0530
|
গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রবাল প্রাচীর। অস্ট্রেলিয়ার উত্তর পূর্বে অবস্থিত কুইন্সল্যান্ডের সমুদ্র তীরবর্তী প্রবাল সাগরে অবস্থিত। গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ প্রায় ৯০০টি ছোট বড় দ্বীপ এবং ৩০০০-এরও বেশী প্রবাল প্রাচীর নিয়ে গঠিত। প্রায় ২০০০ কি.মি. দীর্ঘ এই প্রবাল প্রাচীর পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান এর অংশ। একে "স্বচ্ছ ও উদার সামুদ্রিক অতিবিরল রাজ্য" গণ্য করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ইউনেস্কো গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের পরিবেশ সংক্রান্ত একটি পর্যালোচনা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পানির মান উন্নত রাখার ক্ষেত্রে প্রশাসন আন্তরিক নয়। রিপোর্টে আশঙ্কা করে বলা হয়, ২০১৫ সালে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিশ্বের বিলুপ্তির সম্মুখীন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
কিন্তু ইউনেস্কোর সতর্কবার্তার সঙ্গে একমত হননি অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ মন্ত্রী গ্রেগ হান্ট। তিনি বলেন,
আমি বলতে চাচ্ছি যে, এমন কি জিনিস গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলেছে? নিঃসন্দেহে সমস্যাটা হচ্ছে পানির মান। সুদীর্ঘ অতীতে পানির মান উন্নত করায় সরকারের চেষ্টা ছিল সুস্পষ্ট। সামুদ্রিক পানির পরিচ্ছন্নতা, গভীরতা ও পানির মান উন্নত করার দীর্ঘ সরকারি পরিকল্পনা জনসাধারণও স্বীকার করেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রেলীয় সরকার বলেছে, ইউনেস্কোর উপাত্তে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে রক্ষার ক্ষেত্রে তারা চমৎকার অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ তীরবর্তী অঞ্চলের খনি শিল্পের পুঁজি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। খনি শিল্প-প্রতিষ্ঠান গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ নিকটবর্তী অঞ্চলে পোতাশ্রয় নির্মাণ করে, বর্জ্য নিষ্কাসন করে, সমুদ্রপথ সূচনা করে। ফলে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রাকৃতিক পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। গ্রীন পিস অস্ট্রেলিয়া প্যাসিফিকের আবহাওয়া ও জ্বালানী বিষয়ক উর্ধ্বতম সক্রিয় কর্মী জন হেপবার্ন বলেছেন, খনন শিল্প গ্রেড ব্যারিয়ার রিফের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি ডেকে আনছে। তিনি মনে করেন, খনন শিল্পের উন্নয়ন এবং বর্তমানে খনিজ জ্বালানির জনপ্রিয়তা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আব্বট পয়েন্টে বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা পোতাশ্রয় নির্মাণ সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে। পরিকল্পনাটি বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদ "গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ"-এর সম্পূর্ণতার জন্য হুমকি ডেকে এনেছে। এ কারণে ইউনেস্কো ও বিভিন্ন পক্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব প্রকৃতি তহবিলের একজন কর্মকর্তা মনে করেন,
ইউনেস্কো স্পষ্টভাবে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া সরকারের আব্বট পয়েন্ট পরিকল্পনার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে। এছাড়া পরিবেশ মন্ত্রীর উত্থাপিত অফসেট পরিকল্পনা সম্পর্কে জাতিসংঘ মনে করে, সেটা অনুপযুক্ত।
বর্তমানে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের জন্য হুমকি ডেকে আনার প্রধান উপাদান হচ্ছে আবহাওয়া পরিবর্তন, প্রবাল ধ্বংস হওয়া এবং গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের নিকটবর্তী সমুদ্রে খনিজ জাহাজঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা। এসব হুমকির কারণে গত ৩০ বছরে প্রায় অর্ধেক প্রবালপ্রাচীর বিলীন হয়েছে। কোন বিজ্ঞানী পূর্বাভাস দিয়েছেন, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, ২০২২ সালের পর গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আর দেখা যাবে না।