0209huanqiu
|
চীনের দ্বাদশ জাতীয় গণ কংগ্রেসের ১১তম সম্মেলনে ৪ ডিসেম্বরকে 'সংবিধান দিবস হিসেবে' নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্মেলনে বলা হয়, সংবিধান হচ্ছে দেশের মৌলিক আইন ও দেশ পরিচালনার ভিত্তি। সংবিধান অনুসারেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া হবে।
সংবিধান একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এর সর্বোচ্চ আইনগত মর্যাদা আছে। দেশের উন্নয়ন ও দেশের জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে সংবিধান সঙ্গতিপূর্ণ। দেশের সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়া ও দেশ পরিচালনায় সংবিধানের ভূমিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ । এখন আমরা বিভিন্ন দেশের সংবিধান দিবসের কথা নিয়ে কিছু আলোচনা করবো।
প্রথমেই যাবো যুক্তরাষ্ট্রে, আর জানবো সেদেশটির সংবিধান দিবস পালনের রীতিনীতি।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ও ১৯৫৬ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন কংগ্রেসের গৃহীত দুই বিবৃতি অনুযায়ী প্রতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর হলো যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দিবস ও নাগরিক দিবস। ১৭ সেপ্টেম্বর পরের এক সপ্তাহ হলো সংবিধান সপ্তাহ। প্রতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট-হাউসে প্রেসিডেন্ট ভাষণের মাধ্যমে সংবিধান সপ্তাহ শুরুর ঘোষণা করেন। গত বছরের 'প্রেসিডেন্ট ঘোষণায়' বারাক ওবামা বলেন, '১৭৮৭ সালে তৈরি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান শুধু কাগজেই লেখা আছে তা নয়, বরং তা এ দেশের জনগণের মনে লেখা রয়েছে'। সংবিধান দিবস ও সংবিধান সপ্তাহ চলাকালে ফেডারেল সরকার, বিভিন্ন রাজ্য, আঞ্চলিক সরকার ও অন্যান্য সংস্থা বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান আয়োজন করে, যাতে জনগণ নিজের অধিকার ও সংবিধানের গুরুত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন।
আর এদিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বা স্কুলের দেয়া ফ্রি খাবার পেয়ে থাকেন। এর রং লাল, সাদা ও নীল। ঠিক যেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় পতাকার মত, মানে 'দেশপ্রেম মধ্যাহ্ন খাবার'।
এবারে যাবো কাজাখস্তানে। মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তানে প্রতি বছর সংবিধান দিবসে বিশেষ কুচকাওয়াজ আয়োজন করা হয়। ২০১১ সালে দেশটির সংবিধান দিবস ও স্বাধীনতা দিবস একই দিন অনুষ্ঠিত হয়। তাই সে বছরের কুচকাওয়াজের আকার ছিলো দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। ১ ঘণ্টা-স্থায়ী এ কুচকাওয়াজে কাজাখস্তান বেশ কয়েকটি উন্নত মানের সামরিক যন্ত্র প্রদর্শন করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট অনুষ্ঠানে বলেন, 'সংবিধান দেশের মূল আইন হিসেবে তা দেশের সফল পথে যাওয়ার ভিত্তি'।
জাপানে প্রতি বছরের ৩ মে হলো সংবিধান দিবস। ১৯৪৭ সালের ৩ মে জাপানের সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। এই সংবিধানের নয় নং বিষয় হলো জাপানের জনগণের ন্যায় ও শৃঙ্খলার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শান্তি বাস্তবায়নের সমর্থন করা। তাই জাপানের সংবিধানকে 'শান্তি সংবিধান'ও বলা হয়। প্রতি বছরের সংবিধান দিবসে জাপানে 'শান্তি' নামে বিভিন্ন স্মরণীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
কারণ এর আগে সিনজো আবে সরকার জাপানি জনগণের সবচেয়ে গর্বের বিষয়—সংবিধানের নয় নং সংশোধন করতে চেয়েছিলেন। তাই গত বছরের সংবিধান দিবসে জনগণ এর তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁরা মনে করেন, বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান ৭০ বছর শান্তির সময় পার করেছে। ঠিক 'শান্তি সংবিধানের' কারণেই জনগণ এমন শান্ত জীবন কাটাতে পারেন। তাঁরা মনে করেন, সংবিধান বিশেষ করে নয় নং বিষয় ইতোমধ্যেই দেশ উন্নয়নের ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে।
আজকে আমরা একটু গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলাপ করলাম। হ্যাঁ, যদিও বিষয়টি গুরুগম্ভীর, তবে তা আমাদের সবার জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সংবিধান আমাদের প্রত্যেকের ন্যায় অধিকার নির্ধারণ করেছে। নিজের ন্যায় অধিকার নিশ্চিত হওয়ায় আমরা নাগরিক হিসেবে দেশের সমৃদ্ধি বাস্তবায়নে অবদান রাখতে পারবো এবং জীবনকে আরো সুখী করতে পারবো। (শুয়েইফেইফেই/টুটুল)