Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ কীভাবে স্বাগত জানান নতুন বছরকে
  2015-02-23 19:07:00  cri

 


চীনে একটি কথা আছে, 'ভোজন বিলাস' হচ্ছে চীনাদের জীবনে সবচেয়ে উপভোগ্য একটি বিষয়। বাংলাদেশিদেরকে বলা হয় অতিথিপরায়ণ। কারণ বাংলাদেশের মানুষ অতিথিদেরকে খুব আদর-আপ্যায়ন করেন এবং গভীরভাবে তাদের যত্ন নেন। হ্যাঁ, 'ভোজন বিলাস', 'ভোজন রসিক' এ শব্দের সাথে আমরাও পরিচিত, তবে একটু অন্যভাবে। যেমন, কেউ যখন বিভিন্ন খাবার দাবার খেতে পছন্দ করেন এবং খাবারের জন্য অনেক আয়োজন করেন তখন আমরা তাকে বলি ভোজন রসিক বলে থাকি।

আসলে আজকের অনুষ্ঠান তৈরি করতে গিয়ে আমার বিশেষ একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাহলো বিশ্বের অনেক দেশই নতুন বছরকে স্বাগত জানানো আর উত্সব উদযাপনে বিশেষ ধরনের খাবার বা খাওয়া-দাওয়ার রীতিনীতির ওপর অনেক গুরুত্ব প্রদান করে।

একথা আমরা সবাই জানি যে, প্রত্যেক জাতির তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রীতিনীতি, ধর্ম, জীবনযাপনের অভ্যাস, ভৌগলিক পরিবেশ এবং সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে বিশেষ খাবার ও খাদ্যাভ্যাসের রীতিনীতিও আলাদা ও বৈচিত্র্যময় হয়ে থাকে।

তাহলে চলো, আজকে আমরা বিশ্বের সব মজার মজার 'খাবারের রীতি' দিয়েই শুরু করি, কেমন?

নববর্ষের সময় খুব ভালো খাবার খাওয়া উচিত, যেন পুরো বছরটি বেশ ভালো ভালো খাবার খেয়ে কাটানো যায়, তাই না?

আর তাই নববর্ষের খাবারের তালিকায় ভিন্ন রকম মাংস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেমন, আফ্রিকার মাদাগাস্কারে নববর্ষের আগের ৭ দিন অর্থাত পুরনো বছরের শেষ ৭ দিনের মধ্যে কোনো প্রকার মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। কেবল নতুন বছরের প্রথম দিনে ঘরের দম্পতি উভয়ের বাবা-মাকে মুরগির লেজ পরিবেশন করে মাংস খাওয়া শুরু করেন। ঐ সমাজে বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের একটি বিশেষ রীতি হচ্ছে বাবা-মাকে মুরগির লেজ পরিবেশন করা আর ভাই বোনকে মুরগির পা পরিবেশন করা। এর অর্থ হচ্ছে যত্ন আর মৈত্রীর বন্ধন।

এদিকে ভিয়েতনামের নববর্ষের খাবারের রীতিনীতিও কিন্তু বেশ মজার আর বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলে বেশকিছু সংখ্যালঘু জাতি রয়েছেন যারা পুরনো বছরের শেষদিনের রাতে যেখান থেকে তাঁরা প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করেন, দলবেঁধে সেখানে যান এবং আগরবাতি জ্বালিয়ে মাটিতে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম করেন। এরপর সেই জলাধার থেকে নববর্ষের খাবার রান্না করার জন্য প্রত্যেকে এক কলসি করে পানি নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। এরপর সেই পানি দিয়ে রান্না করা নববর্ষের খাবারের প্রথম পাত্র তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে উত্সর্গ করার পরই কেবল পরিবারের অন্যান্যরা খেতে পারেন। তবে এই খাবারের তালিকায় অবশ্যই সুপ জাতীয় কোনো খাবার থাকতে পারবে না বা সুপ খাওয়া একদম নিষিদ্ধ। কারণ তাদের মতে সুপ খেলে নতুন বছরে মাঠের ফসল বন্যায় ভেসে যাবে।

যদি আপনি বুলগেরীয়দের বাসায় নববর্ষের খাবার খেতে আমন্ত্রিত হন, তাহলে আপনার জন্য বিস্মিত হওয়ার অনেক কিছুই অপেক্ষা করবে। প্রথমে আপনি অবাক হবেন এটা যেনে যে, আপনার হাঁচি না আসলেও আপনাকে হাঁচি দিতে হবে। কারণ, তাদের রীতি অনুযায়ী নববর্ষের প্রথম দিনের প্রথম হাঁচি দেওয়া নতুন মানুষটি পুরো পরিবারের জন্য সারা বছরের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। প্রথম হাঁচি দেওয়া মানুষটিকে অর্থাত আপনাকে পরিবারের কর্তা তাঁর নিজের খেতখামারে নিয়ে যাবেন এবং যে গবাদি পশুটির ওপর তাঁর প্রথম চোখ পড়বে, সে পশুটিকে হাঁচি দেয়া অতিথি, মানে আপনাকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে আপনার যদি কপাল মন্দ না হয় তবে আপনি একটি ঘোড়াও পেয়ে যেতে পারেন। তবে নিদেন পক্ষে একটি ছাগল অথবা গরু তো অবশ্যই পাবেন। তাই প্রিয় শ্রোতা জীবনে একবার হলেও বুলগেরিয়ায় ঘুরে আসুন অন্তত একটি হাঁচি দেবার জন্য হলেও। দেখলেন তো হাঁচি কত মূল্যবান!

পুরনো বছরের শেষদিনে হাঙ্গেরীয়রা পক্ষীজাতের কোনো প্রাণী খান না। কারণ তাঁরা মনে করেন যদি মুরগি, হাঁস বা কবুতর খান, তাহলে নতুন বছরের সব সৌভাগ্য উড়ে যাবে। নববর্ষে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের তাঁরাও উপহার দিয়ে থাকেন, তবে এ উপহারে যদি চিমনি পরিস্কার করা শ্রমিকের ছবি ছাপানো থাকে, তবে উপহারটি তাদের কাছে অধিক পছন্দের। কারণ এর মানে হচ্ছে পুরনো বছরের সব দুঃখ, দুর্দশা দূর হয়ে যাবে।

এতক্ষণ আমরা বিভিন্ন দেশের নববর্ষের বিশেষ খাবারের রীতিনীতি নিয়ে আলোচনা করলাম। দেখলেন তো, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে খাদ্যাভ্যাস, রীতি-নীতিও কত ভিন্ন এবং মজার হয়ে থাকে, তাই না?

কেবল খাবার নয় পুরনো বছরকে বিদায় দেওয়া এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পদ্ধতিতেও কিন্তু অনেক বৈচিত্র্য রয়েছ। আমি নিশ্চিত যে, এইসব মজার মজার রীতি-নীতি শুনে আমাদের শ্রোতারাও বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিষয়ে জানতে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

হলে এখন আমরা কয়েকটি দেশের নববর্ষ উদযাপনের পদ্ধতি নিয়ে কিছু বলবো। যেমন জাপানের নববর্ষ উদযাপনের পদ্ধতি প্রাচীনকালে চীনের উদযাপনের মতই হত। তাঁরা অতীতে দু'টি নববর্ষ উদযাপন করতেন, পয়লা জানুয়ারি এবং চীনের মত বসন্ত উত্সব। কিন্তু আস্তে আস্তে তাঁরা শুধু একটি নববর্ষ উদযাপন করতে শুরু করেন। পুরনো বছরের শেষ দিনের মধ্যরাতে জাপানের মানুষ একসাথে মন্দিরে দাঁড়িয়ে নতুন বছরের ঘণ্টাধ্বনি শোনেন। এসময়ে সাধারণত ১০৮ বার ঘণ্টা বাজানো হয়। কারণ বৌদ্ধ ধর্মের গ্রন্থে এমন কথা বলা আছে যে, ঘণ্টাধ্বনি শুনলে সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে। জাপানিরা তাই মনে করেন, প্রতিটি ঘণ্টাধ্বনির সাথে নুন্যতম একটি দুঃখ দূর হয়ে যাবে, আর ১০৮ ঘণ্টাধ্বনি শুনলে সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে নিশ্চয়ই।

এছাড়া জাপানিরা নববর্ষ উদযাপনের জন্য বিশেষ করে টিভি অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এসব টিভি অনুষ্ঠানে পুরুষ ও নারী কণ্ঠশিল্পীদের সঙ্গীত প্রতিযোগিতা সবচেয়ে জনপ্রিয়। দেশের বিখ্যাত গায়কদের একটি দল, গায়িকাদের একটি দল, দু'দলের সংগীত প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।

এতক্ষণ জাপানের কথা বললাম। এখন আমরা জার্মানির দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো। জার্মানিতে প্রাচীনকাল থেকেই একটি রীতি প্রচলিত রয়েছে। পুরনো বছরের শেষ দিনের রাতে পুরুষরা একসাথে মদ পান করেন এবং তাস খেলেন। মধ্যরাতে অর্থাত্ রাত ১২টার সময় সবাই টেবিলে অথবা চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে নতুন বছরের ঘণ্টাধ্বনি শোনেন। এরপর সবাই এক এক করে নিচে ঝাঁপ দিয়ে নামেন, কারণ এর অর্থ হচ্ছে নতুন বছরে ঝাঁপ দেয়া। এরপর তারা স্টিক ছুঁড়ে মারেন, এর মানে হচ্ছে পুরনো বছরকে বিদায় করে দেয়া।

এদিকে স্পেনের নববর্ষ উদযাপনের রীতিনীতিও খুব মজার। পুরনো বছরের শেষ দিন রাত ১২টায় চার্চের ঘণ্টাধ্বনি শোনার সাথে সাথে সবাই আঙ্গুর খেতে শুরু করে দেন। যদি ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে ১২টি আঙ্গুর খেতে পারেন তবে তা নতুন বছরের ১২ মাসে সব কিছুই মঙ্গলময়, শান্তিপূর্ণ হওয়ার প্রতীকী অর্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া তাঁরা মনে করেন, শিশুরা যদি নতুন বছরের প্রথম দিনে মারামারি, কাটাকাটি করে অথবা গালাগালি তবে তা অশুভের প্রতীক, তাই এদিন শিশুদেরকে আনন্দ দেবার জন্য বাবা-মা শিশুদের সব অনুরোধ পূরণ করার চেষ্টা করেন।

এতক্ষণ আমরা বিভিন্ন দেশের নববর্ষ উদযাপনের পদ্ধতি এবং তাদের খাবারের বিশেষ রীতিনীতি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলাপ করলাম। এ সব বিষয় শুনে আপনাদের কেমন লেগেছে? আসলে যদিও বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ধর্ম, ইতিহাস ও রীতিনীতি ভিন্ন এবং এর কারণে নববর্ষ উদযাপনের পদ্ধতিও ভিন্ন হয়ে থাকে, তবে একটি বিষয় কিন্তু অভিন্ন, তাহলো নববর্ষে পরস্পর পরস্পরের জন্য মঙ্গলকামনা বা শুভকামনা করে থাকেন, তাই না? (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040