Web bengali.cri.cn   
প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের ১০টি নীতি
  2014-09-04 19:52:58  cri


ক্যান্সারের নাম শুনে ভয় পান না, এমন লোক আশা করি নেই। আমরা সবাই ক্যান্সারের কথা শুনলে আঁতকে উঠি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছিলো, ভবিষ্যতে সারা বিশ্ব ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ২০৩৫ সালে সারা বিশ্বে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখে দাঁড়াবে, যা বিদ্যমান ১ কোটির চেয়ে অনেকে বেশি। কিন্তু পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, এখন থেকেই সবাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ক্যান্সার প্রতিরোধ করা বিশ্বজুড়ে ক্যান্সার মোকাবিলার প্রধান উপায়। প্রিয় শ্রোতা, ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটি খুবই ভাল খবর। গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধক কিছু খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের ১০টি নীতির কথা জানিয়ে দেবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক আজকের অনুষ্ঠান।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য থাকা উচিত:

 আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় খাবারের বৈচিত্র্য থাকা উচিত। প্রতি বেলার খাবারের তিন ভাগের দু'ভাগ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি থাকা উচিত। তাজা শাকসবজি, ফলমূল, মটরশুঁটি জাতীয় খাবার এর আপনার তালিকায় থাকা উচিত।

ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত

ওজন বেশি বা কম থাকা উচিত নয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওজন নির্দিষ্ট থাকা ভালো। নির্ধারিত ওজনের চেয়ে কোনোভাবেই ৫ কেজির বেশি বাড়ানো ঠিক নয়। কারণ বেশি মোটা হলে এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেড়ে যায়।

কখনও দগ্ধ বা পোড়া খাবার না খাওয়া

কাবাব জাতীয় খাবার দগ্ধ হলে বা বেশি পুড়ে গেলে কখনোই খাবেন না। সরাসরই আগুনে পোড়ানো কাবাব বা অন্য কোন খাবার একেবারেই কম খাবেন। তিন বেলার খাদ্যাভ্যাসে বেশি করে সিদ্ধ, বাষ্প করা খাবার খাওয়া উচিত।

আলু, মিষ্টি আলুসহ অনমনীয় খাবার খান

প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০থেকে ৮০০ গ্রাম শস্য ও শিম জাতীয় খাবার খেতে পারেন। এসব খাদ্যশস্য যত সম্ভব: কম প্রক্রিয়া করা উচিত। শস্য ও শিম জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে শর্করা।

শর্করা কোলন এবং কলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। অনেকে বলেন যে, মাড় ও মিহি চিনি মোটামুটি একই উপাদান। আসল, তা ঠিক নয়। মিহি চিনি বেশি খেলে নানা সমস্যা হতে পারে। সেজন্য মিহি চিনি খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া উচিত।

বেশি করে শাকসবজি ও ফল খান

প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম সবজি ও ফল খাবেন। এতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২০ ভাগ কমে যাবে। প্রতিদিন পাঁচ বা এর বেশি ধরণের শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

মদ ও সিগারেট খাওয়া বন্ধ করুন

প্রতিদিন মদ ও সিগারেট খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বাড়ে। চিকিৎসকরা বলেন, যাদের মদের নেশা রয়েছে, তারা একবারে পান বন্ধ করতে না পারলে, ধাপে ধাপে বন্ধ করুন। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন এক কাপ (বা ২৫০ মিলিলিটার বিয়ার, ১০০ মিলিলিটার রেড ওয়াইন এবং ২৯ মিলিলিটার চায়না ওয়াইনের বেশি না খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত মদ পান করলে মুখের ক্যান্সার, গলার ক্যান্সার ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যাবে। আর সিগারেট তো কখনোই খাওয়া উচিত নয়। আপনার এ বদ অভ্যাস থাকলে ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য এখনই সিগারেট বন্ধ করে দিন।

খাদ্য তালিকায় লাল মাংসের পরিমাণ কমিয়ে দিন

প্রতিদিন লাল মাংস বা রেড মিটের পরিমাণ ৯০ গ্রামের বেশি থাকা উচিত নয়। এর পরিবর্তে মাছ, মুরগী ও হাঁসসহ বিভিন্ন সাদা মাংস খেতে পারেন। লাল মাংসের কারণে কোলন এবং কলোরেক্টাল ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি উচ্চ চর্বি খাদ্য, বিশেষ করে পশুর ফ্যাট যুক্ত খাবার থেকে সাবধান থাকা উচিত। অলিভ ওয়েল বা জলপাই তেল, সরিষার তেলসহ অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করা ভালো।

অতিরিক্ত লবণ ও মসলাজাতীয় খাবার না খাওয়া ভালো

অতিরিক্ত কাঁচা লবণ অথবা লবণ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এসব বেশি খেলে পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন ৬ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।

ঘরের তাপমাত্রায় দীর্ঘসময় ফেলে রাখা খাবার না খাওয়া

তিন বেলায় উপযুক্ত পরিমাণে রান্না করা ভালো। বেলা শেষে অতিরিক্ত খাবার রেখে দিয়ে তা পরবর্তীতে আবারও খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। অথবা তা ফ্রিজের ঠাণ্ডায় সংরক্ষণ করতে পারেন। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় রেখে দেয়া খাবারের উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। তাই সেগুলো পরবর্তীতে খাওয়া ঠিক না।

প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করা

প্রতিদিন আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত। দ্রুতগতিতে হাঁটাহাঁটি করা বা এ রকম অন্য কোনো বয়ামও করতে পারেন। তবে সাবধান! অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না। কারণ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না।

ক্যান্সার রোগ সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সবাই সচেতন। আসুন, আমরা সবাই মিলে সচেতন হয়ে উঠি। নিজ নিজ দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠি। তাহলে, মরণঘাতি এ রোগকে সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040