Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাবের রীতিনীতি
  2015-02-16 19:28:04  cri


একটি ছেলে একটি মেয়েকে পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ছেলেটি কিভাবে তার প্রেমের বা পছন্দের কথা ব্যক্ত করছে। কেননা এ সময়ে তাকে কথায় হোক বা আচরণে হোক বা অন্য কোনো উপায়ে হোক, নানান উপায়ে মেয়েটিকে প্রেমের কথা প্রকাশ করতেই হয়। শুধু তাই নয় বিয়ের পরও স্ত্রীকে প্রেমের কথা বলা এবং তাকে কতটা ভালোবাসে তা প্রকাশ করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে প্রথমেই আমরা বিশ্বের কয়েকটি দেশের স্বামীরা কিভাবে তাদের স্ত্রীর কাছে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেন তার পদ্ধতি নিয়ে কিছু বলবো।

প্রথমেই যাবো রাশিয়ায়। হ্যাঁ, রাশিয়ার স্বামীরা যেন ছোট শিশুর মত, যখন তার মন ভালো এবং খুশি, তখন তিনি যেকোনো কাজ করতে এক কথায় রাজি হয়ে যান। এমনকি রাস্তায় হাটতে গিয়ে সামান্য পায়ের ব্যথায় কাতর স্ত্রীকে কাঁধে করে বয়ে বেড়াতেও সানন্দে রাজি হবেন। কিন্তু যখন তার মন ভালো না, সাবধান, তাকে বাড়তি কথাতো দূরে থাক এমনকি প্রয়োজনীয় কথাটিও ভেবেচিন্তে বলুন। আসলে রুশ স্বামীদের বিশেষ গুণ হচ্ছে তারা প্রেমিকা বা স্ত্রীদের সাথে বেশ রসিকতা করতে পছন্দ করেন। এ ছাড়া আরেকটি বিশেষ গুণ হচ্ছে তারা খুব ভালো রান্নাও করতে পারেন। কিন্তু.....কিন্তু, তারা খুব কম রান্না করেন।

বলা যায়, এ ক্ষেত্রে মার্কিনীদের সাথে রুশ স্বামীদের মিল রয়েছে। মার্কিন স্বামীদের সম্পর্কে এমন একটি কথা প্রচলিত আছে যে- 'ছোট স্বামী, বড় শিশু'। অর্থাত তারা খেলাধুলা পছন্দ করেন, তাদের হৃদয়টা শিশুর মতো এবং স্ত্রীর প্রতি অনেক আন্তরিক। প্রকাশ্যে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে বান্ধবী বা স্ত্রীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন তারা। তবে মার্কিন পুরুষেরা আইনগতভাবে বিবাহ বন্ধনে জড়াতে বেশি পছন্দ করেন না।

এবার চলে যাবো ফ্রান্সে। হ্যাঁ, রোমান্টিকতায় ফরাসিদের চেয়ে কেউ বেশি রোমান্টিক হতে পারে একথা বলা খুবই কঠিন। বলা হয়ে থাকে, ফরাসিরা বিশ্বের সবেচেয়ে রোমান্টিক। তাদের মতে, জীবন হলো সবকিছু উপভোগ করার একটি বিষয়।

ফরাসি পুরুষদের মনে নারীই হচ্ছে জগতে সকল আনন্দ আর নির্ভরতার একমাত্র আশ্রয়স্থল। ফরাসি পুরুষদের চোখে হিংসা, খামখেয়ালিপনা, সহজেই রাগ করা, এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নারীর সৌন্দর্যের প্রতীক। যদি বাসায় খাবার জন্য কেবলমাত্র একটি রুটি থাকে, তাহলে আপনারা কি অনুমান করতে পারেন, স্ত্রীকে খুশি করার জন্য ফরাসি স্বামী কি কি করতে পারেন? তারা একটি সুন্দর গোলাপ ফুলের সাথে রুটি বিনিময় করবেন এবং গভীর মমতার সাথে ফুলটি স্ত্রীর চুলে গুঁজে দেবেন। বাহ, কতটা রোমান্টিক, তাইনা?

এখন ফরাসি স্বামীদের ঠিক বিপরীত ব্রিটিশ স্বামীদের প্রেমাচরণের কথা বলবো। ব্রিটিশরা খুব স্বল্পভাষী। তাদের মাথা খুব ঠাণ্ডা, তারা রক্ষণশীল চরিত্রের এবং ধৈর্য হলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য।

ব্রিটিশদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো খুব তাড়াতাড়ি নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন। তবে সহজেই কিন্তু নিজের মনের অনুভূতি অন্যের কাছে প্রকাশ করবেন না। তাই মনের কথা বা প্রেমানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রেও তারা খুব রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। ফরাসিদের মত ব্রিটিশরা রোমান্টিক নয় একেবারেই, যদিও মাঝে মাঝে স্ত্রীকে 'ডিয়ার' নামে ডেকে থাকেন, তবে নিষ্প্রাণ নিস্পৃহ সেই 'ডিয়ার' ডাকের মধ্যে তেতো, অম্ল, টক বা ঝাল থাক বা না থাক মিষ্টি পাবেন না কিছুতেই।

সত্যি ভিন্ন সংস্কৃতি ও ইতিহাসের কারণে বিভিন্ন দেশের ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতিও ভিন্ন। কেবল প্রেমানুভূতি বা ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রেই নয়, প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পদ্ধতিও ভিন্ন এবং বেশ মজার মজার রীতিনীতি রয়েছে।

আপনারা হয়তো জানেন, ব্রিটেনের ইয়োর্ক শহরে ভারী মজার ঐতিহ্যবাহী একটি রীতি রয়েছে। এই রীতির কারণে এ শহরে ছেলেদেরকে তার পছন্দের নারীকে খুঁজে পেতে এতটুকু বেগ পেতে হয় না। কারণ এ শহরের মেয়েরা তাদের প্রেমে পড়া বা বিয়ের সিদ্ধান্তকে বিশেষ পদ্ধতিতে জানান দিয়ে থাকেন। ভারী মজার এই পদ্ধতিকে আপনি ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটের পদ্ধতির সাথে তুলনা করতে পারেন। অর্থাত মেয়েরা বিশেষ সিগন্যাল ব্যবহার করে শহরের ছেলেদেরকে জানিয়ে দেন যে তিনি এখন প্রেম বা বিয়ের জন্য প্রস্তুত। যেমন, যদি কোনো মেয়ে সবুজ রং-এর কাপড় পরেন, ঠিক যেন ট্রাফিক লাইটের সিগন্যালের মত, যার মানে, "হ্যাঁ, আমি এখন প্রেমের গাড়ি চালাতে প্রস্তুত"। যদি কোনো মেয়েকে হলুদ রং-এর কাপড়ে দেখেন, তাহলে মানে "হ্যাঁ, সম্ভব, ঠিক সিগন্যালের মতোই সতর্কতামূলক, মানে প্রেমে পড়া না পড়ায় ফিফটি ফিফটি সুযোগ আছে"। আর যদি কোনো মেয়েকে লাল রং-এর কাপড়ে দেখেন তাহলে ভুলেও বঙ্গ ললনাদের ন্যায় মনে রঙ লেগেছে ভেবে বসবেন না যেন। বরং ঠিক সিগন্যালের মতো বা ফুটবল মাঠের লাল কার্ড প্রদর্শন অর্থেই ধরে নিতে হবে, অর্থাত্ এর মানে "না বন্ধু, আমার প্রেমের দুয়ার বন্ধ করে রেখেছি, সেখানে তোমার প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই'।

প্রশান্ত মহাসাগরের ট্রোবিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জে নারী পুরুষদের প্রেম প্রকাশের রীতিকে আপনি ভয়ঙ্কর প্রেম বলতে পারেন, তবে ভারি মিষ্টিও বলতেই হবে। এখানে যদি একটি মেয়ে কোনো ছেলেকে খুব জোরে কামড় দেন, এর মানে যত জোরে কামড় তত গভীর প্রেম, অর্থাত্ মেয়েটি ছেলেটিকে গভীরভাবে ভালোবাসে যা কামড়ে দিয়ে জানিয়ে দিলেন।

এবার তাহলে আমরা কঙ্গোর দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাবো।

সে দেশে যখন একটি ছেলে কোনো মেয়েকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে চান, সাধারণত এ সময়ে মেয়েকে একটি রোস্টেড পাখি বা ঝলসানো পাখি উপহার দিয়ে থাকেন এবং মেয়েকে বলেন যে, এ পাখি আমার নিজের শিকার করা। আর যদি মেয়ে রাজি হয়ে যান, তাহলে তিনি ছেলেকে একটি সিদ্ধ ভুট্টা উপহার দিয়ে বলবে এ ভুট্টা আমার চাষ করা।

এ ক্ষেত্রে মেক্সিকোর ছেলেরা বেশ রোমান্টিক। যদি কোনো মেয়েকে পছন্দ করে থাকেন তাহলে ছেলেটি প্রেমের প্রস্তাব স্বরূপ একটি সঙ্গীত ব্যান্ড নিয়ে মেয়ের ঘরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রেমের সুর আর সঙ্গীত বাজাতে থাকবেন।

এমনও হয়ে থাকে যে, সারা রাত ধরে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে একটানা সুর বাজিয়ে যেতে থাকবেন। ভীষণ রোমান্টিক, তাই না? যেন ভালোবাসায় ভরপুর প্রাণ।

আর তাঞ্জানিয়ার কিছু সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্য অনুযায়ী কোনো ছেলে যদি তার প্রেমিকাকে খুঁজতে চান, তাহলে তাকে প্রথমে সিংহ'র মত বড় এবং বিপজ্জনক কোনো পশুকে হত্যা করতে হয়, এর মানে প্রেমের জন্য তার সাহস প্রকাশ করতে হয়, যেন মেয়েটি তার সাহস দেখে তাকে ভালোবেসে ফেলেন।

আর আফগানিস্তানের কিছু উপজাতি এলাকার ঐতিহ্য অনুযায়ী একটি ছেলে যখন একটি মেয়েকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে চান, তখন ছেলেটি মেয়ের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আকাশের উদ্দেশে গুলি ছুঁড়তে থাকেন, এর অর্থ হলো 'আমি তোমাকে ভালোবাসি'। কিন্তু এই আচরণ বেশ আতঙ্কজনক, তাই না?

এর তুলনায় হল্যান্ডে প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার রীতিনীতি বেশ রোমান্টিক এবং কবিতার মত। যদি আপনি কখনো দেখেন যে, কোনো ঘরের জানালায় গোলাপ ফুল রাখা আছে, তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে, ঐ ঘরের মেয়েটি আপনাকে বলতে চাচ্ছেন, 'হে তরুণ পথিক, এই দেখো আমি এখানে, আমাকে প্রস্তাব দাও, আমিতো প্রেমের জন্য প্রস্তুত। বাহ! বাহ!

আজকে আমরা বেশ মিষ্টি একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলাপ করলাম। জানি না আপনার বিয়ে হয়েছে কি না, জানিনা আপনি এখনো প্রেমে পড়েছেন কিনা? যদি দু'টির কোনোটিই আপনার জীবনে না ঘটে থাকে এখনও, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আপনার মনের প্রিয় মানুষটিকে ভালবাসার কথা বলার জন্য উপরোক্ত রোমান্টিক রীতি কোনো না কোনোভাবে আপনাকে আইডিয়া পেতে সহায়তা করবে। তবে শ্রোতাবন্ধু, লাল রঙের অর্থ সব সময়ে মনের রঙ নয়, লাল কার্ড অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। তাই ভালবাসার কথা বলার ক্ষেত্রে এই সত্যটি ভুলে যাবেন না কিন্তু।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040