Web bengali.cri.cn   
চীন-শ্রীলঙ্কা মৈত্রীর ভিত্তি স্থাপন করে অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা
  2014-09-19 18:24:35  cri

কলোম্বো দক্ষিণ বন্দর

১৬ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন ও শ্রীলঙ্কার সহযোগিতা ফলপ্রসূ ও দৃষ্টি আকর্ষণী হয়েছে। এবারের সফরে দু'দেশের নেতারা সে ক্ষেত্রের অধিকতর সহযোগিতা জোরদার নিয়ে বেশ কিছু মতৈক্যে পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাহলে শ্রীলঙ্কায় চীনা পুঁজির শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থানীয় অবকাঠামো নির্মাণে কী কী পরিবর্তন ডেকে এনেছে? শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন মহল কিভাবে এসব চীনা পুঁজির শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে খতিয়ে দেখে? এখন শুনুন সাংবাদিক হান চিয়ান ও শাও চিইয়াং'র রিপোর্ট।

চমত্কার! স্বপ্নের মতো! এখন কলোম্বো থেকে জন্মস্থান যাওয়া ঘন্টাখানেকের মতো। আগে ছিল অর্ধেক দিন!

চলতি বছরের প্রথম দিকে চালু হওয়া এক্সপ্রেস সড়কপথ সম্পর্কে সুচিথ গুনারাথনা বেশ আনন্দিতভাবে এ কথা বলেছেন।

তিনি হচ্ছেন কলোম্বো সফ্‌টলজিক (Softlogic) কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার। তাঁর উল্লিখিত এক্সপ্রেস সড়কপথটি শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় এক্সপ্রেস সড়কপথের চতুর্থ পর্যায়ের প্রকল্প। চীন সরকার প্রকল্পের ঋণ দেয় এবং চীনা পুঁজির কোম্পানির প্রকল্প নির্মাণ করে।

২০০৯ সালের মে মাস, শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ শেষ হয়। তখন দেশটির সবখানে পুনর্গঠনের প্রস্তুতিপর্ব চলেছে। ফলে চীনা পুঁজির শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো বিরাট সুযোগ পায়। অনেক চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠান শ্রীলঙ্কান বাজারে প্রবেশ করেছে। শ্রীলঙ্কার চাহিদা অনুযায়ী, এসব শিল্প-প্রতিষ্ঠানের পরিসেবা প্রধানত রাজপথ, পোতাশ্রয় ও জ্বালানি সম্পদসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে কেন্দ্রীভূত হয়। চীনে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত রাঞ্চিত উইয়াঙ্গদা মনে করেন, এসব অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে চীনা পুঁজির কোম্পানি শ্রীলঙ্কার যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তিনি বলেন,

চীনের কিছু বিখ্যাত নির্মাণ কোম্পানি শ্রীলঙ্কা আসায় খুব খুশী আমরা। চীনা কোম্পানি শ্রীলঙ্কার জন্য এক্সপ্রেস সড়কপথ, বিদ্যুত কেন্দ্র, পোতাশ্রয় ও বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এসব প্রকল্প উচ্চ মানদণ্ড ও উচ্চ গুণগত মান অনুযায়ী চালানো হয়। এছাড়া বিশ্বের অগ্রগতি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। চীনা পুঁজির কোম্পানি শ্রীলঙ্কায় উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

একটি দেশের অর্থনীতি ও একটি জীবন হিসেবে দেখলে, পরিবহন হচ্ছে সে জীবনের রক্তবাহী ধমনী। রাজপথ ও রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে চীনা পুঁজির কোম্পানি শ্রীলঙ্কার পরিবহন পরিস্থিতির উন্নতি করেছে এবং দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের এক্সপ্রেস সড়কের চতুর্থ পর্যায়ের প্রকল্প ছাড়া, শ্রীলঙ্কার প্রথম এক্সপ্রেস—কলোম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক্সপ্রেস সড়কের ঋণ ও নির্মাণও চীনের। সে এক্সপ্রেসের চালুতে বর্তমানে শ্রীলঙ্কার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলোম্বো শহর পর্যন্ত যাওয়ার সময় অনেক কমেছে এবং বিরাটভাবে শ্রীলঙ্কার পর্যটন ও পণ্য স্থানান্তর শিল্পের উন্নয়ন সুযোগ-সুবিধা করিয়ে দেয়। এ সম্পর্কে প্রকল্পের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনের ধাতব গ্রুপ কর্পোরেশন (এমসিসি)'র জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং জৌ ব্যাখ্যা করে বলেন,

বর্তমানে প্রতিদিন এক্সপ্রেসের ট্রাফিক প্রবাহ ১৫ হাজার। বিমানবন্দরে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষ এক্সপ্রেসে করে যাতায়াত করতে চায়। কারণ এতে সময় অনেক কম। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে, আমার মনে হয়, ৫ থেকে ১০ বছর পর এক্সপ্রেস তার ক্ষমতা হারাবে।

শ্রীলঙ্কার শ্রী জায়াওয়ারাতানাপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক আমারাটঙ্গার মতে, এক্সপ্রেস সড়কের নির্মাণ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়াও দেশের জাতীয় সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন,

এক্সপ্রেস থাকলে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক পুঁজি, পর্যটন, বাণিজ্য, শিল্প ও জীবিকার দ্রুত উন্নয়ন হবে। এছাড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভবিষ্যতে সারা দেশের এক্সপ্রেস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠা গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত দূরত্ব কমবে, সেটা দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের অনুকূল হবে। এটা সিংহলি ও তামিল দু'টো জাতির মধ্যে যোগাযোগ বাড়াবে।

শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান অদ্বিতীয়। ভারত মহাসাগরে গমন পথের কণ্ঠনালীতে এক প্রাকৃতিক বন্দর। সুতরাং এ দেশটিতে চীনের সহায়তার এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বিখ্যাত হামবানতোতা বন্দরের প্রকল্প বর্তমানে চীনের সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্প শেষ হবার পর এটি ভারত মহাসাগরে যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে পরিণত হবে এবং শ্রীলঙ্কার শুল্ক আয় বাড়বে। শ্রীলঙ্কার বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ওয়েক্রামা ব্যাখ্যা করে বলেন,

হামবানতোতা প্রকল্পের পেছনে দুই দফায় ১১০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। পাশাপাশি চীন সেখানে দু'টো বৃহত্ শিল্প পার্ক নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বলা যায়, চীন হামবানতোতা বন্দর প্রকল্প সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে।

বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগের নতুন শক্তি হিসেবে শ্রীলঙ্কায় চীনা পুঁজির শিল্প-প্রতিষ্ঠানের পুঁজি ও নির্মাণকাজ প্রশংসা অর্জনের পাশাপাশি সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছে। পুঁজি বিনিয়োগ ও ঋণ দিয়ে চীন পরোক্ষভাবে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে যা সরকারের আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। তবে, ওয়েক্রামা দৃঢ়ভাবে সেটাকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,

হামবানতোতা বন্দর তৈরির জন্য চীন অনেক বড় আকারের পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। পুঁজি বিনিয়োগের সঙ্গে পুঁজির রিটার্নও জড়িত। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান এর ব্যতিক্রম না। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এখান থেকে চীনারা যে আয় করেছে তাই নয়, আমরাও অনেক কল্যাণ পেয়েছি। বন্দর, শিল্প পার্ক ভবিষ্যতে এসব হবে আমাদের। এছাড়া চীনারা এখানে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং অনেক শ্রীলঙ্কানের কর্মসংস্থান হয়েছে।

গত বছরের মে মাসে শ্রীলঙ্কার অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—কলোম্বো দক্ষিণ বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। পুরো বন্দরটি চীনের বিনিয়োগে তৈরি। এটা হচ্ছে এ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম একক বৈদেশিক পুঁজির প্রকল্প। এতে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। কলোম্বো দক্ষিণ বন্দরের কন্টেইনার জাহাজঘাটের আর্থিক মহা-তত্ত্বাবধায়ক সুন লিকান বলেছেন, জাহাজঘাটার প্রতিষ্ঠা স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন,

আমাদের প্রকল্পের চুক্তির মেয়াদ ৩৫ বছর। ব্যবস্থা ও নিরূপণ অনুযায়ী, চুক্তির মেয়াদে সরাসরি কর পাওয়া যাবে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার। পাশাপাশি প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা স্থানীয় মেধাশক্তি প্রশিক্ষণের ওপর বেশ গুরুত্ব দেই। অনেককেই চীনে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। স্বদেশে ফেরার পর তারা নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করবে। জাহাজঘাট ব্যবহারের হার উন্নত হওয়া এবং মাল বোঝাই ও খালাসের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গভীর পানি বন্দর হিসেবে, বিশ্বের বৃহত্তম কন্টেইনার কলোম্বোর দক্ষিণ বন্দরে নোঙর করতে পারে। বড় জাহাজ নোঙরের জন্য চীনা নির্মাতারা আড়াই বছর ধরে প্রকল্প সম্পন্ন করেছেন। নির্মাণের সময় অনেক কমে গেছে, কলোম্বোর দক্ষিণ বন্দরকে আঞ্চলিক নৌপরিবহন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে সুন লিকান মনে করেন, সমৃদ্ধ নির্মাণ ও প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতা হচ্ছে শ্রীলঙ্কায় চীনা কোম্পানিগুলোর সুনাম অর্জনের প্রধান উপাদান। তিনি বলেন,

আমাদের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা ও পূর্ণাঙ্গ নেটওয়ার্ক আছে। কলোম্বোর জন্য কিছু পরিপক্ব ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি এবং সুষ্ঠু সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

রাজপথ ও বন্দর ছাড়া, চীনা পুঁজির কোম্পানি ইতিবাচকভাবে শ্রীলঙ্কার রেলপথ, জ্বালানি সম্পদ, জলসেচ ও হাসপাতালসহ অনেক অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। প্রেসিডেন্ট সি'র এবারের সফরে চীন ও শ্রীলঙ্কার অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন ধারা উন্মোচন হবে এবং দু'দেশের সম্পর্ক নতুন উন্নীত হবে বলে আশা করছে সবাই।

প্রেমা

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040