Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের সবচেয়ে গরীব প্রেসিডেন্ট
  2015-01-12 18:29:42  cri


বয়স ৭৯ বছর, তিনি কখনই নেকটাই পরেন না। জিন্স হলো তাঁর প্রিয় পোশাক। তিনি নড়বড়ে এক জরাজীর্ণ বাড়িতে থাকেন। ঘরের বাইরের কুয়া হলো পরিবারের সবার পানীয় জলের উত্স। কুয়ার কাছেই রয়েছে একটি মাটির পথ, যেখান দিয়ে শুধু একটি গাড়ি চলাচল করতে পারে। তিনি অনেক বিনয়ী। বন্ধুরা তাঁকে পেপে হিসেবে ডাকেন।

তিনি হলেন ল্যাটিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, তাঁর সব সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার মার্কিন ডলারেরও কম। একটি ভাঙাচোরা গাড়ি হলো তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।

একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুজিকার বেতন আছে। তবে তিনি প্রতি মাসের বেতনের ৯০ শতাংশই অন্যদেরকে প্রদান করেন। তিনি বলেন, সবাই আমাকে সবচেয়ে গরীব প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডাকেন, তবে আমি কোনমতেই গরীব নই। আমি সব কিছুই অর্জন করেছি, আমার জীবন খুবই ভালো।

মুজিকার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ১৯৮৭ সালে উত্পাদিত নীল রং-এর একটি গাড়ি। তিনি এ গাড়িটিকে অনেক পছন্দ করেন। মাঝে মাঝে তিনি তা চালিয়ে সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। গত বছরের জুন মাসে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেয়ার সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক নেতা ১০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে এ গাড়িটি কেনার অনুরোধ জানান। তবে মুজিকা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, যদিও এ গাড়ি অনেক ভাঙাচোরা, তবে তা বন্ধুদের দেয়া এক উপহার। তাই গাড়িটি বিক্রি করা মানে বন্ধুদের সাথে এক রকমের অপরাধ করা।

উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিও-এর উপকণ্ঠে একটি ছোট বাড়ি আছে। তা হলো মুজিকা ও তাঁর স্ত্রীর বাসা। তাঁরা কুয়ার পানি পান করেন, ফুল চাষ করে পয়সাকড়ি রোজগার করেন। একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুজিকার অবশ্যই গার্ড রয়েছে । তবে অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্টের তুলনায় তাঁর গার্ডের সংখ্যা অনেক কম। শুধু দুই জন পুলিশ তাঁর নিরাপত্তা রক্ষার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া, আরেকটি গার্ড আছে, তা হলো তাঁর তিন পায়ের ছোট কুকুর "মানুয়েলা"।

দক্ষিণ আমেরিকার ছোট দেশ উরুগুয়ে আসলে একটি মাঝারি মানের উন্নয়নশীল দেশ। সমাজের স্থিতিশীলতা থেকে রাজনীতিতে নিষ্ঠা, সবদিক থেকেই এ অঞ্চলের শীর্ষ স্থানে রয়েছে দেশটি। এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্ট নিশ্চয়ই সবচেয়ে গরীব হতে পারে না, তাইনা? আসলে মুজিকার সম্পদ কম হওয়ার প্রধান কারণ হলো তিনি তাঁর অধিকাংশ সম্পদ অন্যদেরকে দান করেন। প্রতিমাসে তিনি বেতনের ৯০ শতাংশই গরীব মানুষ ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে দান করেন। মানে তিনি প্রতি মাসে তাঁর বেতন থেকে ১২ হাজার মার্কিন ডলার অন্যদেরকে দান করেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি ও তাঁর স্ত্রী বিলাসী প্রেসিডেন্ট ভবনে থাকতে চান না। তিনি চান, গৃহহারা মানুষেরা শীতকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে থাকবেন।

যৌবনে মুজিকা একজন বাইসাইকেল খেলোয়াড় ছিলেন। গত শতাব্দীর ৬০ ও ৭০'র দশকে তিনি বিপ্লবের জন্য একটি গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। তখন তিনি চার বার গুলিবিদ্ধ হন। একবার তিনি এ কারণে জীবনও হারাতে বসেছিলেন। তখন তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি ১৪ বছর কারাবরণ করেন।

১৯৮৫ সালে উরুগুয়েতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। তিনি রাজনীতিতে যোগ দিতে শুরু করেন। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে ৭৪ বছর বয়সী মুজিকা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। সেসময় তাঁকে গরীব মানুষের প্রার্থী হিসেবে ডাকা হয়। নির্বাচনে জয় লাভ করার পর তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ও নেই, পরাজয়ও নেই । কারণ সবাই উরুগুয়ের সদস্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি বিভিন্ন দলের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন, যাতে উরুগুয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যায়।

নিজের সাদামাটা জীবন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে। তিনি বলেন, ১৪ বছরের কারাগারের জীবন তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। সবাই আমাকে সবচেয়ে গরীব প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডাকেন, তবে আমি নিজেকে গরীব মনে করি না। সত্যিকার গরীবদের কাজের একমাত্র লক্ষ্যই হলো বিলাসী জীবন বজায় রাখা এবং অনেক বেশি প্রত্যাশা তৈরি করা। এটি হলে মানুষ প্রত্যাশার দাস হবে। যদি আপনার সম্পদ কম থাকে, তাহলে দাসের মত এমন জীবন বজায় রাখার জন্য আপনি ক্লান্ত হবেন না। সম্পদ কম থাকলে আপনি আরো বেশি স্বাধীন সময় পাবেন। আসলে আমার জীবন যাপন, তা আমার নিজের বাছাই।

কে কিভাবে মুজিকাকে মূল্যায়ন করেন সেটা কোনো বিষয় নয়। তিনি একজন সুন্দর মনের মানুষ, এটাই আসল বিষয়। গত বছরের শেষ নাগাদ তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কারণ উরুগুয়ের আইন অনুযায়ী, কেউ দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। অবসরের জীবন কল্পনা করে মুজিকা বলেন, তাঁর আশা হলো অবসরের পর ৩০ থেকে ৪০ জন গরীব শিশুকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করবেন।

হ্যাঁ, মুজিকার সাদামাটা জীবন আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনই তা অপব্যবহার করেন নি। দেশকে এবং জনগণকে সেবা করার কথা এক মুহূর্তেও ভুলে যান নি তিনি। হ্যাঁ, মুজিকা দেখিয়েছেন কিভাবে মানুষের সেবা করতে হয়। মুজিকা শিখিয়েছেন কিভাবে রাষ্ট্রের প্রধান হয়েও সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করা যায়। মুজিকা আপনাকে সালাম। আপনার সহজসরল জীবন আমাদেরকেও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করুক এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040