0220yin
|
চলতি মাসের শুরুতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পেইচিংয়ে চীন-রাশিয়া-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ১৩তম বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এ বৈঠকের অর্জিত ফলাফল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, চীন-রাশিয়া-ভারত সহযোগিতা এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন এবং ব্যাপক মতৈক্যে পৌঁছেছে। এটি ছিল একটি বাস্তব, অত্যন্ত কার্যক্ষম ও ফলপ্রসূ বৈঠক। বৈঠকে পৌঁছানো মতৈক্যগুলো যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে সংযুক্ত হয়েছে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিজ্ঞপ্তির অষ্টম বিষয়টি হলো, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অধিকতরভাবে জোর দিয়ে বলেছেন যে, বিভিন্ন আঞ্চলিক ফোরাম ও আঞ্চলিক সংস্থার সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম, আসিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সম্প্রসারিত সম্মেলন, এশিয়া ইউরোপ সম্মেলন এবং এশিয়া সহযোগিতা সংলাপ ইত্যাদি। একসঙ্গে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা, আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য অবদান রাখা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চীন-রাশিয়া-ভারত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ক আলাপ-পরামর্শ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি শিগগিরি প্রথম দফা আলাপ-পরামর্শ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সম্পর্কে চীনের আন্তর্জাতিক সমস্যা গবেষণা একাডেমির ইউরোপ ও এশিয়া বিষয়ক গবেষণালয়ের প্রধান ছেন ইউ রোং মনে করেন, চীন, রাশিয়া ও ভারতের উচিত হাতে হাত রেখে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। তিনি বলেন,
সম্প্রতি, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটে চীন, রাশিয়া ও ভারত স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ হিসেবে এ ধরনের ফোরাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে। আসলে বহুপক্ষীয় ফোরামের মাধ্যমে কিভাবে এতদাঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে, যাতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের অর্থনীতি সুষ্ঠুভাবে উন্নয়ন হয়। আমরা সবাই জানি যে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল হলো ২১ শতাব্দীর বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এর মধ্যে চীন, রাশিয়া ও ভারত বিশেষ করে চীন ও ভারত নবোদিত অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হিসেবে এতদাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সত্যিই ইঞ্জিনের ভূমিকা পালন করছে। সত্যিকারভাবে আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত।
যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে বহু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমস্যায় তিনটি দেশের মতৈক্যের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরানের পরমাণু থেকে অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও জলবায়ু পর্যন্ত আলোচনার বিষয় ছিল। মাদাম ছেন ইউ রোং বিশ্লেষণ করে বলেছেন, তিনটি দেশ এসব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমাজকে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করার দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন,
আসলে আমার মনে হয়, এ ধরনের ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে একটি পতাকার ভূমিকা পালন করেছে এবং এটা হলো একটি দৃষ্টান্ত। কারণ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্যএশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির মতো, এর অন্তর্ভুক্ত আফগানিস্তান ও সিরিয়া। কোন একটি দেশ বিষয়গুলোকে স্বাধীনভাবে মোকাবিলা করতে পারে না, বরং আঞ্চলিকভাবে বা সারা বিশ্বের হাতে হাত রেখে সহযোগিতা করা দরকার। চীন, রাশিয়া ও ভারত তিন পক্ষ এ ধরনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে প্রকৃত আচরণও প্রকাশ করা হয়েছে। আসলে চরমপন্থি শক্তি ও সন্ত্রাসীর সহিংস আচরণ শুধু এ অঞ্চলের নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমাজের জন্যও একটি হুমকি। এ সময় তিনটি দেশের এ ধরনের সহযোগিতা আঞ্চলিক ও বিশ্ব স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।
এবারের বৈঠকের আগে, রাশিয়ার বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, তিনটি দেশ একটি নতুন শক্তিকেন্দ্র গড়ে তুলছে এবং এ ধরনের ত্রিভুজ সম্পর্ককে জি-৩ বলে তারা গণ্য করছেন। তিনটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে মাদাম ছেন বলেন,
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিন্যাস গভীরভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। চীন, রাশিয়া ও ভারত মনে করে, একক মেরুর পৃথিবী বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য অনুকূল নয়। বরং বহুমেরুর পৃথিবী প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করা উচিত। এ সময় চীন-রাশিয়া-ভারতের ত্রিপক্ষীয় এ ব্যবস্থাকে বলা যায়, বহুমেরুর বিশ্ব উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পথে একটি গঠনমূলক শক্তি।
প্রেমা / তৌহিদ