Web bengali.cri.cn   
মালদ্বীপে চীনের বসতবাড়ি প্রকল্প: আবাসন সঙ্কট কমিয়েছে চীন
  2014-10-10 14:59:34  cri

প্রিয় শ্রোতা, মালদ্বীপের দ্বিতীয় বড় হুলহুমালে দ্বীপে দেশটির ইতিহাসে বৃহত্তম বসতবাড়ি প্রকল্প নির্মাণ করেছে চীন। মালদ্বীপের রাজধানী মালের কিছু অংশের অধিবাসীদের জন্য তাদের বসবাসের পরিবেশ উন্নত করার প্রত্যাশা নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি চীনের জন্য প্রকল্পটি একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ এ ধরনের প্রকল্প ভবিষ্যতে চীনা কোম্পানির বৈদেশিক প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ ও কাজের সুযোগ এনে দেবে। বিস্তারিত পরিস্থিতি জানাচ্ছেন মালদ্বীপে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বিশেষ সংবাদদাতা লিউ ছিং।

সূর্য এবং সাদা সৈকতের কারণে মালদ্বীপ 'পৃথিবীর স্বর্গে'র সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু রাজধানী মালেতে কিছুক্ষণের বেশি থাকলে, সম্ভবত অন্য এক ধরনের ছাপ মনের ওপর পড়বে। সংকীর্ণ সড়ক, চেঁচামেচি, জনসমাগম এবং ঘন ঘন গা ঘেঁষা বাড়িঘর। কারণ এক লাখেরও বেশি মানুষ ১.৯ বর্গ কিলোমিটারেরও ছোট দ্বীপে থাকে। আসলে, মালে হচ্ছে বিশ্বের জনসংখ্যার ঘনত্বে শীর্ষস্থানীয় রাজধানীগুলোর মধ্যে অন্যতম। মালের বাসভবন ও পরিবহন চাপ কমানোর জন্য ২০০৮ সালে মালদ্বীপ সরকারের সঙ্গে চীন সরকার এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী মালদ্বীপের মানুষের জন্য চার হাজার বাসভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নেয় চীন। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে, প্রথম দফায় হুলহুমালে দ্বীপে এক হাজার বাসভবন তৈরি শুরু হয়। ৩৯ বছর বয়সী হুসেইন শিয়া এবং তাঁর পরিবার ঠিক সে সময় তাদের দুই বেডরুমের সঙ্গে তিনটি কক্ষ নতুন বাসায় বসবাস করেছেন। তিনি বলেছেন, এখানে আসার প্রায় এক বছর। তিনি এবং তাঁর পরিবার সদস্য মনে করেন, আগে মালেতে থাকার চেয়ে এখনকার বসবাস পরিবেশ বিরাট উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন,

আমাদের মনে হয়, এখানে বসবাস করা খুবই আরামদায়ক। কারণ, আগে মালেতে থাকার বাসাটি ছিল খুব ছোট। এখানে আসার পর, শিশুদের খেলার জায়গা বড় হয়েছে। এসবই চীনের ডিজাইন ও ধারণা। আমাদের খুবই আরামদায়ক মনে হয়।

হুলহুমালে দ্বীপ হচ্ছে মালদ্বীপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। স্থানীয় ফেরি বা লঞ্চে করে রাজধানী মালেতে যেতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। মালদ্বীপ বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে করে ১৫ মিনিটেরও কম দেখা যায় হুসেইন শিয়া পরিবারের আবাসিক এলাকা। স্থানীয় অধিবাসীরা ৫৬টি ৪ তলার নতুন ইমারতকে 'চায়না টাউন' বলে ডাকে। এটা হচ্ছে দ্বীপের সবচেয়ে স্পষ্ট স্থাপত্যকর্ম। আসলে প্রকল্পটি মালদ্বীপের ইতিহাসে বৃহত্তম আবাসিক হাউজিং প্রকল্প এবং মালদ্বীপে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের প্রথম বাণিজ্যিক সহযোগিতা প্রকল্প। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের ম্যানেজার, চীনের আন্তর্জাতিক প্রকৌশল ডিজাইন ও গবেষণা ইনস্টিটিউট লিমিটেড কোম্পানি বা সিএমআইই'র ওয়াং স্যুয়ানহো বলেছেন, প্রকল্পটি মালদ্বীপের অনেক মানুষের বসবাসের পরিবেশ উন্নত করেছে। তিনি বলেন,

মালে শুধু একটি দ্বীপ। সেখানে এক লাখেরও বেশি মানুষ রয়েছে। সেখানে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। সেখানে উন্নয়নের সুযোগ নেই বললেই চলে। হুলহুমালে দ্বীপটিকে সরকার বসবাস ও শিল্প দ্বীপ হিসেবে ব্যবহার করছে। যখন তাদের বসতবাড়ির সঙ্কট তৈরি হয়, ঠিক তখন আমাদের এ প্রকল্প শুরু হয়। মালদ্বীপে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ আছে। তার প্রায় ৭ হাজার মানুষ এখানে থাকে। বলা যায়, দেশটির পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ মানুষের বসবাসের পরিবেশ উন্নত করা হয়েছে।

ওয়াং স্যুয়ানহো বলেছেন, মালদ্বীপের পর্যটন সম্পদ বেশ সমৃদ্ধ হলেও স্থাপত্য কর্মের মানদণ্ডে এখানে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের অভাব আছে। প্রকল্পের এক পক্ষ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি থিয়ানকোং গ্রুপ কর্পোরেশন লিমিটেড অর্থাত্ সিটিএমসিসি'র সাংহাই ১৩ নির্মাণ লিমিটেড কোম্পানির হুয়াং ওয়েনলোং ব্যাখ্যা করে বলেছেন, প্রকল্পের প্রথম দফা নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তাদের প্রধান সমস্যা ছিলো কাঁচামাল সঙ্কট। তিনি বলেন,

মালদ্বীপে নির্মাণের জন্য মেঝে বা অন্য কোনো নির্মাণ-সামগ্রী কেনা যায় না। বলা যায়, ৯৫ শতাংশেরও বেশি উপকরণ চীন ও তৃতীয় কোনো দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে বালি ও নুড়ি ৪০ হাজার টনেরও বেশি মালবাহী জাহাজের মাধ্যমে চীন থেকে নেয়া হয়েছে। আর সে জাহাজটি ছিল মালদ্বীপের সমুদ্র বন্দরে আনলোড করা বৃহত্তম জাহাজ। এখানকার বন্দর পরিবহন ব্যবস্থাও খুব খারাপ। সহজে পোতাশ্রয়ে আসা যায় না। মূলত বজরার মাধ্যমেই মালামাল খালাস করতে হয়েছিলো।

হুয়াং ওয়েনলোং ব্যাখ্যা করেছেন, কাঁচামালের অভাব ছাড়াও দক্ষ নির্মাণ কর্মী পাওয়াও একটি বড় সমস্যা ছিলো। প্রথম পর্যায়ের কাজে চীন ৫ শতাধিক বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করেছে। তারা শতাধিক চীনা শ্রমিক ও প্রকৌশলীর সঙ্গে কাজ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে ঘটনাস্থলের জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং স্যুয়ান হো বলেন, তখন অনেক সংকটের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, ২০১৩ সালে গুণগত মান সম্পন্ন উন্নত এক হাজার বাড়িঘর মালদ্বীপ সরকারের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক মাস কম সময় লেগেছে। ওয়াং স্যুয়ানহো বলেন,  

এটা আমাদের প্রথম প্রকল্প। আমার মনে হয়, আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। কারণ, এক, এ দেশের ইতিহাসে কখনও এতো বড় মাত্রার বসতবাড়ি প্রকল্প ছিল না। আমাদের কাজের পরিসর তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। এক বারে এক হাজার সেট নির্মিত হয়েছে। দুই, আগে আমরা মূল্য নির্ধারণ করেছি। বলেছি, দু'বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে। কিন্তু আমরা শুধু ২৩ মাসেই তা শেষ করেছি। যা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক মাস কম। এটি তাদের জন্য ছিলো খুবই বিস্ময়কর।

পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার বসতবাড়ি প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। প্রথম পর্যায়ের চেয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের ১ হাজার ৫শ'টি বসতবাড়ি হুলহুমালে এবং অন্যান্য ৮টি দ্বীপে তৈরি করা হবে। নির্মাণের ধরন হবে প্রথম পর্যায়ের চেয়ে আরো বৈচিত্র্যময়। পাশাপাশি ছড়ানো ছিটানো দ্বীপগুলোতে বসতবাড়ি নির্মাণের আগে তার মান পরীক্ষা করা হবে। বিদেশের বুকে নির্মাণের অভিজ্ঞতার অধিকারী হুয়াং ওয়েনলোং মনে করেন, মালদ্বীপ বসতবাড়ি প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যময় নির্মাণ চীনের বিদেশী প্রকল্প নির্মাণের কাজে অন্য ধরনের এক অভিজ্ঞতা। প্রকল্পটির তৃতীয় পর্যায় নির্মাণ কাজ সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য আরো বেশি চেষ্টা ও মেধা বিনিয়োগ করতে হবে। এতে করে আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। তিনি বলেন,

বিদেশে স্থাপনা নির্মাণে আমাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক নির্মাণ কৌশল ওই পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। সে বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনা করতে হয়। নির্মাণ হওয়া অঞ্চলের পরিবেশের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। কারণ ওই পরিবেশে সম্পদ সরবরাহ করতে হয় এবং সেখানকার অপরিচিত শ্রমশক্তি ব্যবহার করতে হয়। আমরা যেটা সবচেয়ে বেশি করি, সেটা হচ্ছে আরো বেশি ব্যবস্থাপনা কর্মী দিয়ে গুণগত মান ও প্রযুক্তির ব্যবহার ঠিক রাখা। আমাদের প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তি এখানে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করবে কি-না তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040