Web bengali.cri.cn   
নিষিদ্ধ নগর
  2014-04-09 18:31:04  cri


প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা আজ আপনাদের বেড়াতে নিয়ে যাবো চীন ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ বেইজিংয়ের ইম্পেরিয়াল প্রাসাদে যা নিষিদ্ধ নগর নামে পর্যটকদের কাছে অধিক পরিচিত। চীনা ভাষায় এই রাজপ্রাসাদকে বলা হয় gugong কু কোং। চতুর্দশ শতাব্দীতে নির্মিত এই রাজপ্রাসাদ ছিল মিং ও ছিং ডাইন্যাসটির রাজাদের বাসস্থান।এর প্রাচীন অনুপম স্থাপত্য শৈলী মুগ্ধ করবে আপনাকে।পৃথিবীর পাঁচটি অন্যতম প্রধান প্রাসাদ বেইজিং এর ফরবিডেন সিটি ,ফ্রান্সের ভারসেইলস প্রাসাদ , ইংল্যান্ডের বাকিং হাম প্রাসাদ ,আমেরিকার হোয়াইট হাউজ ,রাশিয়ার ক্রেম্লিন এর মাঝে বেইজিং এর ফরবিডেন সিটি হচ্ছে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ অক্ষত পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাচীন প্রাসাদ কমপ্লেক্স ।প্রতি বছর প্রায় ১৪০০০০০০( ১ কোটি ৪০ লাখ) দেশী বিদেশী পর্যটক এই প্রাসাদ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে।

নামকরণের ইতিহাসঃ

বেইজিং ইম্পেরিয়াল প্রাসাদ এর অবস্থান বেইজিং শহরের প্রাণকেন্দ্র থিয়ান আন মেন চত্বরের উত্তর দিকে । এর প্রাচীন নাম নিষিদ্ধ নগর । আমাদের শ্রোতা বন্ধুদের মনে হতে পারে যে রাজ প্রাসাদের নাম "নিষিদ্ধ নগর" ছিল কেন? চীনের প্রাচীন জ্যোতির্বিদরা বিশ্বাস করতেন যে বেগুনী তারার অবস্থান হচ্ছে স্বর্গের প্রাণকেন্দ্রে, আর রাজারা হচ্ছেন স্বর্গীয় , আর এই স্বর্গীয় রাজারা বসবাস করেন বেগুনী রাজপ্রাসাদে , তাই পৃথিবীতে রাজারা যে প্রাসাদে বসবাস করেন তাকে বলা হয় বেগুনী শহর। রাজার বিশেষ অনুমতি ছাড়া কারো এই প্রাসাদে প্রবেশ ও প্রাসাদ হতে প্রস্থান করা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ ছিল ।তাই একে বলা হতো নিষিদ্ধ বেগুনী শহর বা সংক্ষেপে নিষিদ্ধ নগর।

নির্মাণের ইতিহাসঃ

তো চলুন বন্ধুরা এবারে জেনে নেই এই প্রাসাদ নির্মাণের ইতিহাস।

মিং রাজা জুডি ১৪০৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন ।প্রায় ১০০০০০০(১০ লাখ) শ্রমিক এবং ১০০ জন শিল্পীর দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ১৪২০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পর তৎকালীন রাজধানী নান চিং থেকে বেইজিংয়ে স্থানান্তর করা হয়। বেইজিং এর ফাংশান জেলা থেকে সরবরাহ করা হয় প্রয়োজনীয় পাথর। বলা হয়ে থাকে যে সে সময় রাস্তার পাশে পানি সঞ্চয়ের জন্য ৫০ মিটার পর পর কুপ খনন করা হয়।পরে শীতকালে সেই পানি রাস্তায় ছড়িয়ে দেয়া হতো। পানি জমাট বেঁধে বরফে রূপান্তরিত হলে তাতে বড় বড় নির্মাণ কাজে ব্যবহারের বড় বড় পাথর ও কাঠ বহন করা হতো। এছাড়া দূর দূরান্তের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে নির্মাণের অন্যান্য উপকরণ বহন করে আনানো হতো। এই প্রাসাদের নির্মাণ শৈলীতে প্রাচীন চীনাদের স্থাপত্য শিল্পে দক্ষতার অনন্য নিদর্শন পাওয়া যায়।এই প্রাসাদ তৈরিতে ব্যবহৃত ইট তৈরি করা হয় সাদা চুন ও আঠালো চাল থেকে আর সিমেন্ট তৈরি করা হয় , আঠাল চাল ও ডিমের সাদা অংশ থেকে।এই অবিশ্বাস্য উপকরণ প্রাসাদের দেয়ালকে করেছে অসম্ভব রকম মজবুত ও শক্তিশালী। রাজপ্রাসাদটি উত্তর দক্ষিণে ৯৬১ মিটার দীর্ঘ এবং পূর্ব পশ্চিমে ৭৫৩ মিটার প্রশস্ত ।পুরো রাজপ্রাসাদটি ৭২৫,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এর মাঝে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা আছে ১৫৫,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে। কথিত আছে এই রাজপ্রাসাদে মোট ৯৯৯৯.৫টি কক্ষ আছে, তবে ১৯৭৩ সালে বিশেষজ্ঞদের সরজমিন অনুসন্ধানে ছোট বড় মিলে ৯০টির বেশি আঙিনা এবং ৯৮০টি ভবনের সন্ধান পাওয়া যায় এতে মোট কক্ষের সংখ্যা ৮৭০৭টি। প্রাসাদটি চারপাশে ১২ মিটার উঁচু এবং ৩৪০০ মিটার দীর্ঘ দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত।পুরো দেয়ালটি আবার ৫২ মিটার প্রশস্ত দুর্গ পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা রাজপ্রাসাদকে দিয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা। প্রাসাদের চারদিকে ৪টি প্রবেশপথ রয়েছে, প্রধান প্রবেশ পথের নাম উমেন যা থিয়ান আন মেন চত্বরের উল্টোদিকে অবস্থিত, পূর্ব দিকের প্রবেশ পথের নাম তোং হুয়া মেনের পশ্চিম দিকের প্রবেশ পথের নাম সি হুয়া মেন, এবং উত্তর দিকের প্রবেশপথের নাম হচ্ছে শেন উ মেন। যার অপরদিকে রয়েছে চিং শান পার্ক।

বন্ধুরা আপনারা যারা উপর থেকে পুরো প্রাসাদ এলাকাটির দৃশ্য দেখতে চান তাদের জানিয়ে রাখছি, চিং শান পার্কের পাহাড় চুড়ো থেকে আপনারা পুরো প্রাসাদ এলাকার অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে বেছে নিতে হবে ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। চিংশান পাহাড়ের উচ্চতা ৪২.৬ মিটার যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৮.৩৫ মিটার উঁচু , এটি শহরের সবচেয়ে উঁচু এলাকা, তাই বন্ধুরা , মেঘমুক্ত আকাশ হলে আপনারা পাহাড়ের চুড়ো থেকে রাজপ্রাসাদের প্রাচীন স্থাপত্যের সাথে বেইজিং শহরের আধুনিক স্থাপত্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধনের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040