Web bengali.cri.cn   
গোলযোগের জীবনের ফুল ফোটান: থাই নারীরা
  2014-12-05 16:17:25  cri


দক্ষিণ থাইল্যান্ডের গোলযোগের পর বেশ কয়েক বছর পার হয়েছে। এটা স্থানীয় জনগণের জীবনের নিরাপত্তার ওপর বিরাট হুমকি ডেকে আনার পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ফেলেছে। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের গোলযোগের পর বেশ কয়েক বছর পার হয়েছে। এটা স্থানীয় জনগণের জীবনের নিরাপত্তার ওপর বিরাট হুমকি ডেকে আনার পাশাপাশি তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ফেলেছে। একই সময় এসব দাঙ্গা হাঙ্গামায় অনগ্রসর শ্রেণী হিসেবে পরিচিত নারীদের জীবন অসহনীয় চাপ ও দুঃখ কষ্টের মধ্যে পড়ে।

দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সীমান্ত পাত্তানি, নারাথিওয়াত ও ইয়ালা তিনটি প্রদেশে ২০০৪ সাল থেকে সরকারি অফিস এলাকা, সামরিক বাহিনী মোতায়েনের স্থান, পুলিশ স্টেশন এবং বাজার ও স্কুলসহ বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক দাঙ্গাহাঙ্গামা, গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ তাদের আত্মীয়স্বজন হারিয়েছে, যা তাদের পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলেছে। যখন মানুষ তাদের হারানো আত্মীয় স্বজনের কথা মনে করে, তখন তাদের পিছনের গভীর উদ্বেগ ও শোক জেগে ওঠে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্ত্রী, কেউ কেউ মা, কেউ কেউ মেয়ে। অনগ্রসর শ্রেণী হিসেবে পরিচিত নারীরা সিদ্ধান্ত নেন যে, তারা আর গোলযোগের অভিযোগ করবে না, বরং দৃঢ়তা ও স্বাধীনতার পথ বেছে নেবেন।

চলতি বছরের ১৫ মে গুলিবর্ষণের শিকার লা-ও ফ্রোমচিন্দা হচ্ছেন পাত্তানি প্রদেশের পানারে জেলার থাকাম থানার একজন সাধারণ কৃষক। হামলার আগে তিনি থানার একটি সুপ দোকানে কাজ করেছিলেন। হামলার দিনে দোকানে তিনি একা ছিলেন। অপরাধীরা তাঁর দিকে কয়েকবার গুলি করে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তবে পালিয়ে যাওয়ার আগে তাঁর কাঁধে ও পিছনে গুলি লাগে। তিনি বলেন,

গুলি বের করা হয়েছে। কিন্তু এখনও ব্যথা পাই।

দশ বছর আগে বিয়ে করে লা-ও ছাংওয়াট সংখলা প্রদেশ থেকে পাত্তানি প্রদেশে এসেছেন। তাঁর স্বামী বেশ কয়েক বছর আগে রোগে ভুগে মারা গেছেন। তিনি দু'টো বাচ্চাসহ থাকেন। বৌদ্ধ হবার কারণে মুসলিম অধ্যুষিত শহরে জীবনযাপন করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। একই সময় দুর্ঘটনার কারণে তাঁর জীবন পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়। আগে তিনি অবাধে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু এখন হামলার শিকার হওয়ায় তার বাইরে যাওয়া ও স্বাভাবিক চাকরি বন্ধ করতে হয়। তিনি বলেন,

আমি একজন সাধারণ মানুষ। জীবনযাপন করতে হয়। কারো সঙ্গে আমার সমস্যা নেই। শুধু দুটো বাচ্চাসহ আমি এক মা। আমি জানি না, কেন তারা আমার ওপর হামলা চালায়। কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। কিন্তু আমাদের এমনভাবে বেঁচে থাকতে হয়। এটা আমাদের বাসা হয়ে উঠেছে। এটা ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে পারছি না।

বর্তমানে লা-ও'র জীবনে টানাটানি চলছে। কিন্তু স্থানীয় নারী সংস্থার সাহায্যে তিনি নিজ বাসায় ভেষজ ওষুধ দিয়ে ঝাল সস বানাতে শুরু করেছেন, যাতে একান্ত প্রয়োজনীয় মৌলিক দৈনন্দিন খরচগুলো চালানো যায়। দু'টো বাচ্চার মধ্যে বড়টা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ হবার পথে। তার মানে ক'দিন পর বাসায় অর্থ উপার্জন সে সাহায্য করতে পারবে। তাঁর চাপ কিছুটা কমবে।

লা-ও'র অভিজ্ঞতার চেয়ে ইয়ারিন জেলার ফিয়ামুমান থানার মুসলমান গ্রামবাসী ভায়েলিমাউ ছেলাউ আরো নিরীহ। ৩৪ বছরের ফিয়ামুমান আগে পাত্তানি শহরের কেন্দ্রীয় মার্কেটে কাজ করেছিলেন। গত বছরের ২০ মার্চে তিনি বাচ্চাকে নিয়ে মার্কেটের মধ্য দিয়ে উল্টো দিকের রেস্তোঁরা থেকে জিনিস কিনতে যান। কিন্তু রেস্তোরাঁর পাশে পুলিশ স্টেশনের সামনে একটি সন্দেহজনক গাড়ির ওপর মনোযোগ দেন নি। খাবার কেনার পর মার্কেটে ফিরে যাবার সময় ঠুং ঠুং শব্দ শুনেছেন। যখন চাঙ্গা হয়েছিল, তখন তাঁর ৫ বছরের বাচ্চা অজ্ঞান হয়ে গেছে। তাঁর নিজের দু'টো পা গুরুতরভাবে আহত এবং বেশ কয়েকটি জায়গার ফেটে গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসার সময় বাচ্চা হারানোর দুঃখে তিনি কাতর হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর তাঁর স্বামী হৃদয়হীনভাবে তাঁকে পরিত্যাগ করেছে। তিনি বলেন,

সত্যিই খুব কঠিন। খুব অসহায় লাগে। দুর্ঘটনা ধারাবাহিকভাবে আমার গায়ে ঘটে। প্রথমে বোমা হামলার শিকার হয়। তারপর ছেলে হারিয়ে গেছে। স্বামীও ত্যাগ করেছে। ভাগ্যক্রমে বাবা মা ও বন্ধুরা আমার কাছে থাকে। আমার একমাত্র ছেলেকে মিস করি। দুর্ঘটনা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু গত পুরো এক বছর আমার খুব খারাপ গেছে। ওষুধ খেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হতো।

সবেমাত্র স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারা ফিয়ামুমান এখন বাবা-মার সঙ্গে থাকেন। যদিও মনোভাব আগের মতো অনিয়ন্ত্রিত না, তবুও তাঁর চোখে গোপন করতে না পার দুঃখ ফুটে ওঠে। পায়ের দাগ চিরদিন তাকে আত্মীয়স্বজন হারানোর কথা মনে করিয়ে দিবে।

পানারে জেলার ফোমিন থানার মারিসা সামাহ্যা হচ্ছেন একজন সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি পাশাপাশি পাত্তানি প্রদেশের নারী সাহায্য সংস্থায় কাজ করেন। গোলযোগে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সাহায্য করেন। শুভাকাঙ্ক্ষী ও শক্তিশালী শিক্ষিকা আসলে জীবনের বিরাট পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়েছেন। ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, তিনি আশপাশে বাজারের গুলির শব্দ শুনেছেন। তিনি বলেন,

গুলির শব্দ শুনে আমি জানলাম কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু জানি না কি হয়েছে। আমার স্বামীর কিছুটা হয়েছে। দেখার জন্য আমি ছেলেকে পাঠাই। কিছুক্ষণ পর ছেলের কান্নার শব্দ শুনেছি।

মারিসার স্বামী তখন ছিলেন স্থানীয় সরকারের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি গার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য। বাজারের বাইরে সরকার বিরোধী এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ লোক তাকে হত্যা করে। মারিসা বুঝতে পারেন না, কেন মুসলমানের মধ্যে এক দল আরেক দলকে হত্যা করে। তিনি বলেন,

তখন খুব ভয় পেলাম। কেউ কেউ বিশেষ করে আমার বাসায় এসে আমাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেয়। তা নাহলে আমার নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

অবশেষে মারিসা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাখ্যান করেন। তারপর এক বছরে মারিসা পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও প্রতিবেশীর সান্ত্বনা ও সহযোগিতায় পতনের কিনারা থেকে ফিরে আসেন। পাত্তানি নারী পারস্পরিক সাহায্য সংস্থা তাকে আন্তরিক সাহায্য করে। পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো মারিসা অকথ্য দুঃখ স্মৃতি পর্যালোচনা করে, তাঁর মতো অভিজ্ঞ নারীদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন,

জীবনকে ভালো করে দেয়ার কিছু নেই। যেহেতু আমার পূজারি নেই, সেহেতু আমার আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ জীবনে আর কোনো আশাবাদ দেখতে পারলাম না। ভাগ্যক্রমে বন্ধু, প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যের সান্ত্বনা ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নারী সংস্থার খবরদারি ও সাহায্য ছিল। কেন আমি পুনরায় দাঁড়াতে পারি? কারণ তারা আমার হৃদয়ে পুনরায় আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছেন। ফলে আমি কঠিন অবস্থা কাটিয়ে এ পর্যন্ত চলে এসেছি।

প্রেমা

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040