Web bengali.cri.cn   
"বিলম্বিত বিয়ের" প্রবণতা
  2014-10-20 18:49:24  cri



দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবার ও নারী গবেষণাগারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪০ বছর বয়সের পর প্রথমবারের মত বিয়ে করা লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ২০১১ সালে ৪০ বছরের পর প্রথমবারের মত বিয়ের আবেদন করা মানুষের সংখ্যা ২০১০ সালের চেয়ে ৫৮.২শতাংশ বেড়েছে। এমন "বিলম্বিত বিয়ের" প্রবণতা শুধু দক্ষিণ কোরিয়াতেই দেখা যায় তা নয়, জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাপানিদের প্রথমবার বিয়ের বয়স আগের ২৫.৭ বছর থেকে এখন ২৮.২ বছর বেড়েছে। এ ছাড়া জার্মানির ফেডারেল পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬০ বছর আগে নারীর গড়পড়তা বিয়ের বয়স ছিল ২৫ বছর, তবে ২০০৯ সালে তা বেড়ে ৩০ বছরে দাঁড়িয়েছে।

তাহলে কেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন সামাজিক অবস্থা দেখা যায়? প্রথমে আমরা আলোচনা করবো বিয়ের ক্ষেত্রে লোকজনের ভুল ধারণা নিয়ে। আর এরই মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো বিয়ের আসল অর্থ কি?

নারী বা পুরুষ বিয়ের আগে যখন মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন বা একাকীত্ব বোধ করেন, তখন ভাবেন বিয়ে করলেই হয়তো এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপনি যদি এমনটি ভেবে থাকেন, তাহলে তা হবে ভুল। বিয়ে আপনার এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। বিয়ে সম্পর্কে প্রচলিত এমন কয়েকটি ভুল ধারণার কথা তুলে ধরেছে মুম্বাই মিরর।

একাকীত্ব থাকবে না?

বিয়ে মানে সঙ্গী পাওয়া। তা নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সত্য। তাই দু'পক্ষই মনে করেন, সঙ্গী যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে, একাকীত্বের যন্ত্রণায় ভোগার কোনো আশঙ্কা নেই। নারী মনে করেন, তিনি তাঁর স্বামীর কাছে এত দিনের না-বলা কথা, দুঃখ-কষ্ট বলে নিজেকে হালকা করবেন, তাঁকে বন্ধু বানিয়ে নেবেন। আশা করেন, স্বামীও তাঁর সব কষ্ট ভাগ করে নেবেন। কিন্তু বিয়ের পর নারীকে হতাশ হতে হয়। এমনই এক নারী বলেন, 'বিয়ের পর আমার কখনো মনে হয় না, আমরা পরস্পরের সঙ্গে কোনো কিছু শেয়ার করি। আমি যখন বলি, সে কান দিয়ে শোনে, কিন্তু মন দিয়ে বোঝে না। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও মনে হয় না আমরা একসঙ্গে আছি।'

আরেকটি ভুল ধারণা: আর্থিক নিরাপত্তা। অবিবাহিতরা ধারণা করেন, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর যৌথ আয় সংসারজীবনে আর্থিক নিরাপত্তা দেবে। আসলে তা হয় না। নিজ নিজ আয়ে সংসারের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। নিজের খরচের জোগান নিজেকেই দিতে হয়। এ বিষয়ে দম্পতির কেউ কাউকে তেমন একটা সহায়তা করেন না।

অন্যের স্বজন নিজের হয় না

বিয়ের পর নতুন আত্মীয়স্বজন-পরিজন নিয়ে সুখে বাস করার স্বপ্ন দেখেন অবিবাহিত নারী-পুরুষ। বিয়ের পর পর উভয়েই চেষ্টা করেন সঙ্গীর স্বজনকে আপন করে নিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা সাফল্যের মুখ দেখে না। দিন শেষে নিজের রক্তের বন্ধনই প্রধান হয়ে দেখা দেয়। যখন কোনো সংকট দেখা দেয়, তখন এই সত্য প্রকট হয়। অন্য পরিবার থেকে আসা কেউ, সে যতই ভালো হোক না কেন; পক্ষপাতিত্ব চলে যায় নিজের স্বজনের দিকে। এ ক্ষেত্রে স্বপ্ন ভঙ্গের আশঙ্কা থাকে। বন্ধুরা, এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে, নতুন স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দেখান কিন্তু বেশি কিছু আশা করবেন না।

সমস্যার সমাধান সন্তানে?

বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী যখন একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যস্ত থাকেন, তখন তাঁদের মনে হয় সন্তানের জন্মই হয়তো সংকটে সমাধান দেবে। এটি ভুল ধারণা। যথেষ্ট প্রস্তুতি না নিয়ে সন্তান নিলে তা বরং দাম্পত্য জীবনকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাই সন্তান নেওয়ার আগে ভালো করে ভাবুন, আপনারা কি প্রস্তুত নতুন অতিথিকে নিয়ে সুন্দরভাবে সময় কাটানোর জন্য?

বিয়ে সম্পর্কে ইতিবাচকভাবে সঠিক ধারণা পোষণ করতে পারলে মানে লোকজন বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলে তবেই তার বিয়ে করা উচিত। কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুতই বিয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। আসলে বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক সামাজিক উপাদানও আছে, তা লোকজনের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলে। আস্তে আস্তে আরো বেশি লোক দেরিতে বিয়ে করছেন, সেই সঙ্গে কিছু কিছু লোক সারা জীবনও বিয়ে করতে চান না, প্রথমে তা আর্থিক উপাদানের সঙ্গে জড়িত। অনেকেই শুধু আর্থিক নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই বিয়ে করতে চান।

সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন নিশ্চয়তা শুধু বয়স বেশি হলেই বাস্তবায়ন করা যায়। কারণ টাকা উপার্জনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই বেশ সময়ের দরকার হয়।

আসলে বিয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পুঁজি বা টাকা থাকা দরকার। ফলে গাড়ি কেনা, বাড়ি কেনা, শিশুর শিক্ষা এবং বীমাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া যায়। তারপর বিয়ে করতে পারেন। এখন বিশ্বের আর্থিক অবস্থা ততটা আশাবাদী নয়, তাই এমন পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ে যেন একটি বিলাসী ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।

মানসিক এবং আর্থিক উপাদান ছাড়াও আরেকটি উপাদানের ওপর নজর রাখতে হয়। তা হলো বিয়ে উপযোগী নারী এবং পুরুষের হার, মানে লিঙ্গ হার। কারণ এর কারণে বর বা কনেও মূল্যবান সম্পদ হতে পারেন। যেমন দক্ষিণ কোরিয়ায়, দক্ষিণ কোরিয়ার পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত ২০১১ সালের জনজরিপ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে দেশটির বিয়ের জন্য উপযোগী পুরুষ ও নারীর হার হল ১:১৯। মানে পুরুষ যথেষ্ট নয়। উপযোগী বয়সের নারীর স্বামী খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। এটাও একটি সমস্যা।

আরেকটি কারণ আছে, তা হলো লোকজনের ধারণার পরিবর্তন বা উন্নয়ন। এক দিকে সামাজিক মর্যাদা পরিবর্তন এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নিজের চরিত্রে নারীদের ধারণা অনেক উন্নতি হয়েছে। তারা নিজেকে বিবাহের একটি অতিরিক্ত অংশ হিসেবে দেখেন না। বরং তারা নিজের চেষ্টার মাধ্যমে বিবাহে নিজের ভূমিকা বা মর্যাদা উন্নতি করতে চান। অন্য দিকে নতুন প্রজন্মের লোকজনের জীবনের ধারণা আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাদের চোখে বিয়ে আর জীবনের প্রয়োজনীয় অংশ নয়। যেমন জাপানিদের তরুণ তরুণীদের মতে, বিয়ে যেন জলখাবারের মত, তারা নিজের মূল্য বাস্তবায়নে আরো বেশি গুরুত্ব দেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040