

অষ্টাদশ 'পশ্চিম-পূর্ব সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলন' এবং 'রেশমপথ আন্তর্জাতিক মেলা' গত ২৬ মে চীনের সিআন শহরে শেষ হয়েছে। চার দিনের ওই রেশমপথ মেলায় চীনের বিভিন্ন প্রদেশের ব্যবসায়ীরা বিদেশিদের সাথে পাঁচ শতাধিক কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের প্রকল্পচুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়া, মেলায় চীনের অভ্যন্তরীণ যে সব প্রকল্পচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলোর আর্থিক মূল্য ৯০,০০০ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি। উল্লেখ্য, এ মেলা রেশমপথসংলগ্ন দেশ ও অঞ্চলগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করার এবং যৌথভাবে রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
এবারের 'পশ্চিম-পূর্ব সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলন' এবং 'রেশমপথ আন্তর্জাতিক মেলা'র প্রতিপাদ্য ছিল: 'উন্মুক্ত সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা, অভিন্ন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা'। ৭৭টি দেশ ও অঞ্চলের ৬৭৪টি প্রতিনিধিদল এবং ১৮০০ জন বিদেশি প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেন।
মেলার আয়োজক সংস্থা চীনের বাণিজ্য অগ্রসর সমিতির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন প্রকল্প ম্যানেজার ইয়ান জুন বলেন, "এবারের রেশমপথ আন্তর্জাতিক মেলায় ৩৫টি দেশ অংশ নিয়েছে। তাদের জন্য আমরা ১৬টি জাতীয় প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেছি। এ দেশগুলো মূলত রেশমপথসংলগ্ন। তারা এখানে মূলত নিজেদের জাতীয় প্রতীক, বিনিয়োগের পরিবেশ, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পণ্য এবং সাংস্কৃতিক ও পর্যটন স্থান প্রদর্শন করেছে।"
কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তুর্কমেনিস্তানসহ কয়েকটি মধ্য-এশীয় দেশ এই প্রথম রেশমপথ মেলায় অংশ নেয়। তারা চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সহযোগিতা প্রকল্প নিয়ে আসে। তারা আশা করছে যে, এ মেলার মাধ্যমে সহযোগী অংশীদার খুঁজে পাবে। তুর্কমেনিস্তানের বণিক সমিতির আমিরগুলায়েভ গপুর এই প্রথম সেদেশের বণিক সমিতির সদস্যদের নিয়ে রেশমপথ মেলায় অংশ নেন। তিনি বলেন,"রেশমপথ কেবল চীনে আছে তা নয়, সেটি আমাদের দেশের মধ্য দিয়েও গিয়েছে। তুর্কমেনিস্তান এ প্রকল্প সমর্থন করে। তাই আমরা এ মেলায় অংশগ্রহণের জন্য এসেছি। আমাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পণ্য হচ্ছে: কার্পেট, পোশাক এবং আখাল-টিক ঘোড়া। আমার মনে হয়, অধিকাংশ চীনা মানুষ এ পণ্যগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী হবেন।"
সিআন থেকেই শুরু হয়েছিল প্রাচীন রেশমপথের যাত্রা। রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দেশগুলোর পর্যটন, সংস্কৃতি, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পণ্য ও সেরা দ্রব্যের এই প্রদর্শনীটির আয়তন ছিল প্রায় ২ লাখ বর্গমিটার। এখানে রেশমপথের সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়েছে। ৩ লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী এখানে এসেছেন এবং প্রায় ৫ কোটি ইউয়ানের ব্যবসাচুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়া, ১৬ কোটি ইউয়ান মূল্যের সংকল্পপত্রও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তুরস্কের দোরাক-ইতির ব্যবসা-তথ্য পরামর্শ লিমিডেট কোম্পানি চীনে গত ছয় বছর ধরে তুরস্কের পর্যটন বিষয়ক প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এবার এ কোম্পানিও প্রথমবারের মতো সিআনে এসে প্রচার কাজ চালায়। এ কোম্পানির চীন অঞ্চলের প্রধান ব্যবস্থাপক মাদাম ফিলিজ কারাকা আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, "চীনের বাজার দিন দিন উন্নত হচ্ছে। তুরস্কে চীনা পর্যটকের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। গত বছর ১ লাখ ২০ হাজার চীনা পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণ করেছেন। তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ব্যাপারে তাদের আগ্রহ আছে। তুরস্কে প্রাচ্যের সংস্কৃতি আছে এবং ইউরোপের সংস্কৃতিও আছে। চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্স উরুমুছি থেকে তুরস্কে যাওয়ার সরাসরি ফ্লাইট চালু করার পর চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের আশা, সিআনের পর্যটন সংস্থাগুলো তুরস্কের পর্যটনসম্পদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবে। এ জন্য আমরা এখানে এসেছি।"
হাসান ইরানের ইসফাহানের একজন কার্পেট নির্মাতা। তিনি জানান, চীনের অর্থনীতি দীর্ঘকাল ধরে দ্রুত বিকাশের ধারা বজায় রেখেছে। রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণা তার মতো অনেক ব্যবসায়ীর জন্য সুযোগ এনে দেবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, "এটা অত্যন্ত ভালো এক প্রদর্শনী। সিআন ও ইরানের মধ্য দিয়ে রেশমপথ গেছে। আমরা এ শহরে কাজ করতে পছন্দ করি। এখন আরো বেশি চীনা লোক পারস্যের কার্পেট পছন্দ করছেন। আমরা চীনা কোম্পানির সাথে সহযোগিতা করতে চাই।"
নেপালের ব্যবসায়ী প্রদীপ হস্তশিল্পজাত পণ্যের ব্যবসা করেন। তিনি চীনে ব্যবসা করছেন চার বছর ধরে। তিনি জানান, চীনা কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ খোঁজা হচ্ছে তার এবারের মেলায় অংশ নেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, "আমরা নেপালের একটি হস্তশিল্পজাত পণ্যের কোম্পানি। আমাদের কোম্পানি হস্তশিল্পজাত দ্রব্য ও অলংকার তৈরি করে। সব পণ্য হাতে তৈরি। চীনে হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের খুব ভালো বাজার আছে। অনেক চীনা লোক আমাদের পণ্য পছন্দ করেন। আমরা এখানে এসেছি চীনা কোম্পানিগুলোর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ খুঁজতে।"
এবার চীনের 'পশ্চিম-পূর্ব সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলন' এবং 'রেশমপথ আন্তর্জাতিক মেলা' সিআনের ছুচিয়াং আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র, সিআন দাথাং পশ্চিম বাজার, সিআন হুয়ানান নগর এবং শেনশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পদ পরিকল্পনা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। মেলাস্থলের আয়তনের বিচারে এবারের মেলা ছিল এর আগের মেলার তিনগুণ বড়। এ মেলায় রেশমী কাপড়, সূচিকর্ম, চা-পাতা, হার্ডওয়্যার, চামড়ার তৈরি পণ্য, পোশাক, খাদ্যসহ প্রায় দশ হাজার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পণ্য প্রদর্শিত হয়েছে। মেলা পরিদর্শনে আসা দর্শকরা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণাও লাভ করেছেন। (ইয়ু/আলিম)

| ||||



