Web bengali.cri.cn   
চীনের বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল ১১৮টি
  2015-01-09 15:37:17  cri

সম্প্রতি পেইচিংয়ে শেষ হয়েছে বার্ষিক জাতীয় ব্যবসা সম্মেলন। এতে ২০১৫ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের "বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চলের উদ্ভাবন প্রকল্প" তুলে ধরেছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী কাও হুছেং। গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় চীন সারা বিশ্বের ৫০টি দেশে ১১৮টি আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মধ্যে ৭৭টি 'ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড' প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

'ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড' হচ্ছে The new Silk Road Economic Belt বা 'নতুন সিল্ক রোড অর্থনৈতিক বেল্ট' এবং the 21st Century Maritime Silk Road বা '২১ শতকের সামুদ্রিক সিল্ক রোড' এর সংক্ষিপ্ত নাম। এর লক্ষ্য হলো প্রাচীনকালের 'সিল্ক রোড'-এর ঐতিহাসিক সুনাম ব্যবহার করে ইতিবাচকভাবে দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা, সমন্বিত অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি বিনিময় কমিউনিটি এবং দায়িত্বশীল কমিউনিটি তৈরি করা যায়। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা বিভাগের উপ-প্রধান ফাং ওয়েই সম্মেলন চলাকালে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, বর্তমানে চীন বিশ্বের ৫০টি দেশে ১১৮টি আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এর মধ্যে ৭৭টি অঞ্চল 'ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড' বরাবর ২৩টি দেশে অবস্থিত। এসব বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগ ও সহযোগিতার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। তিনি বলেন,

বর্তমানে প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫০টি দেশে প্রতিষ্ঠিত ১১৮টি সহযোগিতামূলক অঞ্চলের মধ্যে ৭৭টি 'ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড' বরাবর ২৩টি দেশে অবস্থিত। ৭৭টি অঞ্চলে সিল্ক রোডের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব। ৩৫টি সহযোগিতামূলক অঞ্চল সিল্ক রোড অর্থনৈতিক বেল্ট বরাবর দেশগুলোতে অবস্থিত। অন্য ৪২টি ২১ শতকের সামুদ্রিক সিল্ক রোড বরাবর দেশে অবস্থিত।

'ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড' পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ ইউরোপ এবং পূর্ব আফ্রিকার ব্যাপক অঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। ফাং ওয়েই ব্যাখ্যা করেছেন, সিল্ক রোড অর্থনৈতিক বেল্টে ৩৫টি সহযোগিতামূলক অঞ্চল তথা কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, রাশিয়া, বেলারুস, হাংগেরি, রোমানিয়া ও সার্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থিত। '২১ শতকের সামুদ্রিক সিল্ক রোড'-এর জন্য আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল নিয়ে তিনি বলেন,

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, লাওস, মিয়ানমার, কাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় আমাদের অঞ্চল আছে। দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকায় অঞ্চল আছে। আফ্রিকায় মিসর, ইথিওপিয়া, জাম্বিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া ও মোজাম্বিকে আমাদের অঞ্চল আছে। এসব হচ্ছে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এটা প্রতিফলিত হয়েছে যে, বিদেশে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমর্থন রয়েছে।

চীনের বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চলগুলো প্রধানত ম্যানুফ্যাকচারিং, রিসোর্স ব্যবহার, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং লজিস্টিকস- এই চার রকমের। বেশিরভাগ অঞ্চল হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ২ হাজার ৭৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকৃত পুঁজির পরিমাণ ১২ বিলিয়েন মার্কিন ডলারেরও বেশি। মোট ৪৮ বিলিয়েন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য এখানে উত্পাদিত হয়। ফাং ওয়েই উল্লেখ করেন, পরবর্তী পদক্ষেপে বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চলের অধীনে, শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং বাজার কার্যক্রম করবে। বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল ভালোভাবে করার জন্য সরকার জাতীয় নির্দেশনা ও শিল্প নির্দেশনা ক্ষেত্রের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্য দেবে।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, একক শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অঞ্চল পর্যন্ত আরো বেশি চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের 'বাইরে' যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশি বৈদেশিক কর্মী ও সম্পত্তির নিরাপত্তা সমস্যা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে চীনের বৈদেশিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। বৈদেশিক সম্পত্তি প্রায় ৩ ট্রিলিয়েন মার্কিন ডলার। প্রায় ১ মিলিয়ন চীনা কর্মী বিদেশে চাকরি করছে। ফাং ওয়েই বলেছেন, সহযোগতিামূলক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বৈদেশিক নিরাপত্তা সংকট এড়ানোর এক ধরনের ব্যবস্থা। ভবিষ্যতে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে এ ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি বলেন,

বৈদেশিক সম্পত্তির সংরক্ষণ সম্পর্কে যদিও আমাদের শতাধিক পুঁজি বিনিয়োগ সংরক্ষণ চুক্তি এবং ৯০টিরও বেশি দ্বৈত শুল্ক আদায় এড়ানো সংক্রান্ত চুক্তি আছে, তবুও আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়েনের সঙ্গে উঁচ্চ মানের পুঁজি বিনিয়োগ সংরক্ষণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি। এছাড়া দ্বিপক্ষীয চুক্তির মাধ্যমে অবস্থানকারী দেশে আমাদের পুঁজি বিনিয়োগ অধিকার নিশ্চিত করেছি। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের বৈদেশিক সহযোগিতামূলক অঞ্চলে আন্তঃসরকার চুক্তির মাধ্যমে সেখানে আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পুঁজি বিনিয়োগের আইনি অবস্থান ও পুঁজি বিনিয়োগের অধিকার নির্ধারণ করা।

চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণালয়ের বিশেষজ্ঞ ছেন ফেংইং মনে করেন, ভবিষ্যতে বিদেশে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংকট আরো গভীর হবে। ভবিষ্যতে দেশের উচিত বৈদেশিক স্বার্থকে কৌশলগত লক্ষ্য বাড়িয়ে সেটাকে সংরক্ষণ করা। তিনি বলেন,

বর্তমানে একটা সমস্যার দিকে নজর দেয়া উচিত, ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের কেস দেখা দেবে। প্রতি বছর ১শ' বিলিয়নের পুঁজি বিনিয়োগ পরিমাণ, দশ বছর পর কি পরিমাণ হবে ? তাছাড়া আমাদের বর্ধিত পরিমাণ আছে। দেখা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে সংকট আরো বেশি হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং আমার মনে হয়, দেশের পক্ষ থেকে বৈদেশিক স্বার্থকে কৌশলগত লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা উচিত।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040