0116yin
|
২০১৪ সালের শেষ নাগাদ পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে Spring Buds Project বা চীনের 'স্প্রিং মুকুল প্রকল্প' কার্যকর হবার ২৫তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠান। দারিদ্র্য কবলিত অঞ্চলে স্কুলচ্যুত মেয়ে শিশুদের স্কুলে ফিরে আনতে সহায়তাকারী একটি সামাজিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হিসেবে গত ২৫ বছরে প্রায় ১৫০ কোটি ইউয়ানের তহবিল সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি। ফলে ২৫.১৭ লাখ মেয়ে শিশু স্কুলে ফিরতে পেরেছে।
১৯৮৯ সালে চীনের চতুর্থ আদমশুমারিতে দেখা গেছে, সে বছর ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৪৮ লাখ ছেলেমেয়ে পারিবারিক দরিদ্রের কারণে স্কুলে যেতে পারতো না। এর মধ্যে মেয়ে শিশুর সংখ্যা ৮৩ শতাংশ। আজকের মেয়ে শিশুই ভবিষ্যতের মা। কিন্তু মায়ের গুণাবলী ভবিষ্যতে সারা জাতির গুণাবলীর ওপর প্রভাব ফেলবে। নারীর গুণাবলী উন্নত করতে চাইলে, মেয়ে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। সুতরাং স্কুলচ্যুত মেয়েশিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেয়ার জন্য (China Children and Teenagers' Foundation(CCTF) ) চীনের শিশু ও কিশোর ফাউন্ডেশন-সিসিটিএফ ১৯৮৯ সালে "স্প্রিং মুকুল প্রকল্প" উদ্যোগ ও কার্যকর করেছে। ২৫ বছর ধরে "স্প্রিং মুকুল প্রকল্প" দশ-বার লাখ মেয়েশিশুকে সহায়তা দিয়েছে এবং তাদের নিয়তি পরিবর্তন করেছে। সিসিটিএফ-এর ভাইস চেয়ারম্যান জাও তোংহুয়া বলেন,
সমাজ থেকে মোট ১৪৫.৮ কোটি ইউয়ানের Love donation বা ভালোবাসামূলক অনুদান সংগ্রহ করে ১১৫৪ টি স্প্রিং মুকুল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২৫১৭ লাখ মেয়েশিশু আর্থিক সাহায্য পেয়েছে। আর্থিক মাত্রার ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে পশ্চিম ও সংখ্যালঘু জাতি অঞ্চল এবং সারা দেশের ৩১টি প্রদেশ (স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও শহর)-এর তা বাস্তবায়িত হয়েছে।
তিব্বত জাতির মেয়ে উ জু ওয়াং মু হচ্ছে "স্প্রিং মুকুল প্রকল্প"-এর সুবিধাভোগীগুলোর অন্যতম। ২০০৩ সাল থেকে "স্প্রিং মুকুল প্রকল্প"-এর সাহায্যে তিনি সুষ্ঠুভাবে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে শান সি নর্মাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। এখন তিনি হচ্ছেন তিব্বতের না ছুই'র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, 'স্প্রিং মুকুল প্রকল্প' হলো সুষ্ঠুভাবে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করার চাবিকাঠি। তিনি বলেন,
তখন পরিবারে খুব দারিদ্র্য ছিল। পরিবারে ৮টি বাচ্চা রয়েছে। স্প্রিং মুকুল প্রকল্পের সাহায্যে বোঝাটা অনেক কমেছে। ফলে আমি নিশ্চিতভাবে লেখাপড়া করতে পেরেছি।
সিনচিয়াংয়ের ই লি'র উইঘুর জাতির মেয়ে মে হো লুন শা হচ্ছেন বিমান বাহিনী ও সিসিটিএফ-এর যৌথ কার্যকর "নীল আকাশ স্প্রিং মুকুল প্রকল্প"-এর উপকার ভোগকারী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বছর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের কারণে মি হো লুন শা'র মা মারা যান। এতে দারিদ্র্যতায় পরিবারের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে উঠলো। ১০ বছরের মি হো লুন শা স্কুল ছুটে দু'টো ছোট ভাইকে দেখাশুনা এবং ঘরের কাজ করতে হয়েছে। "নীল আকাশ স্প্রিং মুকুল প্রকল্প"-এর সাহায্যে মি হো লুন শা পুনরায় স্কুলে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন। ২০০৯ সালে বিমান বাহিনীর বিশেষ তালিকাভূক্ত হয়ে বর্তমানে সিনচিয়াংয়ে মোতায়েন বিমান বাহিনীর কোন একটি যোগাযোগ ক্যাম্পের উপ-কোম্পানির কমান্ডার হন। বর্তমানে তিনি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ৩টি দারিদ্র্য মেয়েকে আর্থিক সাহায্য করে "স্প্রিং মুকুল প্রকল্প"-এর প্রতি তার ভালোবাসার হাত প্রসারিত করেছেন। তিনি বলেন,
স্প্রিং মুকুল প্রকল্পের কারণে আমি শিক্ষিত হতে পেরেছি। নাহলে হয়তো অনেক আগেই বিয়ে করতে হত। কৃষি হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের প্রধান কাজ। আমার এখনকার জীবনযাপন সম্ভব হতো না। পেইচিং না হলেও সিংচিয়াংয়ের রাজধানীতে যাওয়ার সুযোগও নেই। ছোটবেলা থেকে আমি নীল আকাশ স্প্রিং মুকুল প্রকল্পের আর্থিক সাহায্য পেয়েছি। আমি তাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই। যদিও আমার সামর্থ্য সীমিত, তবুও আমি তাদের মতো আরো বেশি মানুষকে সাহায্য দিতে চাই।
২৫ বছর ধরে "স্প্রিং মুকুল প্রকল্প" সমাজে ভালোবাসা মিলিত করে দারিদ্র্য কবলিত অঞ্চলের স্কুলচ্যুত ও স্কুলের ছোট মেয়েশিশুকে অব্যাহতভাবে লেখাপড়া করতে, দারিদ্র্য অঞ্চলের স্কুলের মান উন্নত করতে এবং দারিদ্র্য অঞ্চলের শিক্ষাদান উন্নয়ন করতে সাহায্য দিয়েছে। নারী-পুরুষ সমানসহ বিভিন্ন মৌলিক জাতীয় নীতি অনুসরণ ও কার্যকর করায় ভূমিকা পালন করেছে এবং শিশুর বৈধ অধিকার রক্ষার জন্য ত্বরান্বিত ভূমিকা পালন করেছে। সে দিনের সম্মেলনে অংশ নেয়া চীনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট লি ইউয়ান ছাও বলেছেন, দারিদ্র্য মেয়েশিশুর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিয়তি পরিবর্তনের ওপর "স্প্রিং মুকুল প্রকল্প" ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং জীবনের সূচনা থেকে নারী-পুরুষ সমানের জন্য ইতিবাচক অবদান রেখেছে। তিনি আশা করেন, All-China Women's Federation সব চীন নারী ফেডারেশন এবং সমাজের বিভিন্ন মহল সাধারণ সম্পাদক সি চিনপিংয়ের দাবি অনুযায়ী, "স্প্রিং মুকুল প্রকল্প" জের টানা, আরো বেশি ভালোবাসার শক্তি মিলিত হয়ে, ভালোবাসার সূর্য প্রত্যেক মেয়েশিশুর স্বপ্নকে আলোকিত করবে। সারা সমাজে নারী-পুরুষ সমান দায়িত্ব পালন করে, সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোকে লালন-পালন ও অনুশীলন করার ও চীনা জাতির নবজীবনের মহান চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ইতিবাচক অবদান রাখবে।
প্রেমা