1219yin
|
স্থানীয় সময় ১১ নভেম্বর দুপুরে ফিলিস্তিনি জনগণ জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রামাল্লায় মিলিত হয়। অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য পরিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাতকে স্মরণ করার জন্য তারা পতাকা নেড়ে উচ্চস্বরে স্লোগান দেয়।
৪৭ বছরের স্থানীয় পুলিশ আদেল মোকাদি বলেছেন, আরাফাতের প্রতি ফিলিস্তিনিদের বিশেষ ও গভীর ভাবাবেগ রয়েছে। তিনি বলেন,
ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনিদের কাছে বাবার মতো। তিনি ছিলেন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। সকল রাজনৈতিক দল তাকে সম্মান জানায়। আমরা চিরদিন ইয়াসির আরাফাতকে মনে রাখবো। তিনি আমাদের রক্তে, আমাদের মস্তিষ্কে এবং আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।
জীবিতকালে ইয়াসির আরাফাত ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট, ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। ১৯৯৩ সালে ইসরাইলের সঙ্গে 'অসলো চুক্তি' স্বাক্ষর করার জন্য তিনি ১৯৯৪ সালের শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান। কিন্তু তার মারা যাবার ১০ বছর পর, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষ এখনও শেষ হয়নি। চলতি বছরের গ্রীষ্মে ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে ৫০ দিনব্যাপী যুদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ইসরাইলী পুলিশ ও জেরুজালেমবাসীর মধ্যে আল-আকসা মসজিদ নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে।
আরাফাতের স্মরণ অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইসরাইলকে যুদ্ধের জন্য নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি ইসরাইল কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের আচরণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন,
ইসরাইল অব্যাহতভাবে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল ও ইহুদী বসতি নির্মাণ চালিয়ে যাবার কারণে বর্তমানে ফিলিস্তিনি ভূমির পরিমাণ ১৯৬৭ সালের তুলনায় অনেক কমেছে। আমরা অব্যাহতভাবে ইসরাইলি দখলের বিরোধিতা করি। আমরা আল-আকসা মসজিদ রক্ষা করবো, আমাদের গির্জা রক্ষা করবো এবং আমাদের দেশকে রক্ষা করবো।
আব্বাস পুনরায় ঘোষণা করেছেন, তিনি অব্যাহতভাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে প্রস্তাব উত্থাপন করবেন, যেনো ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর ইসরাইলের দখল শেষ করা যায়। তিনি বলেন,
যদি জাতিসংঘে আমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালত অর্থাত্ আইসিসিসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগ দিয়ে আবেদন জানাবো, যেনো ইসরাইলের যুদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায়।
ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের কর্মকর্তা সারা সায়েজ বলেছেন, গাজার সামরিক সংঘর্ষের পর সম্প্রতি ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে আবারো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আরাফাতকে স্মরণ করছে মানুষ।
তিনি বলেন,
আমরা রামাল্লা থেকে পুরো জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা এলাকা থেকে জাতিসংঘ এবং সারা বিশ্বের মানুষের কাছে, আমাদের অভিজ্ঞতা জানানো এবং ভবিষ্যতের কাছে আমাদের প্রত্যাশা শোনাতে চাই। গত কয়েক মাসের দাঙ্গা-হাঙ্গামাময় পরিস্থিতির মুহূর্তে এ শোকসভায় ফিলিস্তিনের বিভিন্ন দলের ঐক্য জোরদারে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
শ্রদ্ধেয় নেতাকে স্মরণ করার পাশাপাশি অনেক ফিলিস্তিনি বলেছেন, তারা অব্যাহতভাবে আরাফাতের পথ অনুসরণ করে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলসভাবে যুদ্ধ করবে। আদেল মোকাদি বলেন,
আজ না হোক কাল আমরা নিজের স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করবো। আমরা শান্তি প্রত্যাশা করি। আমরা শান্তিকে ভালোবাসি এবং শান্তির জন্য আমরা যুদ্ধ করবো। বেঁচে থাকার সময় আমি নিজের দেশ অধিকার না পাওয়া সত্ত্বেও, আমি আশা করছি, আমাদের সন্তানরা ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর আরাফাত ফ্রান্সের প্যারিসে মারা যান। তাঁর রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে নানা গুজব থাকলেও সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
প্রেমা