0302huanqiu
|
আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে বিভিন্ন দেশের নেতারা পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাতে নিশ্চয়ই সম্ভাষণ জানান, এটাই তো স্বাভাবিক। সাধারণত নেতাদের মধ্যে সম্ভাষণের পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে, করমর্দন করা, আলিঙ্গন করা বা কথা বলা। সম্ভাষণ করা হলো নেতাদের চরিত্রের প্রকাশ। এর মাধ্যমে পরস্পরের সম্পর্কও চোখে পড়ে সবার।
করমর্দন করা হলো সবচেয়ে সাধারণ সম্ভাষণের পদ্ধতি। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বর্ণনার সময় 'বিশেষ সম্পর্ক' এ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। তা থেকে বোঝা যায় দু'দেশের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। ২০০৮ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ব্রিটেন সফর করেন এবং তখনকার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তখন দু'জন খুব ওতপ্রোতভাবে করমর্দন করেন। যেন খুব ভালো ঘনিষ্ট বন্ধু ও ভাই-এর মত। তবে নেতাদের মধ্যে প্রত্যেকের করমর্দন কিন্তু এত ঘনিষ্ঠ নয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওবামা রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের অষ্টম অধিবেশনে অংশ নেন। যদিও তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে করমর্দন করেন, তবে তথ্য মাধ্যমের তোলা ছবি থেকে বুঝতে পারা যায় যে, তখন দু'জনের কোনো চোখের বিনিময় নেই, আর ওবামার ভ্রুও কুঁঞ্চিত।
বড় সম্মেলন বা সফরের সময় বিভিন্ন দেশের নেতারা মিলিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে মাঝে মাঝে দেখা বা সাক্ষাত হবে কিনা, তা নির্ভর করে বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর।
২০০৫ সালে তখনকার চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী উ ই জাপান সফর করেন। তিনি জাপানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী কোইজুমি জুনিচিরোর সঙ্গে সাক্ষাত্ বাতিল করেন এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশ ফিরে আসেন। এরপর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্যাখ্যা করে জানান, উ ই জাপান সফরকালে জাপানের নেতা ইয়াসুকুনি সমাধিতে স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা বলেছিলেন, যা দু'দেশের নেতাদের বৈঠকের পরিবেশ নষ্ট করে।
আর গত বছরের ৬ জুন ফ্রান্সের নরমান্ডিতে মিত্রবাহিনীর অবতরণের ৭০ বছর পূর্তি স্মৃতি অনুষ্ঠান আয়োজন করে ফ্রান্স। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক অবনতি হওয়ায় পুতিন ও ওবামা পরস্পরকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। সাংবাদিকরা আবিস্কার করেন যে, নেতাদের একসাথে ছবি তোলার সময় ওবামা ও পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে পরস্পর থেকে দূরে থাকেন। আর মধ্যাহ্নভোজনে যাওয়ার সময় ওবামা বিশেষ করে আস্তে আস্তে হাঁটেন এবং পুতিনের কাছ থেকে দূরে থাকেন।
গত বছরের নভেম্বর মাসে চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে এপেক সম্মেলন আয়োজিত হয়। তখনও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতারা শুধু পরস্পরকে মাথা নেড়ে সম্ভাষণ জানান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মহাসচিব জানান, পুতিন ও ওবামা শুধু পরস্পরকে দেখেছেন, তবে কোনো কথা হয়নি তাদের মধ্যে।
'দেখা না করা' তাও বাইরে তথ্য জানানোর একটি কূটনৈতিক পদ্ধতি। ঠিক নরমান্ডি অবতরণের ৭০ বছর স্মৃতি অনুষ্ঠানের সময় সাংবাদিকরা লক্ষ্য করেন যে, অধিকাংশ নেতারা মধ্যাহ্নভোজনে গেছেন, তবে পুতিন, জার্মানির চ্যান্সেলার অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেন্কো অনেকক্ষণ কথা বলছেন। তা হলো ক্রিমিয়া রাশিয়া ফেডারেশনে যোগ দেয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেন নেতাদের প্রথম সাক্ষাত্। তথ্য মাধ্যমের ধারণায়, সেটি ছিলো রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি ইঙ্গিত। (ফেইফেই/টুটুল)