Web bengali.cri.cn   
ম্যাকাও ব্যবসায়ীর চোখে চীনের কোলে ফিরে আসার ১৫ বছর
  2014-12-12 18:53:21  cri

প্রিয় শ্রোতা, আগামী ২০ ডিসেম্বর ম্যাকাওয়ের চীনের কোলে ফিরে আসার ১৫তম বার্ষিকী। অনেক ম্যাকাওবাসী সে দিনের প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন। ম্যাকাও রি-ছেরিকফ ফুড কোম্পানির মহাপরিচালক লিং মান ই এদের মধ্যে একজন। ম্যাকাওয়ের কোনো সুভিনরের কথা বললে, পর্তুগীজ নাগেটের কথা উল্লেখ করতে হবয়। লিং মান ই ঠিক পর্তুগীজ নাগেটের প্রধান আমদানিকারক। ম্যাকাওয়ের একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি চীনের কোলে ফিরে আসার ১৫ বছরে ম্যাকাওয়ের বাস্তব অবস্থা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন।

খাদ্য মহলের একজন ব্যবসায়ী হিসেবে লিং মান ই সবচেয়ে বেশি দেখেছেন ওই অঞ্চলে পর্যটক বৃদ্ধির হার। ১৯৯৯ সালের ২০ ডিসেম্বর চীনের কোলে ফিরে আসে ম্যাকাও। আগে ম্যাকাওয়ে পর্যটক আসতো ৭ মিলিয়নের মতো। এখন তা বেড়ে ২৯ মিলিয়েন ছাড়িয়েছে। চীনের কোলে ফিরে আসার আগে ম্যাকাওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল ছিল না। ছিনতাই ও গোলাগুলি মাঝে মধ্যেই ঘটতো। চীনের কোলে ফিরে আসার পর সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ দ্রুত ভাল হয়ে উঠেছে। এছাড়া ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার মূল-ভূভাগের আংশিক প্রদেশ ও শহরের অধিবাসী হংকং ও ম্যাকাওয়ে 'অবাধ যাতায়াত' উন্মুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। এরপর ম্যাকাওয়ের পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এর আগে, মূল-ভূভাগের অধিবাসীরা শুধু আত্মীয়স্বজনকে দেখতে, ব্যবসা এবং পর্যটন দলের সঙ্গে ম্যাকাওয়ে যাওয়ার আবেদন করতে পারতো। ১৯৯০ সালে ছেরিকফ বেকারি প্রতিষ্ঠাতা লিং মান ই বলেন,

চীনের কোলে ফিরে আসার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল ছিল না। ক্যাসিনোর বিভিন্ন ঘটনায় তারা গোলাগুলি করতো। তখন পর্যটক অনেক কম ছিল। ক্যাসিনো ব্যবস্থাপনার মূল্য খুবই চড়া। সুতরাং আমি আপনার কাছ থেকে পর্যটক নিয়ে আসলে তারা আমার কাছ থেকে পর্যটক নেয়ার জন্য মারামারি করে। সুতরাং নিরাপত্তা ভালো না। কোনো একটি সড়কে মানুষ নেই বললেই চলে। পর্যটকও নেই। পত্রিকা খুলে দেখা যাবে গত রাতে আবার গোলাগুলি হয়েছে। এখন সবকিছুই ভালো। আমাদের পিছনে মাতৃভূমি আছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল হয়েছে, খারাপ মানুষদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি বছর ২ কোটি পর্যটক ম্যাকাওয়ে আসে। আমি বিশ্বাস করি, তাদের মধ্যে অধিকাংশই মূল-ভূভাগের। এছাড়া প্রতিদিন পর্যটক গ্রুপও ম্যাকাওয়ে আসছে। এটা বড় সংখ্যা।

বর্তমানে ম্যাকাওয়ে লিং মান ই'র ছেরিকফ ফুড শপের শতাধিক বিক্রয় কেন্দ্র আছে। এটা ম্যাকাওয়ে ভ্রমণকারী পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার অবদান। পর্যটকের বৃদ্ধির ফলে লিং মান ই'র ব্যবসা আরো ভাল হয়ে ওঠে। মুড়িও বর্তমানের কয়েক কোটি ইউয়ানে পৌঁছেছে।

লিং মান ই'র কথায় 'মাতৃভূমির ওপর নির্ভর করা'র বাস্তব অর্থ এটি। ম্যাকাওয়ে ভ্রমণ করা পর্যটক সংখ্যা বাড়ার কারণে ম্যাকাও রি-ছেরিকফ ফুড লিমিটেড কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি লিং মান ই চিন্তা করছেন, কিভাবে ছেরিকফ বাদামের ক্যান্ডিসহ খাবার মূল-ভূভাগের বাজারে প্রবেশ করানো যায়। 'মূল-ভূভাগ ও ম্যাকাওয়ের ঘনিষ্ঠ আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত ব্যবস্থা' অর্থাত্ সিইপিএ'র স্বাক্ষর তাঁর জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে। সিইপিএ ২০০৩ সালে সাক্ষরিত হয়। এখন ১১ বছর পার হয়েছে। ২০০৪ সালে চুক্তিটি সার্বিকভাবে কার্যকরের পর থেকে এ পর্যন্ত সিইপিএ মূল-ভূভাগ ও ম্যাকাও দু'টো জায়গার বাণিজ্যিক উন্নয়নের জন্য নতুন চালিকাশক্তি যুগিয়েছে। সিইপিএ'র স্বাক্ষরের অর্থ হলো, ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মূল-ভূভাগ ম্যাকাও থেকে আমদানীরত মালামাল বিনা শুল্কে প্রবেশ করতে পারা। লিং মান ই'র কোম্পানির উত্পাদিত খাদ্য এর মধ্যে একটি। প্রথম দফা ছেরিকফ ব্র্যান্ডের মিছরি মূল-ভূভাগে পৌঁছানোর দৃশ্যের কথা মনে করে লিং মান ই অনেক সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,

খুব ভাল। আমরা চেষ্টা চালাতে চেয়েছিলাম, প্রথম দফায় মিছরি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখতে চেয়েছিলাম। খুব ভাল। অনেক সুবিধাজনক মনে হয়েছে বিষয়টি। এটা হয়েছে শূন্য শুল্ক নীতির কারণে।

২০০৬ সালে ম্যাকাওয়ের উত্পাদিত সব মালামালের মূল স্থানের মানদণ্ড নিশ্চিত করার পর সবই শূন্য শুল্কে মূল-ভূভাগে রপ্তানি করা যাবে। ২০০৪ সালে সিইপিএ কার্যকর করার প্রথম বছরে শূন্য শুল্কে মূল-ভূভাগে রপ্তানি করা মালামালের মোট মূল্য শুধু ছিলো ১৮.৩ লাখ ম্যাকাও ডলার। কিন্তু ২০১২ সালে তা দশ কোটি ম্যাকাও ডলারে পৌঁছেছে। এটা ২০০৪ সালের তুলনায় ৫৭ গুণ বেশি। এছাড়া ২০১৪ সালের প্রথম ১০ মাসে শূন্য শুল্কে মূল-ভূভাগে রপ্তানি করা মালামালের মূল্য ৭.৬১২ কোটিতে পৌঁছেছে। এসব বছরে শূন্য শুল্কের সুযোগ সুবিধায় লিং মান ই অনেক খরচ সাশ্রয় করেছেন। তিনি এসব খরচ দিয়ে অন্যান্য কাজ করেছেন।

শূন্য শুল্কের সুযোগ সুবিধা ছাড়া সিইপি সেবা বাণিজ্যের বাজার প্রবেশে বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। সিইপিএ'র কাঠামোর অধীনে লিং মান ই প্রথম দফায় মূল-ভূভাগে পণ্য পাঠানো প্রথম ম্যাকাওয়ের ব্যবসায়ী। সিইপিএ কার্যকরের পর কুয়াং তোং প্রদেশের জু হাই শহরের ওয়ান জাই অঞ্চলে প্রথম ব্যবসায়ী হিসেবে বসতি স্থাপন করেন। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে লিং মান ই ওয়ান জাই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যময় সড়কে 'রি-ছেরিকফ ফুড শপ' প্রতিষ্ঠা করেন। সিইপিএ'র সুযোগ সুবিধা নীতি অনুযায়ী লিং মান ই'র জু হাই দোকান সুষ্ঠুভাবে খোলা হয়েছে এবং ব্যবসাটা খুবই ভালো চলছে। তিনি বলেন,

জু হাই-এ আমরা হচ্ছি প্রথম ম্যাকাও থেকে আসা ব্যবসায়ী। আমরা ম্যাকাও থেকে ছেরিকফ বেকারি শুরু করি। তখন ওয়ান জাই'র ম্যাকাও সড়ক সবেমাত্র শুরু হয়েছে। তারা একটি ম্যাকাও সড়ক সৃষ্টি করার প্রত্যাশা করেছে এবং আশা করেছে যে, আমাদের ম্যাকাওয়ের কিছু বেকারি দোকান ওয়ান জাই-এ পুঁজি বিনিয়োগ করবে। চূড়ান্তভাবে আমরাই একমাত্র ম্যাকাও থেকে এসেছি। তারা আমাদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছে।

বর্তমানে প্রতি দিন জু হাই'র এই 'রি-ছেরিকফ খাবারের দোকানে' ম্যাকাও সুভিনরগুলো পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এখন সিইপিএ'র পরিপূরণ চুক্তি 'পরিপূরণ চুক্তি-১০' পর্যন্ত সাক্ষরিত হয়েছে। ম্যাকাওয়ের উন্মুক্ত করারর মাত্রা অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সকল মালামালের অবাধকরণ বাস্তবায়িত হয়েছে। সকল ম্যাকাও পণ্যদ্রব্য প্রায়ই শূন্য শুল্কে মূল-ভূভাগে প্রবেশ করতে পারে। এটা সিইপিএ'র লক্ষ্য। এছাড়া সেবা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও উন্মুক্ত হবার মানে মূল-ভূভাগ ও ম্যাকাওয়ের মধ্যে বাণিজ্য সার্বিকভাবে অবাধ হবে।

মাতৃভূমির ওপর নির্ভর করার কারণে লিং মান ই'র কোম্পানিতে মানবসম্পদের ব্যবহার পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করা গেছে। প্রথম দিকে মূল-ভূভাগের কোনো কর্মী সেখানে ছিলো না। বর্তমানে অর্ধেকেরও বেশি মূল-ভূভাগের কর্মী রয়েছে। এভাবে ম্যাকাওকে দেয়া সমর্থন লিং মান ই'র মনের ওপর গভীর অনুভূতি দিয়েছে। কোম্পানির ভবিষ্যতের প্রতি তাঁর আস্থা আরো বেশি হবে।

প্রেমা

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040