু সংয়োজন-বিয়োজন করা দরকার। তিনি বলেন,

প্রামান্যচিত্রটির মোট ৭টি পর্ব রয়েছে। এর মধ্যে তিন-চারটি পর্বে ১৩০ কোটি লোকসংখ্যার শক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি, সংস্কৃতি ও সামাজিক ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের পরিপূর্ণতা দরকার ছিলো। যেমন, ভবিষ্যতে কোরীয় উপদ্বীপের ওপর চীনের প্রভাব কতটা হবে অথবা কোরীয় উপদ্বীপ সমস্যায় চীনাদের ধারণা এবং সংস্কৃতি ও সামাজিক ব্যবস্থাসহ এসব বিষয়ে চীনাদের বোঝার বিষয়সহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাখ্যার কিছুটা অভাব রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি চীনের দুর্নীতি বিরোধী সমস্যা, চীনের উত্থাপিত এশিয়ার নতুন নিরাপত্তা বক্তব্য এ ধরনের বিষয়ের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। এসব ক্ষেত্রে কিছুটা দূর্বলতা রয়ে গেছে।

সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় চিন-বুম পার্ক এবং ছুন কা-লিম দুজনেই বলেছেন, চীনের উন্নয়ন হচ্ছে একটি অকাট্য সত্য। দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচিত এই বিষয়টি বিবেচনা করা। ছুন কা লিম মনে করেন, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য চীনের উন্নয়ন হুমকি নয়; বরং সহযোগিতার দরজা খুলে যাওয়া। তিনি বলেন,

প্রথমত: বিশ্বের নতুন অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া সহযোগিতার পদ্ধতি অনুভব করতে পারবে। আগের বিশ্ব অর্থনীতি পশ্চিমা কয়েকটি উন্নত দেশের নিয়ম অনুযায়ী চলতো। মাঝারি ও ছোট আকারের দেশ এবং নতুন উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থ তারা নজরে রাখেনি। দ্বিতীয়ত: দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন উভয় রপ্তানিশীল অর্থনৈতিক গোষ্ঠী হওয়ায় সংরক্ষণবাদী বাণিজ্যবিরোধি ক্ষেত্রে একই কণ্ঠে কথা বলতে পারবে। তৃতীয়ত: নিরাপত্তা বক্তব্য, পারমাণবিক সমস্যা অথবা মানবিক সমস্যায় স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গী অন্বেষণ করতে পারবে। দক্ষিণ কোরিয়া-চীন সহযোগিতায় ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির আধুনিকায়ন বিবেচনা করা যাবে। সুতরাং আমার মনে হয়, হুমকির চেয়ে এক্ষেত্রে সহাবস্থানের সুযোগ অনেক বেশি হবে।

প্রেমা :

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040