Web bengali.cri.cn   
আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ায় চীন-পাক সহযোগিতা নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আফগান বিষয়ক বিশেষ দূত সুন ইয়ু সি
  2014-08-08 18:55:58  cri

গত ২৭ জুলাই, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত সুন ইয়ু সি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত চীন-পাকিস্তান তথ্য মাধ্যম প্রেস ব্রিফিংয়ে সাম্প্রতিক আফগানিস্তানে মধ্যস্থতার পর অর্জিত ফলাফল, আফগান সমস্যায় চীনের অবস্থান এবং আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় চীন-পাক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন। বিস্তারিত পরিস্থিতি জানতে, এখন শুনুন পাকিস্তানে নিযুক্ত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতা ছিন শেংরুই'র পাঠানো রিপোর্ট।

এদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে, সুন ইয়ু সি প্রথমে আফগান নির্বাচনের ভোট গণনা প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। যদিও ভোট গণনার ফলাফলে বিতর্ক রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ আবারো নিরীক্ষা করছে, তবুও দুই প্রার্থী সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ফলাফল মেনে নিয়েছেন এবং শান্তি প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। সুন ইয়ু সি বলেন,

২৪ জুলাই আমি আফগানিস্তান নির্বাচনের দুই প্রার্থী আশরাফ ঘানি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ'র সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। আমি বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর চীন সরকারের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। আশা করি, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন সমস্যা নিয়ে একমত হবেন। বর্তমানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ভোট গণনা পুনরায় চলছে। যে ফলাফল হবে, আমরা আশা করি, প্রার্থীরা সেটাকে মেনে নেবেন। জাতীয় স্বার্থে দ্রুততার সঙ্গে নতুন নেতা ও নতুন সরকার গঠিত হবে। তারপরই আমরা অব্যাহতবাবে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ার উন্নয়নে কাজ করতে পারবো।

বিশেষ দূত সুন মনে করেন, আফগানিস্তান সমস্যা সমাধানে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই আফগানিস্তানে তাঁর কাজ শেষ করে তিনি পাকিস্তানে এসেছেন। তাঁর লক্ষ্য হলো আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় চীন ও পাকিস্তানের সহযোগিতা জোরদার। তিনি বলেন,

আফগানিস্তান পরিস্থিতি উপলব্ধি করার পর আমি এবার পাকিস্তান সফর করছি। আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া অথবা অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার করতে বন্ধু রাষ্ট্র পাকিস্তানের সহযোগিতা থাকে চায় চীন। সবাই জানে, বহু বছরের উন্নয়নের মাধ্যমে চীন-পাক সম্পর্ক দীর্ঘ সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানে আমরা প্রচুর সহযোগিতামূলক প্রকল্প চালিয়েছি। রাজপথ, রেল পথ, পোতাশ্রয়, বিদ্যুত্ উত্পাদন এবং সকল অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর সহযোগিতা করেছি। শান্তি প্রক্রিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানে পাকিস্তান। আর ঐতিহাসিকভাবেই সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে পাকিস্তান। সুতরাং আমি এখানে এসেছি, কারণ আমি বন্ধু রাষ্ট্র পাকিস্তানের ভালো ধারণা ও প্রস্তাব শুনতে চাই। তারপর পাকিস্তানের সহযোগিতা অর্জন করবো।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী সরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কোন জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা ভাবছে, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সামর্থ্য যথেষ্ট নয়, তালিবানের আক্রমণ ঠেকানোর সামর্থ্য তাদের নেই। বিশেষ দূত সুন ইয়ু সি ভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি মনে করেন, অর্থনীতি উন্নয়ন করা, জনগণের জীবনযাপনের মান উন্নত করা হচ্ছে সশস্ত্র প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। তিনি আশা করেন, চীনের সহায়তায় তালিবান অস্ত্র ত্যাগ করে, মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার পথে ফিরে আসবে। তিনি বলেন,

আমাদের চেষ্টা হচ্ছে তালিবান নিজেরাই অস্ত্র ত্যাগ করবে, রাজনীতিতে ফিরে আসবে, সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করবে, একে অপরকে আর শত্রু হিসেবে দেখবে না এবং দেশ তৈরির নাগরিকে পরিণত হবে। আমরা যেটা করবো, সেটা হচ্ছে আফগান সরকার নিজেই স্বাধীন থাকবে। যদিও এটি অনেক কঠিন তাই আমরা অব্যাহতভাবে সাহায্য সরবরাহ করবো। এর পাশাপাশি আমরা আরো বেশি গুরুত্ব দেবো জাতীয় ঐক্যের ওপর। রাজনৈতিক সমঝোতা প্রক্রিয়া আফগানের নেতৃত্বে হওয়া উচিত। আফগানদের এটা নেতৃত্বাধীন করা উচিত। আমরাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের অর্থনীতিতে সুন্দর হবে। এখন এক একটি প্রকল্প ও এক একটি ভাল কাজ করিয়ে দেই। আমি বিশ্বাস করি, সারা বিশ্বের যে কোন জায়গার জনসাধারণের মতো যথেষ্ট খাদ্য ও পোশাক সেখানে আছে, সেখানে কেউ যুদ্ধ চায় না। এটা আমাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনও সন্ত্রাসবাদের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সন্ত্রাস দমন কাজ আরো দুরূহ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় দীর্ঘস্থায়ী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনের ফ্রন্ট লাইনে রয়েছে এবং যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ সম্পর্কে বিশেষ দূত সুন মনে করেন, চীনের উচিত সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে দু'দেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া এবং জোরদার করা। তিনি বলেন,

আমাদের মনে হয়, গত দশ-বারো বছর সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক। আমরা সবসময় সমর্থন করেছি। বর্তমানে চীনের ওপর সন্ত্রাসবাদের হুমকি তীব্রতর হচ্ছে। অনেক সন্ত্রাসী ঘটনা শুধু উত্তর-পশ্চিম চীন সীমান্তে হচ্ছে তাই নয়, বরং রাজধানী এমনকি দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকায়ও ঘটছে। সুতরাং আমারা আরো গুরুতর সন্ত্রাসী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি। এ বিষয়ে বহু বছর ধরে, পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে ইতিবাচক সহযোগিতা করছে। হামিদ কারজাই'র নেতৃত্বে আফগান সরকার আমাদের সঙ্গে ইতিবাচক সহযোগিতা ও যোগাযোগ করছে। আমরা এর প্রশংসা করছি। এছাড়া ভবিষ্যতে আমরা অব্যাহতভাবে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখবো। চীনের জন্য হুমকি দেখায়, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় তুর্কিস্তান আন্দোলনের মতো সন্ত্রাস দমনের কাজে ভবিষ্যতে আমরা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখব।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040