Web bengali.cri.cn   
বিমানচলাচল আইন মানার আহ্বান জানিয়েছে থাই বেসরকারি বিমানচলাচল ব্যুরো
  2015-01-30 15:41:28  cri

গত বছরের ডিসেম্বর এয়ার এশিয়া বিমানের ঘটনা মনে আছে? সে সময় দু'জন চীনা পর্যটক এয়ার এশিয়ার বিমানের নিয়ম না মানায় কিছু ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এতে বিমানযাত্রা বাতিল করে বিমানটিকে ফিরিয়ে আনা হয়। একইভাবে বিমানের ক্রুদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

চীনের বসন্ত উত্সবকে সমানে রেখে থাইল্যান্ডমুখী চীনা পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। এ সময় বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। থাইল্যান্ডের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক বিমানচলাচল ব্যুরোর প্রধান সমছাই পিপুটওয়াট সম্প্রতি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতা রেন ছিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে থাইল্যান্ডের বিমান চলাচল নিরাপত্তা ক্ষেত্রের কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে চীনের নানচিং শহরগামী এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইটে দু'জন চীনা পর্যটক ফ্লাইটে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং বিমানযাত্রা বাতিল করা হয়। তারপর ওই দুই চীনা যাত্রীকে জরিমানা করা হয়। এর আগে বেশ কয়েকবার থাইল্যান্ড-চীন ফ্লাইটে এরকম ঘটনা ঘটেছে।

এ সম্পর্কে থাইল্যান্ডের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক বিমান চলাচল ব্যুরোর প্রধান সমছাই পিপুটওয়াট বলেছেন, থাইল্যান্ডের আইন অনুযায়ী, বিমানে যে ব্যক্তি উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তাকে ২ হাজার থেকে ২০ হাজার থাই বাথ অর্থাৎ ৩৮০ থেকে ৩ হাজার ৮শ' ইউয়ানের জরিমানা অথবা ১ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে। যদি বিমান ছিনতাই অথবা গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি এমনকি মানুষ হতাহত হয়, তাহলে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান আছে। তিনি বলেন,

যাত্রীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য তার আচরণের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ করি, তার দেশের বিরুদ্ধে নয়। যাত্রীদের মনে রাখতে হবে যে, বিমানের ভিতরের স্থান তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট এবং বিমানের নিয়ম সাধারণ অবস্থার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। কিন্তু নিরাপত্তা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং প্রত্যেক যাত্রী, তার জাতীয়তা যাই হোক না কেনো, উড্ডয়নের নিরাপত্তার জন্য তাকে নিয়ম মনে চলতে হবে। কারণ এটা সবার নিরাপত্তা সঙ্গে সম্পর্কিত। আকস্মিক কোনো পরিস্থিতি গোটা বিমানের ওপর প্রভাব ফেলবে।

সম্প্রতি আবহাওয়ার কারণে চীনের অভ্যন্তরীণ বিমান বিলম্বের ঘটনা ঘটছে। ফলে যাত্রী বিমানে অসন্তোষের ঘটনাও ঘটছে। আসন্ন বসন্ত উত্সবের ছুটিতে থাইল্যান্ডে বহু চীনা পর্যটক যাবে। থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে কারণ ছাড়া বিলম্ব হলে, কিভাবে স্থানীয় আইন লঙ্ঘন না করে প্রতিবাদ জানাতে হবে? এ সম্পর্কে থাইল্যান্ডের বেসরকারি বিমান চলাচল ব্যুরোর প্রধান সমছাই বলেছেন, যাত্রীরা এয়ারলাইন্স পছন্দ করেন তার সময় সাশ্রয় করার জন্য। সুতরাং বিমান বিলম্বের জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করলেই তা বোঝা যায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে অধিকার রক্ষা করা যায়। তিনি বলেন,

এ ধরনের অবস্থা থাইল্যান্ডেও মাঝে মধ্যে ঘটে। থাইল্যান্ডের এয়ারলাইন্স কোম্পানি মৌলিক কারণে বিমান দেরিতে ছাড়লে যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেবে। আবহাওয়ার কারণ ছাড়া অন্য কারণে দেরি হলে তা জানার অধিকার যাত্রীদের রয়েছে। যদি এর দায় এয়ারলাইন্স কোম্পানির হয়, তাহলে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।

থাইল্যান্ডের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, ফ্লাইট ২ ঘণ্টার বেশি কিন্তু ৩ ঘণ্টার কম হলে, এয়ারলাইন্স কোম্পানি যাত্রীদের জন্য বিনামূল্য খাবার এবং টেলিফোন ও ইমেইলসহ বিভিন্ন বিনামূল্য সেবা সরবরাহ করবে। বিলম্বের সময় ৩ ঘণ্টার বেশি কিন্তু ৫ ঘণ্টার কম হলে, যাত্রীদের টিকিট পরিবর্তন করার অধিকার আছে। যদি ফ্লাইট ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় দেরি হয় বা বাতিল করা হয়, যাত্রীরা টিকিট পরিবর্তন করার অধিকার ছাড়াও কিছু আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবে।

থাইল্যান্ডের উত্সবে আকাশে ফানুস ওড়ানোর রেওয়াজ আছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফানুস ওড়ানোর কারণে বিমান চলাচলের নিরাপত্তায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ফানুস ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ঘটনা এখনও ঘটছে। চলতি বছরের নববর্ষে ছিয়াং মাই-এ একটি বিমানের ইঞ্জিনে ফানুস টুকরা ঢুকে যাওয়ায় উড্ডয়ন বাতিল করতে বাধ্য হয়। এ সম্পর্কে সমছাই জনসাধারণ ও পর্যটকদের মনে করিয়ে দেন যে, উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিয়ম মেনে চলা উচিত। নিজেদের আনন্দের জন্য উড্ডয়নে নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করা যাবে না। তিনি বলেন,

আকাশে ফানুস ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির লঙ্ঘন নয়। কিন্তু বিমান চলাচল নিরাপত্তা ও ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ একসঙ্গে মেনে চলতে হয়। কেউ বুঝতে পারে না যে, তার আচরণ সঙ্কট তৈরি করবে। আমরা বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফানুস ওড়ানো নিয়ন্ত্রণ করবো এবং এ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালাচ্ছি।

বিমান বিধ্বস্ত ও নিখোঁজ হওয়ার তিনটি ঘটনার পর দক্ষিণ-পূর্ব এয়ারলাইন্স কোম্পানির জন্য ২০১৪ সাল ছিল বেসরকারি বিমানচলাচলে আস্থা সঙ্কটের বছর। ফ্লাইট বিধ্বস্ত হওয়া ছাড়া কোন মানবসৃষ্ট ত্রুটি এবং নিরাপত্তার খুঁটিনাটির ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব না দেয়া নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি। গত বছরের আগস্ট মাসে থাইল্যান্ডের সিটি এয়ারওয়েইস বিমান আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসারে মেরামত না করায় ফুকেট দ্বীপে পৌঁছানোর পর জরুরি অবতরণ করা হয়। সেখানে কয়েকশ' চীনা পর্যটক আটকে পড়ে। বেসরকারি বিমানচলাচল কোম্পানির উড্ডয়ন নিরাপত্তা পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে বিধিসম্মত করা সম্পর্কে সমছাই বলেন,

থাইল্যান্ডে সত্যিই এ ধরনের পরিস্থিতি ঘটেছে। কিন্তু আমরা বাধ্যতামূলক চেক করবো। প্রত্যেকবার উড্ডয়নের অনুমোদন বিভিন্ন বিভাগকে দেয়া হবে। কোন একটি বিভাগের মতামত থাকলে জানানো হবে। আমি বিশ্বাস করি, এক্ষেত্রে আমরা ভালো ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া, আমরা বিমানবন্দর, বিমান-চালক ও গ্রাউন্ড স্টাফসহ সব সম্ভব্য ব্যবস্থা নিয়ে বিমানচলাচল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।

প্রেমা

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040