Web bengali.cri.cn   
আফ্রিকায় চীনা ডাক্তারের জীবন
  2014-12-08 15:31:57  cri


চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পশ্চিম আফ্রিকায় শুরু হয় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ। এরপর তা লাইবেরিয়া, গিনি ও সিয়েরালিয়নসহ আফ্রিকার অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এই রোগটিতে সন্দেহভাজন এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি, সেই সঙ্গে এতে নিহত হয়েছেন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।

আমরা জানি, অন্য দেশকে সাহায্যের ক্ষেত্রে চীন সবসময়ই উদার। কাউকে সাহায্য করতে চীন দ্বিধা করে না। চীনের সাহায্যে বিভিন্ন দেশে নির্মিত হয়েছে সড়ক, সেতু, ভবনসহ অনেক কিছুই। এ ছাড়া অনেক অনুন্নত দেশকে চীন অব্যাহতভাবে সাহায্য করে চলেছে।

ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণে ২৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা করেন, চীন সরকার চতুর্থ পর্যায়ের সাহায্য শুরু করবে, এ সাহায্যের মধ্যে রয়েছে অর্থ, দ্রব্যসামগ্রী ও চিকিত্সা যন্ত্র, আরো রয়েছেন চীনের শ্রেষ্ঠ ডাক্তার। অক্টোবর পর্যন্ত চীন পশ্চিম আফ্রিকার আক্রান্ত এলাকায় যথাক্রমে ২ শতাধিক ডাক্তার পাঠিয়েছে। এসব ডাক্তার স্থানীয় ডাক্তারের সঙ্গে ইবোলার হাত থেকে লোকজনদেরকে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

আফ্রিকায় চীনের চিকিত্সক দল পাঠানোর ইতিহাস সেই ১৯৬৩ সাল থেকে। আধা শতাব্দী থেকে চীনের ডাক্তাররা আফ্রিকাকে নিজের বাসা হিসেবে মনে করছেন। আফ্রিকার আকাশ, বাতাস, মাটি থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুতেই মিশে রয়েছে এই ডাক্তারদের প্রাণের স্পর্শ।

শহর থেকে দরিদ্র গ্রাম পর্যন্ত, আফ্রিকার সবজায়গার জনগণের মধ্যে চীনা ডাক্তার মানেই আস্থা এবং নির্ভরশীলতার প্রতীক। অনেকের কাছেই চীনা ডাক্তার মানে নিজের পরিবার।

চীনা ডাক্তারের মধ্যে কেউ কেউ আফ্রিকায় নিজের জীবনও উত্সর্গ করেছেন। জীবনের বিনিময়ে তাঁরা একদিকে যেমন চীনের জন্য মর্যাদা অর্জন করেছেন, তেমনি নিজেকেও আফ্রিকানদের মধ্যে করেছেন ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার প্রতীক। যখন চীনা ডাক্তাররা কর্তব্য শেষ করে দেশে ফিরে যান, তখন সবাই একটি কথাই বলেন: চীনা ডাক্তার, আপনি চলে যাবেন না।

বর্তমানে সেখানে অনেক চীনা ডাক্তার ইবোলার সঙ্গে লড়াই করছেন।

লিন ই লুং এসব চীনা ডাক্তারের মধ্যে একজন। সকাল সাড়ে আটটায় তিনি সাদা রং-এর ডাক্তারের কাপড় পরে থাকার জায়গা থেকে সেনেগালের রাষ্ট্রীয় চিকিত্সা কেন্দ্রে পৌঁছান। বরাবরের মতোই হাসপাতালের সামনে অনেক আগে থেকেই অনেক রোগী অপেক্ষা করেন। লিন একজন চক্ষু ডাক্তার। তাঁর কক্ষের সামনে অনেকেই এ চীনা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করেন। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর পুরো একদিনের কাজ।

সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত কোনো বিরতি ছাড়াই তাঁর কক্ষে একের পর এক রোগী আসতে থাকেন। এক মিনিটের জন্যও থেমে থাকেনা তাঁর কাজ। ডাক্তার লিন প্রত্যেক রোগীর খোঁজ খবর নেন এবং তাদের রোগের বিস্তারিত তথ্য জিজ্ঞেস করেন। এরপর তিনি বেছে নেন চিকিত্সার পদ্ধতি। সেনেগালের এই হাসপাতালটিতে লিন এক বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি এখন ভালো ফরাসি ভাষা বলতে পারেন এবং এ ভাষায় রোগীদের সঙ্গে বেশ যোগাযোগও করতে পারেন।

স্থানীয় এক মহিলা বলেন, এখানে শ্রেষ্ঠ চীনা ডাক্তার আছেন, আমরা সবাই তা জানি। সকালে দুই ঘণ্টায় ডাক্তার লিন ৩০ জন রোগীকে দেখেছেন। এর মাঝখানে তাঁর বিশ্রামের কোনো সময় নেই। লিন বলেন, 'প্রতি সকালে অনেক বেশি রোগী আসেন'। শেষ রোগীকে দেখার পর তিনি অফিসের সব জিনিস গুছিয়ে আবার অস্ত্রোপচার-কক্ষের দিকে এগুচ্ছেন, আজ তিনটি অস্ত্রোপচার তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে।

অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে 'অপারেশনের সময়' এমন বাতি বার বার জ্বলছে। এরপর বিকেল ৩টায় তিনি অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বের হন। তখন তিনি দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় পান।

তাঁর এক দিনের কাজ এভাবেই শেষ? না, অস্ত্রোপচার শেষে তিনি আবার অফিসে গিয়ে রোগীদের দলিল দেখতে শুরু করেন, যাতে রোগীদের অবস্থা ভালোভাবে জানা যায়।

সম্প্রতি চীনের চিকিত্সক দল সেনেগালে 'চোখে ছানি পড়া' রোগীদের জন্য একবার বিনা খরচে চিকিত্সা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। যেখানে লিন হলেন একমাত্র চোখের ডাক্তার।

সেনেগালে চোখে ছানি পড়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই চিকিত্সা করতে যান না। অবশেষ যখন তারা আর সহ্য করতে পারে না, তখন তারা হাসপাতালে যান, কিন্তু তখন চিকিত্সার জন্য আরো তেমন ভালো সুযোগ থাকে না।

এমন অবস্থা দেখে ডাক্তার লিন অনেক দুঃখ পান। ঠিক এ কারণে যখন চিকিত্সক দলের প্রধান উং উই চোখে ছানি পড়া রোগীদের জন্য বিনা খরচে চিকিত্সা করার প্রস্তাব দেন, তখন ডাক্তার লিন ১০০% রাজি হয়ে যান। তিনি বলেন, আরো বেশি এমন রোগীকে চিকিত্সা দিতে পারলে আরো বেশি লোকের জীবনে আলো বয়ে আনতে পারবো। এক একটি পরিবারের জন্য আশা বয়ে আনতে পারবো, যা জীবনের জন্য খুব তাত্পর্যপূর্ণ।

হাসপাতাল থেকে লিন যখন নিজের থাকার জায়গায় পৌঁছান তখন সন্ধ্যা ৬টা। তিনি সরাসরি আবাসিক হলে না গিয়ে সবজি বাগানে যান। শাকসবজি খেতে চাইলে তাঁদের নিজেদেরকেই তা চাষ করতে হয়। তিনি জানান, চিকিত্সক দলে একজন বাবুর্চি ও একজন অনুবাদক ছাড়া সবাই ডাক্তার। জীবনযাপনের সব কাজ ডাক্তারদের নিজেদেরকেই করতে হয়।

আগে দেশে কে শাকসবজি চাষ করেছে? শুরুতে আমরা ভাবতাম, আমরা সবাই ডাক্তার, কেন এখন কৃষকের মত এমন কাজ করবো? কিন্তু এখন আমরা সবাই এ কাজ করতে অনেক আগ্রহী। নিজের চাষ করা শাকসবজি খেতে অনেক ভালো লাগে।

রাতের খাবার শেষে ডাক্তার লিন অবশেষে নিজের জন্য কিছুটা সময় পান। তখন কোনো কাজ নেই, একা। এমন মুহূর্তে দেশের বাসার কথা অনেক পড়ে তাঁর। তাঁর সন্তান অনেক ছোট। প্রত্যেক রাতে ইন্টারনেটে ভিডিও-এর মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে গল্প করেন তিনি। লিন বলেন, গল্প করার সময় ছেলে কান্নাকাটি করে। সে বার বার আমাকে জিজ্ঞেস করে, বাবা, তুমি কবে দেশে ফিরে আসবে? তবে তিনি বলেন, যদিও দুই বছর ধরে বিদেশে থাকার কারণে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেন না, তবে সেনেগালে তিনি অনেক মুগ্ধকর অনুভূতি পেয়েছেন। (শুয়েই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040