Web bengali.cri.cn   
যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সন্ত্রাস দমন করে?
  2014-07-14 16:47:10  cri



সন্ত্রাস দমনের কথা উল্লেখ করলে কোন দেশের কথা আপনাদের মনে ভেসে উঠবে? নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্র,তাইনা? আমার বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের নাম তালিকার অন্যতম।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সংঘটিত ওই সন্ত্রাসী হামলা এখনো ভুলে যায় নি বিশ্ববাসী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বার বার সন্ত্রাসীদের হামলার লক্ষে পরিণত হয়। আর তাই ২০০১ সালের ওই সন্ত্রাসী ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র সারা দেশে সন্ত্রাস দমনের জন্য কাজ করতে শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা, সন্ত্রাস দমনে আইন প্রণয়ন করা, বিভিন্ন ব্যবস্থা সংস্কার করা এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা করা। এ ছাড়া সাধারণ লোকজনও এতে অংশ নিয়েছে। যেন সব পদ্ধতি নিয়েই সন্ত্রাস দমন করছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রথমেই আপনাদের সঙ্গে একটি বিষয় শেয়ার করতে চাই। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ অনেক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। সন্ত্রাস এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সব বিষয় তিনি নিজেই দেখাশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। একবার পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ এফবিআই-এর একজন এজেন্ট এর কাছ থেকে জানতে পারেন যে, সন্ত্রাসীরা পরমাণু অস্ত্র অর্জন করেছে এবং এ অস্ত্রকে পিজবার্গ থেকে ফিলাডেলফিয়া গামী একটি ট্রেনে যুক্ত করেছে। এ তথ্যকে মুহূর্তেই হোয়াইট হাউসে পৌঁছে দেয়া হয়। বুশ তা শুনে অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং এ তথ্য নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। ভাগ্যের বিষয় হল অবশেষে প্রমাণ হয়েছে যে, এ তথ্য সত্য নয়। এটি ছিল শুধু দুই ব্যক্তির টয়লেটে আড্ডা মারার সময় বলা একটি কৌতুক।

তবে তা থেকে বোঝা যায়, হোয়াইট হাউসের সংশ্লিষ্ট চেতনা তখন আরও অনেক ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমরা তা থেকে জানতে পারি, হোয়াইট হাউস উপলব্ধি করেছে যে, সন্ত্রাস দমনে রকেটের চেয়ে গোয়েন্দা আরো গুরুত্বপূর্ণ।

সন্ত্রাস দমনে সবচেয়ে ভালো অবস্থা হল আগেই সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়া এবং আগেই সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সন্ত্রাস দমনে আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা ভালভাবে যাচাই করা। এ ছাড়া শক্তিশালী গোয়েন্দা তথ্য যোগাযোগ স্থাপন এবং তা সুসংহত করাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

সেই ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থায় ইতিহাসের বৃহত্তম সংস্কার করা হয়। নতুন কাঠামোয় প্রেসিডেন্ট হলেন কমান্ডার। দেশের গোয়েন্দা প্রধান সরাসরি প্রেসিডেন্টকে সংশ্লিষ্ট তথ্য জানাবেন। দেশের গোয়েন্দা প্রধানের একটি থিংকট্যাংক দলও আছে। এটি তিনটি ক্ষেত্রের শক্তি নিয়ে গঠিত: প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, তথ্য ভাগাভাগি কমিশন এবং দেশের সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র।

আপনারা কি জানেন, যুক্তরাষ্ট্রে শুধু সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রের জন্য কতটি বিভাগ বা মন্ত্রণালয় কাজ করে? তা শুনে আপনারা সত্যিই অবাক হবেন। দেশের নিরাপত্তা ব্যুরো, দেশের ভৌগোলিক গোয়েন্দা ব্যুরো, দেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা ব্যুরো, স্থল, নৌ এবং সমুদ্র বাহিনী, এফবিআই, সিআইএ, জ্বালানী মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ আরো অনেক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ রয়েছে। দেশের সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রের প্রধান কর্তব্য হল যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থার সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাস দমন বিষয়ক তথ্য গবেষণা এবং যাচাই করা। ২০০৪ সালে গঠিত এ কেন্দ্রটি হল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ব্যবস্থা কেন্দ্র। কেন্দ্রটি অবাধভাবে সব ধরনের তথ্য পেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা প্রধান হলেন জন ডি নেগরোপন্তে। সারাবিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ১ লাখ এজেন্ট আছে। তিনি শপথগ্রহণের পর এসব এজেন্টকে পুনরায় পরিচালনা করতে শুরু করেন। তার একটি খুব গোপন সন্ত্রাস দমন থিংকট্যাংক দলও আছে। এ দলের ৫০ জন সদস্য আছে। তা দেশের ১৫টি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, তিনি সিআইএ'র একজন খুব দক্ষ কর্মীকে তার দলে নিতে চেয়েছিলেন, তখন সিআইএ তার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সিআইএ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এ কর্মীকে ছাড়া তাদের একটি শাখার কাজও স্বাভাবিকভাবে চলবে না। তা সত্ত্বেও নেগরোপন্তে তার সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করেন নি এবং অবশেষে তিনি এ দক্ষ কর্মীকে পান।

গোয়েন্দা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ আইনও প্রণয়ন করেছে। ২০০১ সালের ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক আইন অনুমোদিত হয়। তা হল "ইউএসএ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট"। আইনগত দিক থেকে, এ আইনের কারণে সরকার সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপের সুযোগ দিয়েছে। তাই এর ফলে দেশজুড়ে নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে একটি তর্কবিতর্ক হয়েছে। তবে সন্ত্রাস দমনে প্রধান ব্যবস্থার অন্যতম হিসেবে ৯‌/১১ ঘটনার পর খুব দ্রুতই এ আইন গৃহীত হয়। তা থেকে সন্ত্রাস দমনে সরকারের দৃঢ়তাও বোঝা যায়,তাইনা?

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করার ওপরও গুরুত্ব দেয়। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৃহত্তম সংস্কার হয়েছে। অভিবাসন এবং শুল্ক বিভাগসহ ২২টি ফেডারেল সংস্থা নিয়ে একটি নতুন সংস্থা গঠন করেছে এবং তা হল 'ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি'। বর্তমানে এ মন্ত্রণালয়ে ২.৪ লাখ কর্মী রয়েছেন। এটি হল ফেডারেশনের তৃতীয় বৃহত্তম সংস্থা। প্রতি বছর এ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ করতে হয় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমন সহযোগিতা সম্প্রসারণ করাও যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০০২ সালে "জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে সন্ত্রাস দমন প্রস্তাবে" যৌথভাবে সন্ত্রাস দমনের বিষয় নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালের "ওয়াশিংটন পরমাণু নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনের কর্মসূচীতে" বার বার সন্ত্রাস দমনের তথ্য ভাগাভাগি করার সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়। যা চীনসহ ৪৭টি দেশের নেতার স্বীকৃতি পেয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বার বার অনেক সন্ত্রাসী হামলার অপচেষ্টা ব্যর্থ করেছে, এর প্রধান কারণ হল আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পাওয়া সঠিক গোয়েন্দা তথ্য।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040