Web bengali.cri.cn   
"বাবা, আমরা কোথায় যাবো"
  2014-08-04 19:32:40  cri



সম্প্রতি আমার চীনের একটি টিভি শো "বাবা, আমরা কোথায় যাবো" এ অনুষ্ঠান চীনা জনগণের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়।

আসলে সেই ছোটবেলা থেকে আমরা শুনে আসছি যে, বাচ্চা বা শিশুকে যত্ন নেয়ার দায়িত্ব প্রধানত মায়ের, তাই না? বাবা কিন্তু এ ক্ষেত্রে কম কাজ করেন। আর যদি তারা কিছু করেনও তাও নিশ্চয়ই মায়ের মতো এতোটা সুন্দর না, তাই না?

কিন্তু উল্লেখিত টিভি অনুষ্ঠান সবার এ ধারনাকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। বাবা এ অনুষ্ঠানে নিজের শিশুকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং বিভিন্ন মজার কর্তব্য সম্পন্ন করেন। এটি নিশ্চয়ই বাবা'র জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।

অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বাবারা সবাই চীনের বিখ্যাত শিল্পী। তারা কেউ কেউ কণ্ঠশিল্পী, কেউ কেউ অভিনেতা। এমনিতেই তো সাধারণ মানুষ তাদের জীবন সম্পর্কে জানতে, দেখতে খুবই আগ্রহী।

আর অনুষ্ঠানে এসব বাবাদেরকে কি দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়?

যেমন শিশুর জন্য খাবার রান্না করা, কোথাও রওয়ানা হবার আগে শিশুকে যত্ন নেয়া ইত্যাদি। খুবই মজা। প্রথম দিকে এসব বাবারা কিছুই করতে পারতেন না, তবে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিতে তারা অনেক কিছুই শিখে ফেলেছেন এবং কয়েক সপ্তাহ পর তারা যোগ্য বাবাতে পরিণত হয়েছেন। বাবাদের জন্য এটি বিশাল এক ইতিবাচক অগ্রগতি, তাই না বন্ধুরা?

আসলে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বাবাই পারিবারিক জীবনে আরো বেশি ভূমিকা পালন করছেন, বিশেষ করে শিশুর যত্ন নেয়া এবং শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে।

পরিবারে বাবার কি রকম ভূমিকা পালন করা উচিত? শিশুকে বাবার কিভাবে যত্ন নেয়া উচিত? এ যুগে কিরকমের বাবাকে বলা যায় ভালো বাবা?

যুগের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন দেখছি, বাবাদের শিশুকে শিক্ষা দেয়া এবং যত্ন নেয়ার পদ্ধতির আকাশ-পাতাল পরিবর্তন হয়েছে। বাবারা এখন মায়েদের মতো শিশুকে লালনপালন করতে পারেন, আবার তারা বড় বোনের মতোও শিশুর সঙ্গে মনের কথা বলতে পারেন। এটি নিশ্চয়ই আমাদের সমাজ,সভ্যতার এক বিশাল প্রাপ্তি।

বন্ধুরা, এখন আমরা একটি উদাহরণের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কে আপনাদের সঙ্গে একটু আলাপ করবো।

মার্কিন নাগরিক মার্ক এবং তার স্ত্রী নিজ বাসা ত্যাগ করে নিউইয়র্কে যান। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন এবং ভালো বেতন পান। মার্ক আগে সঙ্গীত রচনার কাজ করতেন, কিন্তু বেতন ভালো না হওয়ায় তিনি পানশালায় কাজ করা শুরু করেন। তিন বছর আগে তাদের মেয়ের জন্ম হয়। এরপর থেকেই তাদের জীবনের বিরাট পরিবর্তন ঘটতে থাকে। মার্ক মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরি করতে চান, তবে পানশালার বেতন নিশ্চয়ই এ লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না, তাই তিনি আবার স্কুলে মাস্টার্স ডিগ্রী পাওয়ার জন্য লেখাপড়া করতে চান এবং ডিগ্রী পাবার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান।

তবে এর আগে এক বছর ধরে মার্ককে বাসায় থাকতে হয়েছে এবং মেয়ের যত্ন নিতে হয়েছে। মার্ক বলেন, আমি তখন প্রতিদিন ভোর ছয়টায় বিছানা থেকে উঠি, মেয়ের ডায়াপার চেঞ্জ করি, মেয়েকে দুধ পান করাই, তারপর তাকে নিয়ে বাইরে হাঁটাহাঁটি করি। এভাবেই রাত আটটা বেজে যেত, তখন যে কাজটি আমি করতে সবচেয়ে আগ্রহী থাকতাম তাহলো একটু বিশ্রাম । এ এক বছর সত্যি আমার জন্য অনেক লম্বা।

যদিও অনেক পরিশ্রম, কান্তি তবে চাকরি ছেড়ে দেয়া কিন্তু মার্কের জন্য সঠিক বাছাই। তার মতে, অনেক তরুণ বাবাই পুরো সময় ধরেই শিশুর যত্ন নিচ্ছেন। মার্ক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে লোকেরা পূর্ণকালীন বাবাকে সমর্থন করেন না, তবে পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলে, যেমন নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ায় এমন পদ্ধতি সমাজের সবার জন্য খুব গ্রহণযোগ্য এবং স্বাভাবিক । কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করেন, নানা-নানী বা দাদা-দাদির কাছ থেকে সাহায্য না চাওয়া কেন? তারাও তো শিশুকে লালনপালন করতে পারেন।

মার্ক বলেন, অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, বাবা-মা ও ছেলেমেয়ের আলাদা জীবন আছে। বাবা-মার সঙ্গে থাকা অর্থনীতি এবং আরামের দিক থেকে মোটেই ভালো বাছাই নয়।

মেয়ের জন্মের প্রথম বছরের পর স্ত্রীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত "পরিবার চুক্তি" অনুযায়ী মার্ক আবার লেখাপড়া করতে শুরু করেন। আর তার মেয়ে খুব শিগগিরি কিন্ডারগার্টেনে যাবে, তখন তার স্ত্রী কিন্ডারগার্টেনের বাইরের সময় মেয়ের যত্ন নেবে। ব্যাস, সব সমস্যা সমাধান ।

মার্ক মনে করেন, শিশুর যত্নে বা শিশুর জন্যে স্বামী হোক, স্ত্রী হোক, একজনকে কিছুটা স্বার্থহানি করতেই হবে। পূর্ণকালীন বাবা লজ্জার ব্যাপার নয়। এখন নারীদের শিক্ষার মান আরো উচ্চ হচ্ছে, চাকরি এবং সমাজে তাদের ভূমিকাও আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে। যদি স্ত্রী বেশি বেতন পান, তাহলে স্বামীর পরিবারে আরো বেশি অবদানও রাখতে পারবেন। তা খুবই ভারসাম্যমূলক একটি অবস্থা।

এবারে আমরা আপনাদেরকে নিয়ে যাবো জাপানে, মানে জাপানের একটি পরিবারের কাছে। ৪৯ বছর বয়সী ফুজিসাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর। তার এবং তার স্ত্রীর একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে। জাপানিদের মতে, এটি খুব নিখুঁত ভাল একটি পরিবার ব্যবস্থা।

২০ বছর আগে তাদের মেয়ে জন্মের পর তার স্ত্রী খুব তাড়াতাড়ি চাকরিতে ফিরে যান, তখন ফুজিসাওয়া ডক্টরেট ডিগ্রীর জন্য লেখাপড়া করছেন। স্ত্রীর চাকরিতে ফিরে যাওয়ার কারণে ফুজিসাওয়াকে তখন পরিবারে বেশি কাজ করতে হতো। যখন তাদের ছেলের জন্ম হয়, তখন ফুজিসাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান এবং তার স্ত্রী তখন পূর্ণকালীন মা হিসেবে বাসায় থাকতেন। কাজের কারণে তিনি খুব কম সময়ই বাসায় থাকতে পারতেন। তাই তার ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ততটা ঘনিষ্ঠ নয়।

এমন অবস্থা দেখে ফুজিসাওয়া অনেক দুঃখ পান। তাই তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ঠিক করেন যে, কাজের দিনে স্ত্রী ছেলেমেয়েদের যত্ন নিবে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফুজিসাওয়া শিশুর সঙ্গে থাকবেন। যেমন সকালে একসাথে নাস্তা খাওয়া, তারপর গাড়িয়ে চালিয়ে তাদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলাধুলা করা।তারা ইতিহাস, পিসি গ্যাম, সব কিছু নিয়ে আড্ডা মারেন। সন্ধ্যায় বাবা আর ছেলেমেয়ে একসাথে খাবার রান্না করে। এভাবে চার বছর পার হয়, এখন ফুজিসাওয়ার সঙ্গে ছেলের সম্পর্ক অনেক ভালো হয়েছে। এখন মায়ের চেয়ে বাবার সঙ্গে থাকতেই বেশি পছন্দ করে ছেলেটি।

আমরা এ দুই উদাহরণ থেকে জানতে পারি, যদি বাবাদেরকে এমন সুযোগ দেয়া যায়, তাহলে বাবারা শিশুর যত্নের ক্ষেত্রে খুবই ভালো করতে পারেন। আসলে শিশুকে শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে বাবার ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040