Web bengali.cri.cn   
কিভাবে নিজের মনকে সুদৃঢ় করা যায়?
  2014-10-02 16:16:53  cri


আমাদের প্রিয় এ পৃথিবীতে আছে দুঃখ, আছে হতাশা। আবার এ থেকে মুক্তির উপায়ও আছে। আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছেন যারা দুঃখ, কষ্ট আর নির্মমতাকে জয় করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এ পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয় যার সব দুঃখ, কষ্ট আর নির্মমতাকে জয় করে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন রচনা করে আসছে। আপনি ভাবুন, যদি এই সব সফল মানুষ যদি মনের দিক থেকে অত্যন্ত দৃঢ় না হতো, তাহলে তারা কি করে কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবিলা করতো ? হ্যাঁ শ্রোতাবন্ধুরা বিশ্বে এ ধরণের শক্ত মনের মানুষের সংখ্যা কম নয়। এঁরা নিজের চিন্তা, বিচার-বুদ্ধি-বিবেচনার ওপর আস্থা রাখেন বলেই সবসময় আনন্দময় আর বৈচিত্র্যময় একটি জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রিয় শ্রোতা, এবারে নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন তো- আপনার মন কি সহজেই ভেঙ্গে পড়ে, দুর্বল হয় ? আপনি কি দৃঢ় ও শক্তিশালী মনের অধিকারী? শ্রোতাবন্ধুরা চলুন তাহলে আজকের এ অনুষ্ঠানে, কিভাবে নিজের মনকে সুদৃঢ় করা যায়, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

আর এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞদের দেয়া বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরবো। এ পরামর্শগুলো আপনারা কাজে লাগালে হয়তো এক সময় দৃঢ় মনের অধিকারী হতে পারবেন। প্রথম কথাটিই হলো,

মাঝে মাঝে আপনাকে নিশ্চুপ থাকতে হবে।

কথায় আছে, কম কথা বলা বুদ্ধিমানের লক্ষণ। অর্থাত্ যে কোনো ইস্যুতে বা যে সব বিষয়ে কথা না বললেও চলবে, সে সব বিষয়ে কথা বলা। বাংলায় একটি কথা আছে, যে চুপ রইলো সে মুক্তি পেলো। আমরা অযথাই অন্যের সমালোচনা করি। অন্যের সমালোচনা বন্ধ করুন। দেখবেন আপনার মন ধীরে ধীরে প্রফুল্লও দৃঢ় হয়ে উঠবে। কেননা আপনি যত কম কথা বলবেন এবং যেটা করা ও বল প্রয়োজনীয় নয়, সেটা কম বললে আপনার ভুলের পরিমাণ কমবে। এটা আপনার মনকে দৃঢ় ও শক্তিশালী আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

এরপরের বিষয়টি হলো, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়া এবং এর ফলাফল মেনে নেয়া।

যে কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে, আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অর্থই হচ্ছে সেখানে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই সফলতা এবং ব্যর্থতা দুটোর জন্যই আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি ব্যর্থ হন, তাহলে এর জন্য অনুতাপ বা অনুশোচনা করবেন না। কারণ, সফলতা ও ব্যর্থতা আমাদের জীবনেরই অংশ। হ্যাঁ, ব্যর্থতার পরিণামে মন খারাপ হতে পারে, কিন্তু এজন্য অনুতাপ বা অনুশোচনা থাকা উচিত নয়। কারণ সেটি ছিলো, আপনার নিজের সিদ্ধান্ত। অনুশোচনা বা অনুতাপকে যত বেশি প্রশ্রয় দেবেন, তা আপনাকে ততোই গ্রাস করবে। তাই, নিজ সিদ্ধান্তে পথ চলুন, দৃঢ় থাকুন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। অনেকের সঙ্গে পরামর্শও করতে পারেন। কিন্তু কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও দায়িত্ব, দুটোই আপনার। এভাবে করতে পারলে, আপনার মানসিক শক্তি অনেক দৃঢ় হবে।

এরপরের বিষয়টি হলো, কষ্টকর অতীতের কথা ভুলে থাকা। যে ঘটনা ভুলে যেতে পারলে জীবন চলার পথ সহজ হবে, সে ঘটনা ভুলে যাওয়া উচিত। এতে মন সুস্থ, সবল ও প্রফুল্ল থাকবে।

প্রায়ই দেখা যায় যে, মহিলারা অতীতের দুঃখ ও যন্ত্রণার স্মৃতি ভুলতে পারেন না। যারা বেশি আবেগপ্রবণ হন, তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের কষ্ট দিয়ে থাকেন। দিনের পর দিন তাদের এ ধরণের আচরণ তাদের নিজেদের মনকেই দুর্বল করে দেবে, এতে তারা আর সামনে এগিয়ে যেতে পারেন না। এক অদৃশ্য পিছুটানে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকে যান।

মনে রাখবেন যারা আপনার কথা ভাবেন, তারাই আপনার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে বা যারা আপনাকে কষ্ট দিয়েছেন, তাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেন তারা, যারা আপনার কথা চিন্তা করেন। আপনার ভালো চান। তাদেরকে মূল্যায়ন করুন। আপনার অতীতের সুন্দর ঘটনাগুলোর কথা মনে রাখুন। যে ঘটনাগুলো আপনার সামনে চলার পাথেয়, সেগুলোকে সযত্নে আগলে রাখুন। তাই সেই স্মৃতিগুলোকে সঙ্গে রাখুন, যে আপনার স্মৃতিবন্ধু। যে স্মৃতি আপনার এগিয়ে যাওয়া পথে বাঁধা, তাকে বর্জন করুন। স্মৃতি হোক আপনার জীবনপথের চালিকাশক্তি। এভাবে আপনি ধীরে ধীর বেশ শক্তিশালী মনের মানুষ হিসেবে এগিয়ে যেতে পারবেন।

এরপরের বিষয়টি হলো, স্বাধীনভাবে থাকুন আর খেয়াল করে কথা বলুন। কখনো আপনার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির আর নিজের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে আপোষ করবেন না।

প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে নিজস্ব মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি আর মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এটিই তারই বৈচিত্র্য, এটাই তার ব্যক্তিত্ব। অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কারণে নিজের মূল দৃষ্টিভঙ্গিকে থেকে সরে আসি বা অন্যকে সরে আসতে বাধ্য করি। এটা আসলে ভালো নয়। এতে নিজের ওপর মানসিক চাপ বেশি পড়ে। সাধারণত পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মন বেশ নরম হয়ে থাকে। তারা মাঝেমধ্যে তার প্রেমিক অথবা প্রিয়জনের জন্য নিজের মূল দৃষ্টিভঙ্গির কথা ভুলে যান বা কম গুরুত্ব দেন। এই ধরনের আপোষের কারণে আপনার নিজস্ব মানসিক শক্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে। পরিণামে আপনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন। মনকে শক্ত রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কোন বিষয়ে এক গুঁয়েমি বা একরোখা আচরণ করা চলবে না। আপনার আচরণ হতে হবে যৌক্তিক ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। সঠিক যুক্তির কাছে মাথা নত করার মানসিকতা আপনার থাকা উচিত। এবং এটাই আপনার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। আর এ ধরনের নীতি আপনাকে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করা থেকে বিরত রাখবে। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে এবং আপনার মৌল নীতির প্রতি অটুট থাকতে সহায়তা করবে। অন্যের চোখে আপনি হয়ে উঠবেন ব্যক্তিত্ববান ও দৃঢ় মনের মানুষ। এক অদৃশ্য শক্তিতে আপনি হয়ে উঠবেন বলীয়ান।

এরপর আপনি আপনার প্রিয়জনদের নিঃশর্তভাবে উপহার সামগ্রী দিতে পারেন।

নি:শর্ত বলছি এ কারণে যে, আপনি অবশ্যই কোন উপহারের বিনিময় আশা করবেন না। এটা হবে স্রেফ আপনার মানসিক প্রশান্তির নিদর্শন। এতে তার বা তাদের পক্ষ থেকে বিনিময় না পাওয়ার কষ্ট থেকেও আপনি রেহাই পাবেন। আর নি:শর্তভাবে দিতে পারাটা অনেক বড় মানসিকতার পরিচায়ক। আপনি নিজেকে সেই পর্যায়ে উন্নীত করুন। এটি আপনার মানসিক শক্তি বিকাশে সহায়ক হবে। আপনার উপহার একেবারেই মূল্যহীন, তা কিন্তু নয়। আপনার প্রিয়জনদের চোখে আপনি অনেক সম্মানিত ও মর্যাদাবান হবেন। তারা আপনাকে অনেক সম্মানের দৃষ্টিতে দেখবে। বন্ধুরা, তাহলে ছোট হলেও, প্রিয়জনদের উপহার দেয়া শুরু করুন। দেখবেন, এটা আপনার মনকে অনেক প্রশান্তি দেবে। আপনার নিজেকে অনেক বড় মনের মানুষের মত প্রশান্তি অনুভব করবেন। মনের প্রফুল্লতা ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে, যা আপনার মনকে দৃঢ় করতে সহায়ক হবে।

সবশেষ বিষয়টি হলো, প্রফুল্ল ও আশাবাদী মন সফলতার চাবিকাঠি।

হ্যাঁ বন্ধুরা, আপনার মন আপনাকে পরিচালিত করে। তাই এ মন যদি হয় প্রফুল্ল, আশাবাদী এবং কর্মক্ষম, তাহলে আপনার সফলতা প্রায় সুনিশ্চিত। নিজেকে একজন মিস্টভাষী, হাসিখুশি, আনন্দময় অধিকারী মানুষ হিসেবে তৈরি করুন। এ ধরনের মানুষ সহজেই আর আরও বেশি বন্ধু আকর্ষণ করতে পারে। আনন্দ ও দুঃখময় আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই ইতিবাচক চিন্তা করুন, আস্থাবান ও আশাবাদী হোন এবং আর আনন্দময় মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করুন। আপনি নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন, আনন্দময় ও উষ্ণ মন দিয়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে মেলা-মেশা করলে, অচিরেই আপনার কাছের মানুষও আনন্দময় আর আশাবাদী হয়ে উঠবেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040