0509yin
|
রামাত গানের ইসরায়েলি হীরা বিনিময় কেন্দ্র বা আই.ডি.ই. হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সুরক্ষিত হীরা বিনিময় বা ব্যবসার বাজার। পরস্পর সংযুক্ত চারটি ভবন নিয়ে বিনিময় কেন্দ্রটি গঠিত। এখানে ১ হাজার ৪ শ'টিরও বেশি হীরা কোম্পানির ২ হাজার ২শ' অফিস রয়েছে।
সম্প্রতি শেষ হয়ে গেলো "আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক হীরা সপ্তাহ।" আই.ডি.ই. এবং নিউ ইয়র্কের হীরা ব্যবসায়ী ক্লাব-ডি.ডি.সি.'র যৌথ উদ্যোগে চূড়ান্তভাবে প্রক্রিয়াজাত হীরা বিনিময়ের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। আইডিই'র জেনারেল ম্যানেজার মটি বেসার বলেছেন, এ ধরনের হীরা সপ্তাহ আয়োজন করার লক্ষ্য হলো আইডিই'র সদস্য দেশগুলোকে আরো বেশি সুযোগ দেয়া। তিনি বলেন,
আমরা নিজেদের স্থাপনায় সদস্যদের জন্য বাণিজ্যিক মূল্য সংযোজন করি। হীরা শিল্পের বিক্রির পরিমাণ বেশিরভাগই প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয়। আমরা বিশ্বের কয়েকশ' ক্রেতাকে ইসরায়েলে আসতে আমন্ত্রণ করি, তাদের থাকার খরচ দেই। বিনিময়ের দু'পক্ষ কোন খরচ ছাড়াই ব্যবসা করতে পারে।
আই.ডি.ই.'র ৩ হাজার ৫শ'টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান আছে। এখানে সদস্যদের জন্য হীরার পেশাদার সেবা থেকে সাধারণ সামাজিক সেবা পর্যন্ত দেয়া হয়ে থাকে। আই.ডি.ই.'র 'এক্সচেঞ্জ হল' হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ও সক্রিয় হীরা কেনা-বেচার স্থান। কয়েকশ' ব্যবসা কোম্পানি এখানে ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা করতে পারে।
ডি.ডি.সি.'র চেয়ারম্যান রুভেন কফম্যান বলেছেন, বর্তমানে ইন্টারনেটে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় হীরার বিনিময় বাজার যেনো মানুষদের অতীতে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে ব্যবসার বাস্তব কার্যকারিতা অনেক ভালো হয়। তিনি বলেন,
চূড়ান্ত পণ্যভোগী এবং প্রান্তিক বিক্রয়কারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় প্রত্যেক ব্যবসায়ী। তাই এ বিনিময় পদ্ধতিতে ব্যবসায়ীদের একে অপরের মধ্যে পরিচয় ঘটে। এ ধরনের সম্মুখ ব্যবসায় কোটি কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময় মানুষকে বিস্মিত করে দেয়। পুরো হীরক শিল্পের জন্য এ ধরনের প্রদর্শনী আসলেই ব্যবসার মানকে উন্নীত করেছে।
আইডিই'র চেয়ারম্যান শুয়েল সনিৎজার মনে করেন, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্কের কারণে হীরা শিল্প বাজারে বিনিময়ে অদ্ভুত প্রভাব গড়ে। তিনি বলেন,
হীরা বিনিময়ের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রত্যেককেই একে অপরকে বিশ্বাস করা দরকার। যখন একটি কেনা-বেচা শেষ হয়, তখন আমরা হিব্রু ভাষায় প্রতিপক্ষকে বলবো 'মাজাল ভে ব্রাছা'। সারা বিশ্বে এমন হয়। প্রত্যেক বিনিময় এ ভাবে শেষ হয়। এ ধরনের শুভ কামনা কয়েকশ' বছর ধরে হয়েছে। আজও হয়ে থাকে। কারণ এটা মানুষের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্কের প্রতীক।
এবারের 'আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক হীরা সপ্তাহ' বিশ্বের ২০টি দেশ ও অঞ্চলের কয়েকশ' ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ করেছে। ৪ শতাধিক হীরা ব্যবসায়ীর সরবরাহ করা হীরার মূল্য একশ' কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। চারপাশে তাকালে, পুরো বিনিময় বাজার জনাকীর্ণ, একটি আড়ম্বরপূর্ণ বাজারের মতো দেখায়।
ইসরায়েলের শীর্ষ পর্যায়ের হীরা রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী অ্যান্দ্রে মেসিকা ডায়ামন্ডস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবি আমির মনে করেন, ইসরায়েলের হীরা বিক্রি পরিমাণ বাড়ানোর জন্য এ ধরনের বাজার খুবই সহায়ক। তিনি বলেন,
এটা একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বাজার। অন্য কোথাও এটা দেখা যায় না। সকল বিনিময়কারীদের একই বিনিময় হলে একত্রিত করা হচ্ছে একটি বিস্ময়কর ধারণা। সবাই একে অপরের পণ্য দেখতে পারে এবং মধ্যস্থতাকারীরা এখানে-সেখানে গিয়ে পণ্যদ্রব্য যাচাই করে দেখতে পারে। যে কেউ সরাসরি বিনিময় করতে পারে। পুরো প্রক্রিয়াটা হয় খুব দ্রুত। এটা ইসরায়েলী হীরক শিল্পের জন্য খুবই কল্যাণকর।
তাছাড়া, বিদেশী ক্রেতারাও এখানকার বিনিময়ের উপায় ও পরিবেশের প্রশংসা করেন। একজন বিদেশী ক্রেতা বলেন,
প্রদর্শনীটি খুবই মজার। সব ধরনের হীরা ব্যবসায়ী একই ঘরের ছাদের নীচে বিভিন্ন আকার, বিভিন্ন আকৃতি ও বিভিন্ন গুণগত মানের হীরা সরবরাহ করেন। সব বিনিময় হয় স্বচ্ছ। আমি প্রথমবারের মতো এখানে এসেছি। আমার মনে হয়, আবারো আসবো।
এবারের হীরা সপ্তাহের একটি উজ্জ্বল বিষয় ছিল বেলজিয়ামের বিখ্যাত হীরা সংগ্রাহক এডি এলজাসের 'দ্য রেইনবো কলেকশন'। প্রায় ৩শ'টি রঙিন হীরার চমৎকার এক সংগ্রহ রয়েছে এখানে। সুদীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা হীরা রয়েছে এখানে।
তিনি বলেছেন, সংগ্রহটি অদ্বিতীয় এবং অপরিমেয় মূল্য রয়েছে। কিন্তু তিনি এসব রঙিন হীরা সংগ্রহের উদ্দেশ্য শুধু আর্থিক নয়, বরং প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষদের আনন্দ দেয়া। তিনি বলেন,
আমার তোলা সবচেয়ে সুন্দর "দ্য রেইনবো কলেকশন" এবং দর্শকের ছবিটি হচ্ছে একটি বড় সাদা-কালো ছবি। এক গ্রুপ শিশু সংগ্রহের সামনে মুখে আনন্দ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা জানে না, সংগ্রহটির দাম কত ! শুধু জানে এটি কত সুন্দর, রংটাও কত চমৎকার! সাদা-কালো ছবি থেকে হীরার রঙ বোঝা যায় না, কিন্তু দেখা যায় শিশুদের চোখের আনন্দ।