Web bengali.cri.cn   
ডায়েরি অফ জুন
  2014-06-12 15:52:56  cri



ঝড়বৃষ্টি কবলিত এক দিনে একটি উড়ালসেতুতে ইউনিফর্ম পড়া একজন ছাত্রকে তার এক সহপাঠী ছুরি দিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার দু'দিন পর মৃতের সহপাঠী উচ্চ একটি ভবন থেকে মাটিতে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়। পুলিশের একজন নারী এবং পুরুষ সদস্য একসাথে এই সিরিয়াল হত্যার তদন্ত করেন। তাদের নেতারা মনে করেন, ভবন থেকে লাফিয়ে মৃত্যুবরণ করা সেই সহপাঠী হলো প্রথম ছাত্রের হত্যাকারী। সে নিজের সহপাঠীকে হত্যা করার পর ভয়ে উচ্চ ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়। তবে নারী পুলিশ সদস্য তার জন্মগতভাবে প্রাপ্ত বিস্ময়কর জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে মনে করেন, এই মামলা এতটা সহজ নয়।

একই সঙ্গে পুরুষ পুলিশও চিকিত্সকের কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র পান। চিকিত্সক দুটি মৃতদেহের পেটে আলাদা আলাদাভাবে দু'টি ক্যাপসুল আবিষ্কার করেন। ক্যাপসুলে একটি ছোট কাগজ লক্ষ্য করা যায়। এতে হত্যাকারীর ডায়েরি এবং তার পরবর্তী হত্যার সময় উল্লেখ থাকে। তারপর দু'জন পুলিশ মৃতদের স্কুলে তদন্ত করতে শুরু করেন।

আস্তে আস্তে তারা আবিষ্কার করেন যে, হাসপাতালে কর্মরত নারী পুলিশের ছোটবেলার সেরা বান্ধবীই এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। তার ছেলে নিহত ছাত্রদের সহপাঠী ছিল। এই ছেলেটিও কিছুদিন আগে মারা যায়।

স্কুলে এই মায়ের ছেলেটি একজন ভীরু কিন্তু চতুর ছাত্র ছিলো। তার ভীরুতার কারণে সহপাঠীরা সবসময় তার সাথে প্রতারণা করতো। মনের রাগ প্রকাশের জন্য ছেলেটি একটি ডায়েরিতে যারা তার সাথে অপব্যবহার করতো তাদেরকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে হত্যা করার একটি পরিকল্পনা লিখে রাখতো।

ছেলেটি সহপাঠীদের প্রতারণাসহ জীবনের নানা রকমের চাপ সহ্য করতে না পারায় অবশেষে আত্মহত্যা করে। ছেলের আত্মহত্যার পর একটি আকস্মিক সুযোগে মা স্কুলে ছেলের নির্যাতনের ভিডিও দেখেন এবং ছেলের রেখে যাওয়া ডায়েরিটা আবিষ্কার করেন। এতে করে মা ছেলের জন্য প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ছেলের ডায়েরিতে লেখা উপায়ে ক্রমাগতভাবে সহপাঠীদের মধ্যে যারা ছেলের সাথে প্রতারণা করতো তাদেরকে হত্যা করেন।

এ মুভির কাহিনী অতি নতুন নয়। এ মুভিতে ছেলের জন্য মায়ের প্রতিশোধ নেয়ার গল্প বর্ণনা করা হয়েছে। প্রায় একই ধরনের গল্প নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় আরো একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তবে চলচ্চিত্র পরিচালকের গল্প বলার পদ্ধতি বা নির্মাণ কৌশল একটু ভিন্ন। দেখার পর আমার কোনো ভয় কাজ করেনি, তবে একটু বিষণ্ণতা বোধ করেছি।

আগের মতো আরেকজন সহপাঠীর মৃতদেহ থেকে একটি ক্যাপসুল বের করা হয়। ক্যাপসুলে একটি কাগজ পাওয়া যায়। কাগজটিতে হত্যাকারীর পরবর্তী লক্ষ্য লেখা থাকে। এই খবর পেয়ে স্কুলের শিক্ষকরা এবং যাদের ছেলেরা এ ঘটনার সাথে যুক্ত নয় তারাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কারণ তাদের ছেলেরা এ ঘটনার সাথে যুক্ত না থাকলেও যখন অন্যরা এ ছেলেটির সাথে প্রতারণা করতো তখন তারা বাধা দিত না। তবে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার পর মায়ের পেট থেকেও একই রকমের ক্যাপসুল আবিষ্কার করা হয়। আর এই ক্যাপসুলের ভেতরের কাগজে লেখা থাকে, 'মা হলো হত্যার পরবর্তী লক্ষ্য'। এই দৃশ্য দেখে আমার মন কেঁপে উঠে। এখানে আমি বুঝতে পারি যে, ছেলের জন্য প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্য শুধুমাত্র ছেলের শয়তান সহপাঠীদেরকে হত্যা করাই নয়, সাথে সাথে নিজের জন্যও প্রায়শ্চিত্ত করা।

চলচ্চিত্রে হত্যাকারী মায়ের স্বামী অন্যদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় পালিয়ে যায়। মা এবং ছেলেকে বাবার এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। জীবনের বিশাল চাপ কাঁধে নিয়ে মাকে চলতে হয়। ফলে ছেলের সঙ্গে মায়ের যোগাযোগ, বিনিময় একেবারেই হয় না। স্কুলে সহপাঠীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও বাসায় মায়ের কাছে থেকে কোনো সহযোগিতা পায় না। ফলে সে আত্মহত্যা করে।

পরিবার হলো মানুষের কাছে উষ্ণ বন্দরের মতো। মায়ের ছেলেটি স্কুলে সহপাঠীদের অপমান ও আঘাত সহ্য করে, কারণ সে জানে মা তার পাশে রয়েছেন । তবে আস্তে আস্তে সে আবিষ্কার করে যে, তার প্রিয় মা তাকে সহযোগিতা করতে পারেন না। জীবনের চাপে প্রতিদিন মা ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। স্কুলের জীবন, সহপাঠীদের সাথে সম্পর্ক এবং তার অন্য কাজ, এসবের প্রতি মায়ের একদমই কোনো খেয়াল নেই। এভাবে ছেলেটির মাথার উপরে হঠাত্ আকাশ ভেঙ্গে পড়ে এবং সে না ফেরার দেশে প্রবেশ করে। এ দিক থেকে বলা যায়, ছেলেটির আত্মহত্যার পিছনে মাও ভীষণভাবে দায়ী।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040