Web bengali.cri.cn   
পারস্পরিক আস্থা বাড়িয়ে আদান-প্রদান জোরদার করে চীন ও ভারতের গণমাধ্যম সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে
  2015-02-06 14:47:15  cri

 

১ ফেব্রুয়ারি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয় এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় চীন-ভারত মিডিয়া ফোরাম পেইচিংয়ের অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফোরাম চলাকালে দু'দেশের প্রায় ৪০টি প্রধান গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং কয়েক ডজন বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত চীন-ভারত গণমাধ্যম সহযোগিতায় সমস্যা এবং তথ্য বিনিময় জোরদার ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা ত্বরান্বিত করা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের উপপ্রধান সম্পাদক রেন ছিয়ান ফোরামে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, চীন-ভারত কৌশলগত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় দু'দেশের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে প্রধান তথ্য মাধ্যমের উচিত কার্যকর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, চীন-ভারত কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করা। যেনো দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক আস্থা বাড়ানো যায়। তিনি মনে করেন, চীন ও ভারতের গণমাধ্যম কেবল সবসময় শুধু সংলাপ ও তথ্য আদান-প্রদান করবে তাই নয়, বরং নতুন এ প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে আর্থ-বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করবে। এতে দু'দেশের আরো বেশি তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করবে ও চীন-ভারত কৌশলগত সহযোগিতার সুযোগ বাড়বে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক ও আগ্রহ কিছুটা উন্নত হয়েছে। দু'দেশের গণমাধ্যমে পারস্পরিক রিপোর্টের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নেতিবাচক প্রতিবেদনের সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন, চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ এবং দু'দেশের অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইত্যাদি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, চীন ও ভারতের রিপোর্টে অনেক কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যম সবসময় চীন ও ভারতের মধ্যে তুলনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রেখেছে। এ সম্পর্কে "ফিনিক্স " টিভি কেন্দ্রের চীনা ভাষা চ্যানেল পেইচিং অনুষ্ঠান কেন্দ্রের উপপরিচালক পান লি বলেন,

আমার মনে হয়, সামগ্রিকভাবে চীন ও ভারতের রিপোর্টে পারস্পরিক আস্থা এবং সত্যিকার সমঝোতার অভাব রয়েছে। নেতিবাচক রিপোর্টের হার ইতিবাচক রিপোর্টের চেয়ে বেশি। ফলে দু'পক্ষের দূরত্ব আরো বাড়বে। আমি মনে করি, আমাদের নিজেদের একে অপরকে সম্মান করা উচিত। বাইরের হস্তক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত নয়। কারণ চীন ও ভারত দু'টো বৃহত্ রাষ্ট্র। পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্নভাবে এ ঐক্য ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করে।

এ সম্পর্কে ভারতের ঊর্ধ্বতন সাংবাদিক, জনসেবা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ স্বপন দাস গুপ্তের বক্তব্যও একই রকম। তিনি বলেন,

আমি আবিষ্কার করেছি যে, ভারতের গণমাধ্যমে একটি মজার বিষয় রয়েছে। সেটা হলো পশ্চিমা গণমাধ্যম চীন সম্পর্কিত কিছু নির্ধারিত রিপোর্ট প্রকাশ করে। আমার মনে হয়, এটি অপূর্ণ কাজ। আর আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপূর্ণ অংশটি উন্নত করা উচিত।

সাংবাদিক স্বপন দাস গুপ্ত মনে করেন, দু'দেশের সম্পর্ক উন্নত করতে চাইলে প্রথমেই চীন ও ভারতের গণমাধ্যমের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সমঝোতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন,

আমাদের উচিত বেশি করে বিভিন্ন বিষয়ে পরস্পরের প্রতিবেদন প্রচার করা। প্রকৃত বন্ধু হলে আমাদের সরল আচরণ করা উচিত। পরস্পরের অনুভূতি উপলব্ধি করা উচিত। যখন দু'পক্ষ একই সুরে কথা বলবে, তখন গণমাধ্যমের ভূমিকা আরো শক্তিশালী হবে।

নিঃসন্দেহে চীন-ভারত সম্পর্কে এখনও সীমান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু ভারতের 'আনন্দ বাজার পত্রিকা'র প্রধান সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষাল মনে করেন, চীন ও ভারতের গণমাধ্যমের সামনের দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত। তিনি বলেন,

আমি বাস্তবতাকে স্বীকার করি। কারণ এটি ইতিহাসের অংশ। ১৯৬২ সাল থেকে দু'পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাস কাজ করছে। কিন্তু এখন আমরা ২০১৫ সালে পৌঁছেছি। ইতিহাস বোঝা হয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের উন্নয়নে বাধা দিতে পারে না। আমি আরো চাই সংস্কৃতি, ধর্ম, শিল্প, অপেরা ও চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রিপোর্টের গুরুত্ব ধরে রাখা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে চীন ও ভারতের একে অপরের রিপোর্টে অর্ধেকেরও বেশি রিপোর্ট রাজনীতি ও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। দু'দেশের জনগণ একে অপরকে উপলব্ধি করতে ও হৃদয়ানুভূতি বাড়াতে চাইলে, নিঃসন্দেহে দু'পক্ষের গণমাধ্যমের আরো সার্বিক, বাস্তবমুখী ও ভারসাম্যমূলক রিপোর্ট দরকার। 'গ্লোবাল টাইমস' পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণের কার্যনির্বাহী উপসম্পাদক মাদাম লু চিনসিয়ান বলেছেন, এ ক্ষেত্রে তথ্য মাধ্যমের আত্মসংযম দরকার। দু'দেশের সরকারকেও নিজেদের ভূমিকা পালন করা উচিত।

'চায়না টুডে' ম্যাগাজিনের উপপ্রধান সম্পাদক থাং শুবিয়াও মনে করেন, চীন ও ভারতের স্টেশনে নিযুক্ত সংবাদদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করা উচিত। সাংবাদিক পাঠালে, দু'দেশের গণমাধ্যম পারস্পরিক ভারসাম্যপূর্ণ ও বিষয়গত রিপোর্টের জন্য অনেক কল্যাণকর হবে।

গণমাধ্যমের সহযোগিতা বাড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে শীর্ষ ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। 'চায়না ডেইলি' পত্রিকার উপপ্রধান সম্পাদক কাও আনমিং বলেন,

চীন ও ভারতের গণমাধ্যম আরো বিষয় ও অনুষ্ঠান বিনিময়, তথ্যসূত্রের সহযোগিতা, তথ্য লেনদেন এবং মানুষে মানুষে আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা গভীরতর করতে পারবে। বিশেষ করে, বিষয় ও তথ্যসূত্রের সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ সহযোগিতা জোরদার হবে। এটা হলো গণমাধ্যমের বাস্তব সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং একে অপরকে উপলব্ধি ও আস্থার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন। তাছাড়া চীন ও ভারতের গণমাধ্যম সহযোগিতামূলক অংশীদার বাছাই করে, লেনদেন বজায় রাখতে পারবে। যেমন যৌথ সাক্ষাত্কার, নিয়মিত সেমিনার আয়োজন করা এবং মানুষে মানুষে আদান-প্রদান ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা। দু'দেশের তথ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছাত্র আদান-প্রদান জোরদার করে, দু'দেশের তরুণ-তরুণী বিশেষ করে তরুণ সংবাদদাতা একে অপরের উপলব্ধি ও সচেতনতা বাড়ানো, যাতে ভবিষ্যতে গণমাধ্যম সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করা যায়।

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ স্কুলের বৈদেশিক প্রচার গবেষণা কেন্দ্রের উপপরিচালক, সহকারী অধ্যাপক জৌ ছিংআন পুরোপুরিভাবে নতুন মিডিয়ার সুবিধা কাজে লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন,

আজ নতুন মিডিয়া উন্নয়নের গতি আরো দ্রুততর হচ্ছে। সুতরাং দু'দেশের গণমাধ্যমগুলো আরো বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। নতুন মিডিয়ার ব্যবহারকারীরা বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। তারা দু'দেশের জনসাধারণের সচেতন প্রতিনিধিত্বকারী। আমরা বিশ্বাস করি, দু'দেশের জনসাধারণের মধ্যে অনুকূল প্রভাব রয়েছে। ড্রাগন ও হাতীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় বরং ড্রাগন ও হাতী তালে তালে অভিন্ন উন্নয়ন করবে।

সবাই জানি, গণমাধ্যম হলো দু'দেশের জনসাধারণের পারস্পরিক সচেতনের গুরুত্বপূর্ণ সেতু। চীন ও ভারত উভয়ই ব্রিকসের সদস্য দেশ। পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত্তম দু'টো উন্নয়নশীল দেশ। আমরা আশা করি, গণমাধ্যম দু'দেশের জনসাধারণের উপলব্ধি ও বন্ধুত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040