910
|
'সূর্য গ্রামের' প্রতিষ্ঠাতা ছাং সু ছিন
চীনে জেলের কয়েদিদের ছেলেমেয়ের লালনপালন বরাবরই আলোচ্য একটি বিষয়। বর্তমানে এ শিশুদের লালনপালন সম্পর্কিত কোনো আইন নেই এবং এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বও সুনির্দিষ্ট নয়। এ প্রেক্ষাপটে জেলখানায় বন্দীদের সন্তানদের লালানপালন সমস্যা সমাধানের জন্য চীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে 'সূর্য গ্রাম'। পেইচিং শহরের সুন ই অঞ্চলে অবস্থিত 'সূর্য গ্রাম' একটি বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। গত ২০ বছরে 'সূর্য গ্রাম' বিনামূল্য ৬ হাজারেরও বেশি কয়েদির ছেলেমেয়েদের লালনপালনের দায়িত্ব পালন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি শিশুদের বিশেষ শিক্ষা, মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধীয় পরামর্শ ও কর্মবৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং তাদের অধিকার রক্ষা করে। এখানে শিশুরা অন্য দশটা শিশুর মতোই শান্ত ও উষ্ণ পরিবেশে মানুষ হতে পারে; পেতে পারে নিরাপত্তা।'সূর্য গ্রাম' অন্য দশটা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভিন্ন। 'সূর্য গ্রাম' শুধু অনুদানের উপর নির্ভর করে না। এখানে আশ্রয় পাওয়া ছেলেমেয়েরা নিজেরা বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম সৃষ্টি করে থাকে। এসব শিল্পকর্ম বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানের বেশ দু'পয়সা আয় হয়। এর ফলে, এসব ছেলেমেয়ে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে বড় হচ্ছে; নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর দিক্ষা নিচ্ছে।
'সূর্য গ্রামের' প্রতিষ্ঠাতা ছাং সু ছিন। তিনি কারাগারে দশ বছরের মতো কাজ করেছেন। সেসময় তিনি কয়েদিদের সঙ্গে মিশবার সুযোগ পেয়েছেন। তার মতে কয়েদিদের সন্তান অনাথদের চেয়ে ভিন্ন এবং বিশেষ একটি গ্রুপ। তাদের অনেকেই বয়সে ছোট এবং তাদের নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় বেশি। বাবা-মার অপরাধ অনেক সময় তাদের ওপর মানসিক চাপ ফেলে এবং সমাজের কাছ থেকে নেতিবাচক আচরণ পেলে তারা সহজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ছাং সু ছিন বলেন- "সমাজে এ শিশুরা বৈষম্যের শিকার এবং এ বিষয়ে সরকারি কোনো নীতিও নেই। এ কারণে তাদের মনে সমাজের প্রতি ঘৃণা জন্মানো এবং পরিণতিতে তাদের পক্ষে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। এরা অনাথদের চেয়ে ভিন্ন, কারণ তাদের মানসিক সমস্যা আছে এবং তারা ভবিষ্যতে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির মধ্যে বড় হয়।"
শিশুদের মানসিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে 'সূর্য গ্রামে' নিয়মিত বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যেমন, শিশুদের সঙ্গে তাদের বাবা-মার সাক্ষাতের ব্যবস্থা, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ ইত্যাদি। ছাং সু ছিন বলেন- "আমাদের শিক্ষকরা প্রতিবছর মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন এবং আমরা কয়েকটি মানসিক রোগের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখি।"
অন্য দশটা শিশুর মতো জীবন গড়তে কয়েদিদের সন্তানদের মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে 'সূর্য গ্রাম'। যখম প্রথম 'সূর্য গ্রাম' প্রতিষ্ঠা করেন তখন ছাং সু ছিন ভেবেছিলেন, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কয়েদিদের পুনর্বাসন করতে পারবেন এবং তাদের শিশু-সন্তানদের সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে বড় হতে সাহায্য করতে পারবেন। 'সূর্য গ্রাম' শুধু এসব শিশুর বর্তমান সমস্যা নিয়েই ভাবে না, তাদের ভবিষ্যত জীবন এর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২০ বছর আগে, কয়েদি ও কয়েদিদের শিশু-সন্তানদের সাহায্য দেয়ার জন্য ছাং সু ছিন সান সি প্রদেশে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন, যেটি ছিল 'সূর্য গ্রামের' পূর্বসুরী। তিনি একটি কাপড়ের দোকান ও একটি মোটর-সাইকেল মেরামত কারখানা খোলেন এবং সেখানে কারাদণ্ড ভোগকারী ও তাদের শিশু-সন্তানদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। তবে পর্যাপ্ত অর্থ ও অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে তার সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
২০০০ সালে পেইচিংয়ে জমি লিজ নিয়ে ফসল চাষ করার উদ্যোগ নেন ছাং সু ছিন। তিনি ভেবেছিলেন, ছোট-বড় সকল বয়সী মানুষেরই উচিত পরিশ্রম করা। ২০০২ সাল থেকে তিনি কুল,বাঁধাকপি ও মুলা চাষ করতে শুরু করেন। পরে তিনি 'সূর্য গ্রামে' সাহায্য দানকারী ব্যক্তিদের সপরিবারে তার ফার্মে নিমন্ত্রণ করে আনতে শুরু করেন। এসব পরিবার গ্রামীণ পরিবেশে কিছুটা সময় উপভোগ করতে পেরে আনন্দ পান। 'সূর্য গ্রাম' তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে।
ছাং সু ছিন বলেন, "আগে আমি শুধু পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করতাম। পরে আমাকে লোকে বলল, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি আসলে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তখন থেকেই আমি সামাজিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কিছু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি।"