1117huanqiu
|
তারপরও পর পর অবৈধভাবে সেখানে প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। লোকজন জিজ্ঞেস করবে যে, বিশ্ব ক্ষমতার কেন্দ্র এবং মার্কিন ফার্স্ট ফ্যামিলির বসবাস স্থান হিসেবে এটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবচেয়ে কঠোর হওয়া সত্ত্বেও কেন এমন ভুল হয় যে, মানুষ খুব সহজেই এতে প্রবেশ করতে পারে? কে বা কারা অথবা কি কি সংস্থা হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দায়ী?
হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের কেন্দ্রস্থলের পেনসিলভেনিয়া রাস্তায় অবস্থিত। তা ১৮ শতাব্দীর শেষ দিকে নির্মিত একটি সাদা রং-এর ভবন। এই ভবনের চেহারা দেখতে অনেক সাধারণ, তবে এর নির্মাণের ডিজাইন অনেক জটিল। দু'শরও বেশি বছর বয়সী সাদা রঙের এ ভবনটিকে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত পুনরায় মেরামত এবং সাজানো হয়। আগে এ ভবনের কাঠামো ছিল কাঠের, বর্তমানে তা ইস্পাতের তৈরি। হোয়াইট হাউসের আয়তন ৭.৩ হেক্টর, বড় নয়, তবে এ ভবনের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন অর্থাত্ এফবিআই, ওয়াশিংটন বিশেষ এলাকার পুলিশ ব্যুরো এবং ওয়াশিংটনের স্থল বাহিনীর দফতর দায়ী। ভবনটির নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতি দিন ১০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি নিয়োজিত থাকেন।
এফবিআই ও ওয়াশিংটন পুলিশ ব্যুরো হোয়াইট হাউসের বাইরে নিয়মিত টহল দিয়ে থাকে, সেই সঙ্গে তারা হোয়াইট হাউসের বিরুদ্ধে আক্রমণের আচরণ নজরদারি করে এবং তা প্রতিরোধ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে এফবিআই হোয়াইট হাউসের কাছাকাছি ১২টি ব্লকে থাকা লোকজনের তথ্য ও বাড়িঘর নির্মাণের অবস্থা পরীক্ষা করে, যাতে সন্ত্রাসীরা বাইরে থেকে সুড়ঙ্গ খনন করে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে না পারে।
যুদ্ধের সময় বা সন্ত্রাসী হামলার সময় হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা রক্ষার কাজ করে ওয়াশিংটনের স্থল বাহিনীর দফতর। এ সংস্থা হোয়াইট হাউসের কাছ 'স্টিঙ্গার মিসাইল' স্থাপন করেছে। প্রয়োজন হলে হোয়াইট হাউসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালানোকারীর উপর পাল্টা আক্রমণও চালাবে। এছাড়া, সুষ্ঠুভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনে হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা শক্তিও অনেক গুণ বৃদ্ধি করে এই সংস্থা।
হোয়াইট হাউসের ৭.৩ হেক্টর এলাকায় আরো অনেক যন্ত্র আছে, এর নাম হল "কাছে যেও না" এরকম। যেমন হোয়াইট হাউসের লনে অনেক ধরনের যন্ত্র আছে। কেউ কাছাকাছি অবস্থান করলে সাথে সাথে এ্যালার্ম বেজে উঠে। এছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় গুপ্তচরের নিরাপত্তা প্রহরীর স্টেশন আছে, ২৪ ঘণ্টা ধরেই হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা রক্ষায় পাহারা দেন তাঁরা।
এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের ছাদে পাহারাদার-এর জায়গা আছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এসব পাহারাদারদের প্রতি মাসেই শুটিং পরীক্ষা দিতে হয়। হোয়াইট হাউসের পাহারাদাররা ১ হাজার মিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুকে গুলি করতে পারেন। যে কোনো সময় আততায়ীকে হত্যা করতে তারা প্রস্তুত। তাই গাড়ি ও লোকজনদের হোয়াইট হাউসের কাছে যাওয়া অনেক কঠিন।
হোয়াইট হাউসের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ-এ চার দিকে উঠা-নামা করা যায় এমন লৌহ প্রতিরোধক রয়েছে, যা গাড়ির প্রবেশ ঠেকাতে পারে। এই উপায়ে গাড়ি বোমা হামলা এড়াতে পারে হোয়াইট হাউস। তবে পেনসিলভেনিয়া রাস্তার দিকে হোয়াইট হাউসের লনের বাইরে কোনো অবরোধ নেই। শুধু গুপ্তচররা এখানে টহল দিয়ে থাকেন। অবশ্য পেনসিলভেনিয়া রাস্তায় সবসময় পুলিশের গাড়ি থাকে। লোকজন বেষ্টনীর বাইরে থেকে হোয়াইট হাউস দেখতে পারেন। তবে যদি কেউ বেষ্টনী টপকাতে চান, তাহলে গুপ্তচররা নিশ্চয়ই তাকে গ্রেফতার করবেন।
যারা হোয়াইট হাউসের অতিথি, নিরাপত্তা কর্মীরা কঠোরভাবে তাদের পরিচয় পরীক্ষা করে থাকেন। হোয়াইট হাউসে যারা প্রবেশ করতে চান এবং যারা হোয়াইট হাউস থেকে বাইরে যেতে চান সবাইকে নিজের পরিচয় পত্র দেখাতে হয় এবং কেন হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে চান, বা বাইরে যেতে চান তা জানাতে হয়।
হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগে নিরাপত্তা পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে, তারপর বিশেষ কর্মী আপনাকে সাক্ষাতের জায়গায় নিয়ে যাবে। ইচ্ছা মত হোয়াইট হাউসে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
হয়ত আপনারা বলবেন, তাহলে সাংবাদিকের সুবিধা থাকবে নিশ্চয়ই? তবে যে সাংবাদিকের সাক্ষাতের কার্ড নেই, তাদের প্রতিবার এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। বিশেষ কর্মীর সঙ্গে ছাড়া বিদেশি সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারেন না।
যারা হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণ পান, তাদেরকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর পরই নিজের যাবতীয় সব তথ্য হোয়াইট হাউসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে জমা দিতে হয়। যাতে এফবিআই তা তদন্ত করতে পারে।
এফবিআইয়ের তদন্তে নিশ্চিত হয়েই আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয় তাদের কাছে। তারপর এ ব্যক্তি আমন্ত্রণ পত্র নিয়ে যখন হোয়াইট হাউসে উপস্থিত হন তখন তাঁকে দুইবার চেক করার পর হোয়াইট হাউসে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।
হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্যিই অনেক বিস্ময়কর, তাইনা? হ্যাঁ, এসব নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা শোনার পর আমাদেরকে স্বীকার করতেই হবে যে, হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা সত্যি অনেক কঠোর। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসেবেও এটিকে আখ্যায়িত করতে পারি। আর তা হবেই না কেন? কারণ এটি যে বিশ্বের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। (শুয়েইফেইফেই/টুটুল)