Web bengali.cri.cn   
বর্তমান সময়ে পরিবারে বাবার ভূমিকা
  2014-08-12 08:43:18  cri



প্রথমেই আমরা ভারতে যাবো। দেখবো ভারতের একটি সাধারণ পরিবারে বাবা কি কি ভূমিকা পালন করেন।

লাভি হলেন মুম্বাই-এর একটি রিয়্যাল এস্টেট কোম্পানির একজন ম্যানেজার। তার জন্মস্থান ব্যাঙ্গালুরুতে। তার বাবা অনেক আগেই মুম্বাই-এ কাজ করতে শুরু করেন। পরে তিনি মুম্বাই-এর পশ্চিম ভারত রেলপথ ব্যুরোর সম্পাদক হন। ১৯৯৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি।

ছোটবেলায় লাভি মনে করতো, তার বাবা প্রতিদিন অনেক ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিন লাভি যখন বিছানা থেকে উঠতো, দেখতো তার বাবা বাসায় নেই, তিনি অনেক আগেই অফিসে চলে গেছেন। আবার সেই সন্ধ্যা সাতটার পর তার বাবা বাসায় ফিরে আসতেন।

লাভি বলেন, আমরা মোট ছয় ভাই বোন। বাবার জন্য তা ছিল বড় বোঝা। আমাদের জন্য অনেক খরচ হতো তার। দু'মুঠো অন্নের নিশ্চয়তা ছাড়া আমাদের আর কোনো চাহিদা ছিলনা। আমার কোনো খেলনাও ছিলনা। আমার জন্য সবচেয়ে ভালো খেলা ছিল ক্রিকেট। লাভি স্মরণ করে বলেন, আমার ছোটবেলা অনেক আনন্দের। লেখাপড়ার ফলাফলের জন্য উদ্বেগের দরকার ছিলনা। যখন আমি খেলতে চাইতাম, তখন আমি বাইরে যেতে পারতাম। আমার বাবা আমার কাছে শুধু একটিই দাবি করতেন , তা হল স্কুলের কাজ সময় মতো শেষ করা।

এখন লাভির বয়স ৩৪ বছর। তিনি দু'সন্তানের বাবা। তার ছেলে সঞ্জয়ের বয়স ১১ বছর। আর মেয়ে সোনার বয়স ৬ বছর। লাভি বলেন, শিশুদের লেখাপড়ায় তার মতামত তার বাবার তুলনায় একদম ভিন্ন। প্রতিদিন স্কুলের কাজ শেষ করার পর সঞ্জয় আর সোনা শুধু এক ঘণ্টার টিভি অনুষ্ঠান দেখতে পারে। এ পর তিনি ছেলেমেয়ে নিয়ে গণিত, ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাসে যান।

লাভি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হই। তাই আমি আমার বাবার চেয়ে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এবং ইংরেজি ভাষা শেখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তাই আমি ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জন্য আমার সব সঞ্চিত অর্থ খরচ করি এবং তাদেরকে নামীদামী ভালো প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করি। আমি চাই তাদের জীবনের ভালো সূচনা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত হোক।

আগে ভারতে শুধু বিত্তশালী পরিবারের শিশুরাই প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি হতে পারতো। তবে এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ শ্রেণীর জন্য উপযোগী খরচের স্কুলের সংখ্যাও বেড়েছে। লাভির মতো ভারতের অনেক বাবাই শিশুদের লেখাপড়ার ভালো পরিবেশের জন্য সব টাকা খরচ করতে দ্বিধা করেন না।

লাভি আশা করেন, তাদের ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল হোক। চীনে এমন একটি কথা আছে, তা হল "নিজের সন্তানকে ড্রাগন হওয়ার কামনা করে"। কিন্তু এ বিষয়ে ভিন্ন দেশের বাবার মন্তব্য ভিন্ন। যেমন জাপানের বাবা ফুজিসাওয়া, গত সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আমরা তার কথা বলেছিলাম। তিনি হলেন একজন সাপ্তাহিক বাবা, চাকরিতে অনেক ব্যস্ত বলে তিনি শুধু সাপ্তাহিক ছুটিতেই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ছেলেমেয়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে তার মন্তব্য হল "শিশুরা সুষ্ঠুভাবে বড় হতে পারলে তিনি খুশি হবেন"। এটাই তার আশা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। তিনি কখনই ছেলের লেখাপড়ার ফলাফল 'ভালো না', এমন কারণে ছেলের সমালোচনা করেন নি। তার ছেলে তার মত খেলাধুলায় ভালো করে, তিনি বলেন, it's ok, তার ছেলের ক্রীড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার আগ্রহ নেই, তিনি বলেন, এটা কোনো সমস্যা নয়। তিনি বলেন, যে বিষয় আমি বার বার তাকে বলি, তা হল, নিজের আচরণের ওপর নজর রাখা। অন্য কাউকে ঝামেলায় না ফেলা।

এ ক্ষেত্রে অনেক চীনা বাবার মতামতও একই। তারা মনে করেন, শিশু বড় হওয়ার পর কতটা বিশাল অগ্রগতি বা সাফল্য অর্জন করলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শিশুদের আনন্দের সঙ্গে বড় হতে পারা, শিশুদের নিজের ইচ্ছা মত থাকতে পারা।

শিশুদের লালন পালনে ভারতের পাশাপাশি চীনা প্রবাদও কিন্তু আমরা জেনে ফেললাম। এখন আমরা দৃষ্টি ফেরাবো রাশিয়ার দিকে।

রুশ নাগরিক ঈগলের বয়স ৪৮ বছর। তিনি তথ্য মাধ্যমে কাজ করেন। তিনি দুই নারীকে বিয়ে করেছিলেন।

দুই স্ত্রীর ঘরেই তার দু'টি ছেলে আছে। বড় ছেলের বয়স ২৫ বছর, ছোট ছেলের বয়স ৫ বছর। আসলে ঈগলের বাবা-মারও বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। তিনি ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে থাকেন। তার বাবা শুধু মাঝে মাঝে তাকে দেখতে আসেন। তবে তাকে শিক্ষা দেয়া এবং তার সঙ্গে থাকতে পারেন নি। তাই তিনি আশা করেন, তার নিজের ছেলের জীবন তার চেয়ে সুখী হবে। তিনি চান, তার ছেলের জীবনে নিশ্চয়ই বাবার ভূমিকা থাকবে।

থম বিবাহবিচ্ছেদের পর ঈগলের উদ্বেগ ছিল যে, তার ছেলে এর কারণে মন খারাপ করবে। তাই তিনি সবসময় ছেলেকে নিয়ে বাইরে ভ্রমণ করেন এবং বিশ্বকে উপলব্ধি করেন। ঈগল বলেন, যদিও আমার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে দশ বছর আগে, তবুও আমার ছেলে জানে না যে, আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।

এরপর ঈগল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তবে এ বিয়েও ছিন্ন হয় এবং বিবাহবিচ্ছেদের পর তার স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে নিখোঁজ হয়। তিনি অনেক অনেক সময় নিয়ে ছেলেকে খুঁজে পান এবং এখন তিনি প্রতি সপ্তাহে দুই বার ছোট ছেলের সঙ্গে থাকতে পারেন।

ঈগলের মতে, বাবা নেই এমন পরিবার, পরিবেশ ছেলের বড় হওয়ার জন্য অনুকূল নয়। এভাবে ছেলের মানসিক অবস্থা ভালো হবে না। তারা জানে না বাবা মানে কি? যখন তারা বড় হবে, তখন তারাও জানবে না কিভাবে একজন ভালো বাবা হওয়া যায়?

যদিও সমাজের সাধারণ ধারণায়, পরিবার ও শিশুর যত্ন পুরুষের কাজ নয়। তবে আসলে এ ধারণা একেবারেই সত্য নয়। ছোটবেলায় যদি বাবা তাদের সঙ্গে না থাকেন, তাহলে যখন তারা বাবা হবে, তখন তারা কিভাবে একজন ভালো বাবা হতে পারবে?

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ায় প্রায় ৬ লাখ শিশু বিভিন্ন কারণে বাবার সঙ্গে থাকতে পারছে না। এর মধ্যে অধিকাংশের অবস্থা এমন: বাবা-মার বিবাহবিচ্ছেদের পর মা শিশুকে বাবার কাছে যাওয়ার সুযোগ দেন না এবং শিশুর বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাবাকে অংশ নেয়ার সুযোগও দেন না।

আমরা আশা করি, বিশ্বের সব শিশুর জীবন সুখী হোক, আমরা আরো আশা করি, সব পরিবার সুখী হোক, সবার দাম্পত্য জীবন সুখী হোক। সুন্দর,রঙিন এবং স্বাপ্নিক হয়ে উঠুক শিশুদের জীবন। কারণ আজকের শিশুরাই আমাদের আগামী বিশ্বকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। (ফেইফেই/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040