Web bengali.cri.cn   
তৃতীয় মধ্য-প্রাচ্য যুদ্ধ প্রাদুর্ভাব স্মারক দিবসে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শক্তিপরীক্ষা এখনও বন্ধ হয়নি
  2014-06-13 19:29:27  cri

প্রিয় শ্রোতা, ৫ জুন ছিল তৃতীয় মধ্য-প্রাচ্য যুদ্ধ প্রাদুর্ভাব স্মারক দিবস। ১৯৬৭ সালের তৃতীয় মধ্য-প্রাচ্য যুদ্ধে ইসরাইল মিসর নিয়ন্ত্রিত গাজা এলাকা এবং সিনাই উপদ্বীপ, জর্ডান নিয়ন্ত্রিত জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেম, সিরিয়ার গোলান হাইটসের মোট ৬.৫ বর্গকিলোমিটারের জমি দখল করেছে। শত শত হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। তখন থেকে ফিলিস্তিনি পুরোপুরিভাবে ইসরাইলের "দখলে" জীবনযাপন করে। চলতি বছরের তৃতীয় মধ্য-প্রাচ্য যুদ্ধ প্রাদুর্ভাব স্মারক দিবস উপলক্ষে ফিলিস্তিনিরা আশা করেন, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত যৌথ সরকারের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনিদের জন্মভূমিতে ফিরে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু দেখা গেলো ইসরাইল পুনরায় বসতি এলাকা সম্প্রসারণ করে ফিলিস্তিনের ওপর শাস্তি আরোপ করেছে। এ সম্পর্কে এখন শুনুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাদিক ওয়াং ছিয়ান ও জাং চিনের পাঠানো প্রতিবেদন।

ফিলিস্তিনিরা সবসময় বলে, গত কয়েক দশকে এ ভূমির ইতিহাস ছিল ফিলিস্তিনের দুঃখজনক ইতিহাস। ফিলিস্তিন প্রতিদিন ইঞ্চি ইঞ্চি ভূমি হারিয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক স্মারক দিবসে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের "স্মারক অনুষ্ঠান" করেছে। ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ প্রত্যেক স্মারক দিবসে প্রয়োজনীয় "অনুষ্ঠান"গুলোর মধ্যে অন্যতম।

সেদিন জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আবারো ইসরাইলি সেনাদের সংঘর্ষ হয়। কারান কনকর্ডিয়া চেকপয়েন্টে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি সেনাদের ওপর পাথর ছুঁড়ে মারে। জবাবে ইসরাইলি সেনারা কাঁদানে গ্যাস ও আলোড়ন বোমা নিক্ষেপ করে। ফিলিস্তিনি গণ মাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেদিনের সংঘর্ষে ৪জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। যদিও এমন ধরনের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে বেশ ক্ষতি হয়, তবুও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী একজন ফিলিস্তিনি বলেছেন, এভাবেই তাদের করতে হয়। তিনি বলেন,

এসব বিক্ষোভ ফিলিস্তিন সমস্যার ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়বে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিন সমস্যাকে ভুলে যাবে না।

তৃতীয় মধ্য-প্রাচ্য যুদ্ধ স্মারক দিবসের আলোকেই সম্প্রতি ফিলিস্তিন নতুন ঐক্য সরকার গঠন করেছে। জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিন জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ফাতাহ এবং গাজা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা ফিলিস্তিনের ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস সমঝোতায় পৌঁছেছে। ফলে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ ৭ বছরের বিভক্ত শেষ হয়েছে। অনেক ফিলিস্তিনি নতুন সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছে। ফিলিস্তিন পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইস্‌সাম বাকর সাংবাদিকদের বলেন,

আমরা মনে করি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা ইসরাইল সরকারকে স্পষ্ট উত্তর দিবে। সেটি হচ্ছে আমাদের দেশ সংহতিতে ফিরে এসেছে। আমরা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং আমাদের এলাকা ফিরে পাওয়ার জন্য অব্যাহতভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। আমার মনে হয়, ইসরাইল সারা বিশ্বে নব্য ফিলিস্তিন সরকারকে প্রতিরোধের আহ্বান জানাবে। কিন্তু এটা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আমরা অব্যাহতভাবে আমাদের সিদ্ধান্তকে রক্ষা করব।

ফিলিস্তিনের নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার পর, ইসরাইল অবিলম্বে ব্যবস্থা নিবে বলে হুমকি দিয়েছে। ৫ জুনের আগে ১ হাজার ৫শ'টি বাড়ি তৈরির কথা ঘোষণার পর ইসরায়েল সরকার আবারো ঘোষণা করেছে যে, পূর্ব জেরুজালেমে এবং জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে বসতি এলাকায় নতুন করে ১ হাজার ৮শ'টি বাস ভবন নির্মাণ করবে। দু'বার মোট ৩ হাজার ৩শ'টি বাস ভবন তৈরির কাজ সম্প্রসারিত করা হয়। এ দফায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি বৈঠক বন্ধ হবার পর ইসরাইলের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে ইহুদী বসতি এলাকা নির্মাণ পরিকল্পনার ঘোষণা। এছাড়া, ইসরাইল সম্ভাব্য অন্য অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে ফিলিস্তিনের ওপর শাস্তি আরোপের ঘোষণা দেয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের বসতি এলাকা সম্প্রসারণের বিরোধিতা করেছে। ইসরাইলের এ সিদ্ধান্তের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র হতাশা প্রকাশ করেছে এবং বলেছে, ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে এটা কোন কাজে আসবে না বরং ক্ষতিকর হবে। পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরাইলের বসতি এলাকা সম্প্রসারণের কাজের বিরোধিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিন সরকারের মুখপাত্র এহাব বেস্‌সাইসো ইসরাইলের বসতি এলাকা সম্প্রসারণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন,

ফিলিস্তিন সরকারের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের নতুন বসতি এলাকা নির্মাণের নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, এ আচরণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি আলোচনা ও শান্তি চুক্তির প্রচেষ্টাকে ভেঙ্গে দেবে।

চলতি বছরের তৃতীয় মধ্য-প্রাচ্য যুদ্ধ হবার স্মারক দিবসেও ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। একদিকে অস্ত্রের জবাবে পাথর নিক্ষেপ, অন্য দিকে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষা। এতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের পথ আরও জটিল ও দীর্ঘায়িত হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040