Web bengali.cri.cn   
যারা হোয়াইট হাউসে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে
  2014-11-10 19:42:28  cri



এখন আপনাদেরকে একটি দৃশ্য বর্ণনা করবো, একটি যুদ্ধ বিমান হঠাত যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের ওপরে উপস্থিত। অনেক সন্ত্রাসী, দুঃসাহসী গেরিলা অস্ত্র নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করছে। একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করা কোনো এক দেশের প্রধানমন্ত্রীর সহকারীও আসলে একজন সন্ত্রাসী। যখন গেরিলারা হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের কক্ষে প্রবেশ করে তখন এই সন্ত্রাসীও সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মাথায় বন্দুক তাক করে। বাইরের এবং ভিতরের সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় গেরিলারা খুব তাড়াতাড়ি হোয়াইট হাউসকে দখল করে নেয়। যেন মুহূর্তের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সবাই গেরিলাদের হাতে জিম্মি।

কেমন! এ দৃশ্য শুনে আপনাদের কেমন লাগছে? আসলে এটি সত্য ঘটনা নয়। এটি হলিউডের চলচ্চিত্র "Olympus Has Fallen" এর একটি দৃশ্য।

চলচ্চিত্রের মধ্যে হোয়াইট হাউস প্রতিদিনই বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হয়। আসলে হোয়াইট হাউস মানেই তো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার কেন্দ্র। আর তাই সত্যি সত্যিই বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি হঠাত দেয়াল টপকে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন। তারপর ৬০ মিটারের লন অতিক্রম করে হোয়াইট হাউসের উত্তর গেটে পৌঁছান তিনি। যা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার থাকার ঘর থেকে মাত্র কয়েক সিঁড়ি দূরে। যদিও অবশেষে হোয়াইট হাউসের গুপ্তচররা তাকে গ্রেফতার করেন। তবে খুবই আতঙ্কের বিষয় হল, এ ব্যক্তির কাছে তখন একটি ছুড়ি ছিল। শুধু তাই নয়, হোয়াইট হাউসের বাইরে তার গাড়িতে আরো ৮ শরও বেশি ছুড়ি রেখেছিলেন তিনি ।

হোয়াইট হাউস, বিশ্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবচেয়ে কঠোর এমন একটি জায়গায় প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে । আসলে কেনইবা সবাই এর ভিতরে প্রবেশ করতে চায়? এর মধ্যে কি কি মজার বিষয় রয়েছে?

সাধারণ মার্কিন নাগরিকরা মনে করেন, হোয়াইট হাউস একটি রহস্যময় জায়গা। সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে অনেক দূরত্ব রয়েছে এটির। তবে কিছু কিছু সাহসী লোক দেয়াল টপকে বা বিভিন্ন উপায়ে এ রহস্যময় জায়গায় প্রবেশ করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চান। কেউ কেউ হোয়াইট হাউসের কোনো ভোজসভায় অংশ নিতে চান। আর কেউ কেউ কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই সেখানে প্রবেশ করতে চান ।

প্রথমেই সবচেয়ে শোচনীয় একটি উদাহরণ আপনাদেরকে জানাবো।

এমন একজন ছিলেন যিনি হোয়াইট হাউসে প্রবেশের জন্য প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে মিরিয়াম কেরি তাঁর এক বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে হোয়াইট হাউসের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরির উদ্দেশ্যে দুর্ঘটনা ঘটান। এরপর নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁকে গ্রেফতারের জন্য পিছু নেয় এবং অবশেষে কংগ্রেসের কাছাকাছি এলাকায় গুলি করে তাঁকে হত্যা করে।

স্থানীয় তথ্য মাধ্যমের খবরে প্রকাশ, এ ঘটনার আগে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় কেরির। তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছেন। যাইহোক পুলিশ কেরিকে হত্যা করেন। এ আচরণ সম্বন্ধে বিভিন্ন পক্ষের মতামত বিভিন্ন। পুলিশ মনে করেন, এ ঘটনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই তাদের চিন্তা করার কোনো সময় ছিল না। কেরির পরিবার মনে করেন, পুলিশ খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা বলেন, গাড়ির ভিতরের মানুষ গুলি ছুড়ে নি। তাই পুলিশের বন্দুক ব্যবহারের কোনো দরকার ছিল না।

এখন আমি আপনাদেরকে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের সবচেয়ে দৃঢ় ব্যক্তিটির কথা জানাবো।

মার্কিন নাগরিক প্রেন লি পাটার্সনের/পিটার্সনের চার বার হোয়াইট হাউসে প্রবেশের রেকর্ড রয়েছে। ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর চতুর্থ "অভিযানে" তিনি নীল রং-এর জিন্স প্যান্ট এবং সাদা রং-এর টি-শার্ট পড়েন। টি-শার্টে লেখা ছিল, God Bless America"। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর তিনি চিত্কার করে বলতে থাকেন, আমি সন্ত্রাসবাদের শিকার"। পরে গুপ্তচররা তাকে গ্রেফতার করেন। তিনি গুপ্তচরদেরকে বলেন, প্রেসিডেন্টকে আমি খুব জরুরী এবং গোপন তথ্য জানাতে চাই"। ঠিক এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে অবস্থান করছেন।

হোয়াইট হাউসে প্রবেশের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কারণ হল, এক ব্যক্তি মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের মেয়ে চেলসি ক্লিন্টনকে দেখতে চান। এ ব্যক্তিটি হলেন আরাকানসাস রাজ্যের সোন কোক্স। ২০০৬ সালে তিনি হোয়াইট হাউসের টহলকর্মীকে জানান, তিনি হোয়াইট হাউসের কাছে একটি গির্জায় চেলসির সঙ্গে দেখা করতে চান। তখন জর্জ ডাব্লিউ বুশ ক্ষমতায়। নিরাপত্তা কর্মী এ পুরুষকে বলেন, চেলসি এখন আর হোয়াইট হাউসে থাকেন না।

যদি আপনারা জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা, এভাবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশকারীদের মধ্যে কার বয়স সবচেয়ে বেশি? তাহলে এ মানুষটি নিশ্চয়ই কাতালিনো ডিয়াজ। ২০০৭ সালে তিনি এ মহান কাজ করার সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৬ বছর। তিনি হোয়াইট হাউসের দেয়াল টপকাতে চান। তখন তার গায়ে তিনটি ব্যাগ ছিল। একটিতে ছিল বই, একটিতে ছিল রেকর্ডার, আরেকটিতে ছিল অন্যান্য জিনিস। তবে এসব জিনিসের মধ্যে কোনো বিপজ্জনক জিনিস ছিল না।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ডিয়াজের বিরুদ্ধে সরকারের দেয়া অভিযোগের নাম অনেক মজার। তা হল "অবৈধভাবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ", "বোমা হুমকি" ও "উড়ন্ত বোমা নিক্ষেপ"। সরকারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, উড়ন্ত বোমা নিক্ষেপের নামে তিনি হোয়াইট হাউসে তাঁর ব্যাগ ছুঁড়ে মারেন।

যদি আমি বলি, কেউ হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করলেও নিরাপত্তাকর্মীর কিছু করার নেই এবং এ মানুষকে মুক্তি দিতে হয়, সেই সঙ্গে কোনো শাস্তিও দিতে পারেন না তাকে। আপনারা কি তা বিশ্বাস করবেন?

আসলে এটি কিন্তু সত্য। হ্যাঁ, যদি কেউ হঠাত হোয়াইট হাউসে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন, নিরাপত্তাকর্মীরা শুধুমাত্র তাকে গ্রেফতার করবেন, এমনকি উপরোক্ত উদাহরণের মত গুলি করে হত্যা করার সম্ভাবনাও নেই। এমন একজন মানুষের ক্ষেত্রে কোনো কিছুই করার নেই নিরাপত্তাকর্মীর।

চলতি বছরের আগস্ট মাসে এক ছোট শিশু তার শারীরিক গঠনের সুবিধার জন্য সাফল্যের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে এবং হোয়াইট হাউসে রাখা এ্যালার্ম স্পর্শ করে।

নিরাপত্তাকর্মীরা যখন অনেক উত্তেজিতভাবে বাঘের গতিতে সেখানে পৌঁছে এ ছোট শিশুটিকে দেখেন, তারা তখন হাসতে শুরু করেন, আর কিছুই করতে পারেন না। অবশেষে নিরাপত্তাকর্মীরা এ শিশুকে তার বাবা-মার কোলে তুলে দেন।

একজন মুখপাত্র এ বিষয় সম্বন্ধে বলেন, যখন এ শিশু কথা বলতে পারবে, তখন আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবো। কেন তুমি এত ছোট বয়সে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে চাও? তোমার উদ্দেশ্য কি?

ঘটনাগুলো শুনতে মজা, কিন্তু প্রবেশ করাটা সত্যিই অনেক বিপজ্জনক। নিরাপত্তাকর্মীরা কিন্তু সত্যি সত্যিই অনেক ব্যবস্থা নেবেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040