0718
|
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় দেরট শহরের কিছুদিন আগে রকেট হামলার শিকার এক নারী অধিবাসী মালিকা অ্যালিস বলেন,
তখন ছিল বুধবার রাত দেড়টা। আমরা নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষিত ঘরে প্রবেশ করিনি। তখন বোমা হামলাটি হয়। ঘর ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। জানালার গ্লাস সব ভেঙ্গে যায়। আমার মেয়েরা চিত্কার করে কান্নাকাটি করতে থাকে। এখন তারা বাইরে যেতে ভয় পায়। এটা সত্যিই ভয়ঙ্কর।
দেরটের দূরত্ব গাজা থেকে ২ কিলোমিটারেরও কম। গাজা থেকে নিক্ষিপ্ত রকেট ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে সেখানে আঘাত করতে পারে। মানুষদের সরে যাওয়ারও যথেষ্ট সময় থাকে না। বহু বছর ধরে রকেট হামলার চাপ মাথায় নিয়ে জীবনযাপনের ফলে মানুষের মনে বিরাট চাপ পড়ে।
চলতি বছরের জুনে অপহরণ ও কিশোর হত্যাসহ বেশ কিছু ঘটনার অজুহাতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। গাজা ইসরাইলের ওপর কয়েকশ' রকেট বা মর্টার ছুঁড়েছে। জবাবে ইসরাইল গাজার সুড়ঙ্গ পথ এবং রকেট ছোঁড়ার স্থানের ওপর সামরিক হামলা চালিয়েছে। গত ৬ জুলাই রাতে ইসরাইলের বিমান হামলায় ৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হামাসের ৭ জন সদস্য। কিন্তু ইসরাইল বলেছে, হামাসের ৭ জন সদস্য নিজেরাই বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়।
ইসরাইল গাজার ওপর গত ৭ জুলাই শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে। ইসরাইলি বাহিনী গাজার সীমান্তে তাদের সেনা মোতায়েন বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সেদিন রাতে গাজার রকেট হামলার জবাবে ইসরাইলের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছে, ইসরাইলের নিজেকে রক্ষার অধিকার রয়েছে। পাশাপাশি ইসরাইল সরকারকে সংযম বজায় রেখে তীব্র সংঘর্ষ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
গাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুখাইমার আবু সাদা বলেন,
হামাসের হারানোর কিছু নেই এখন। তাদের সরকারের সহযোগিতা নিয়ে চিন্তার দরকার নেই। বর্তমানে গাজায় অনেক সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুৎ নেই, ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ বন্ধ, সীমান্তের চেক-পয়েন্ট বন্ধ ইত্যাদি। সুতরাং সংঘর্ষ তীব্রতর করা হয়তো বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়। সম্ভবত সংঘর্ষ তীব্র হলে ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন করে শান্তি আলোচনা নিয়ে কথা হতে পারে।
কিন্তু, অন্য দিকে তীব্র সংঘর্ষ গাজার সাধারণ মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক শরণার্থী ও ত্রাণ সংস্থার মুখপাত্র আদনান আবু হানসে বলেন, সাধারণ মানুষ আশা করে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন,
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ এবং প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গাজার সাধারণ মানুষ খুবই আতঙ্কগ্রস্ত। তাদের আশঙ্কা হয়তো আরো বড় যুদ্ধ আসছে। কারণ, গত দু'বছরে দু'বার যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো অনেক সমস্যা গাজাবাসীর সামনে রয়েছে। আসলে গাজাবাসীর জন্য আগামীকাল বলে কিছু আছে কিনা তা বলা যায় না। আপনি আন্দাজ করতে পারেন না, আগামী কয়েক ঘণ্টায় কি ঘটবে।
আবু হানসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সকল পক্ষকে চেষ্টা চালিয়ে গাজা জনগণকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু ইসরাইল ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উরি রোসেট মনে করেন, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। তিনি বলেন,
প্রথমে দেখতে হবে, হামাস যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেবে কিনা। তারপর দেখতে হবে, গাজার অন্যান্য ছোট সংস্থা হামাসের যুদ্ধবিরতির নির্দেশ মানবে কিনা। তৃতীয়ত, যদি তারা না শোনে, হামাস তাদের ওপর চাপ দিয়ে বাধ্য করবে কিনা। এছাড়া ইসরাইলের পাল্টা আক্রমণ কেমন, তা দেখতে হবে। আমার মনে হয়, যুদ্ধবিরতি দু'পক্ষের জন্যই অনুকূল হবে। কিন্তু এটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা আমি বলতে পারছি না।