0407huanqiu
|
যদি আপনারা জিজ্ঞেস করেন পুতিনের ছোট বেলার সবচেয়ে গভীর স্মৃতি কি? তা হলো ছোট বন্ধুর সঙ্গে কাঠি দিয়ে ইঁদুরদের ছত্রভঙ্গ করা।
আপনারা কি জানেন, যখন পুতিনের জন্ম হয়, তখন তাঁর মায়ের বয়স ৪১ বছর। তাই তাঁর মা অনেক অনেক আদর যত্নের মাধ্যমে পুতিনকে বড় করেন। সম্পূর্ণভাবেই অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা এড়ানোর জন্য তাঁর মা পুতিনকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ খুব কম দিতেন। তবে ছোটবেলায় পুতিন যে কর্তব্যপরায়ণ ছেলে ছিলেন তা কিন্তু নয়। ৮ বছর বয়সেই তিনি সারা দিন বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় খেলাধুলা করতেন এবং অন্যের সঙ্গে মারামারি করতেন। আর এসব মারামারির অভিজ্ঞতাই তাকে শিখিয়েছে যে, যদি আপনি বিজয়ী হতে চান, তাহলে প্রতি মারামারিতে শেষ পর্যন্ত জিদ ধরে রাখতে হবে।
এখানেই যে পুতিনের ছোটবেলার দুষ্টমি সীমাবদ্ধ ছিল তা কিন্তু নয়। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর পুতিন স্কুলেও অনেক ঝামেলা সৃষ্টি করেন। তিনি একাধিকবার স্কুলের ক্রিড়া শিক্ষকের উপর রাগ করেছেন, পদার্থবিদ্যার শিক্ষকের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না ।
তিনি স্কুলের ইউনিফর্ম পরতে ভুলে যেতেন, তাই শিক্ষকরা তাঁকে ক্লাসরুম থেকে তাড়িয়ে দিতেন। পরীক্ষার সময় সহপাঠীর সঙ্গে নোট বিনিময় করতেন, এ জন্য শিক্ষকরা তাঁকে অনেক শাস্তি দিয়েছেন। তিনি নিজেও বলেন যে, স্কুলে যাওয়াকে তিনি খুব বেশি পছন্দ করতেন না, বিভিন্ন নিয়ম মেনে নেওয়াটাও পছন্দ করতেন না। আর এসব দুষ্টমির কারণে ছোটবেলায় তাঁর লেখাপড়াও ভালো ছিল না।
এখন আমরা একজন নারী নেত্রীর ছোটবেলার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। তিনি হলেন জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেল। ১৯৫৪ সালে তিনি সাবেক পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় বোন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন খুব অভিজ্ঞ যাজক। তাঁর মা ইংরেজি ও লাতিন ভাষার শিক্ষক ছিলেন। তাঁর জন্মের ৮ সপ্তাহ পর তাঁর পরিবার পূর্ব জার্মানিতে স্থানান্তরিত হন। তাঁর পরিবারের পশ্চিম জার্মানির প্রেক্ষাপটের কারণে পূর্ব জার্মানির সহপাঠীর তুলনায় মার্কেলের অবস্থা ছিল একটু ভিন্ন। তাঁর পোশাক ছিল পশ্চিম জার্মানির এবং এটি তখন পূর্ব জার্মানির চেয়ে বেশ ভালো ছিল। তাঁর ব্যবহার থেকে শুরু করে আচার আচরণ সবকিছুই অন্য সহপাঠীর চেয়ে একটু ভালো ছিল। আর যাজক হিসেবে তাঁর পরিবারের তো কিছু বিশেষ অধিকার ছিলই। যেমন তাঁর পরিবারের জন্য ছিল দু'টি বড় গাড়ি এবং তাঁর বাবার লেখাপড়ার জন্য একটি বিশাল বিশেষ কক্ষ।
যদিও তাঁর পরিবারের অবস্থা অন্যের চেয়ে ভালো ছিল, তবে তিনি কিন্তু ততটা আস্থাবান ছিলেন না। সিঁড়ি দিয়ে নামতেও তিনি ভয় পেতেন।
কিন্তু তারপর তিনি কিভাবে এতো আস্থাবান হলেন? তিনি বলেন, তাঁর আস্থা ড্রাইভিং-এর প্ল্যাটফর্ম থেকে ফিরে এসেছে। যখন তাঁর বয়স ১২ বছর, তখন স্কুলের একটি ড্রাইভিং ক্লাসে তিনি ড্রাইভিং চর্চা করেন। তিনি প্ল্যাটফর্মে ৪৫ মিনিট দাড়িয়ে ছিলেন। অবশেষে তিনি ড্রাইভিং করেন এবং সে মূহূর্ত থেকেই তাঁর আস্থা ফিরে আসে। আর সেদিন থেকেই আর কোনো কাজ করতে তিনি ভয় পান না।
এবারে আমরা যে নেতার ছোটবেলার কথা বলতে চাই, তিনি হলেন ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। তাঁর ছোটবেলা খুব কঠোর এবং খুব কঠিন ছিল। আর ঠিক এমন খারাপ পরিবেশের কারণেই তাঁর চরিত্র ছিল এত স্বাধীন, নিষ্ঠুর এবং আগ্রাসী ।
সাদ্দামের জন্মের আগেই তাঁর বাবা মারা যান। বাবা মারা যাবার পর তাঁর চাচার সঙ্গে তাঁর মায়ের বিয়ে হয়। যদিও তাঁর চাচা সাদ্দামকে মারপিট করেন নি, তবে তিনি কখনই সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলে নি। যখন সাদ্দামের বয়স দশ বছর,তখন তাঁর সম বয়সী আদনান নামে এক মামাতো ভাই তাকে দেখতে আসে। আদনান তখন স্কুলে লেখাপড়া করছে, নিজের নাম লিখতে পারে এবং অনেক অক্ষর লিখতেও পারে। সাদ্দাম তখন আদনানের মাধ্যমে নিজের জীবনের লক্ষ্য আবিস্কার করে।
সাদ্দামও স্কুলে লেখাপড়া করতে চায়। তবে তাঁর পরিবারের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ।
সাদ্দাম আদনানের উতসাহে এক রাতে বাসা থেকে পালিয়ে যান। তাঁর মামার সাহায্যে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। আর এ সিদ্ধান্তই পুরোপুরিভাবে সাদ্দামের জীবন পরিবর্তন করে দেয়। তাঁর পরিবার, তাঁর শোচনীয় ছোটবেলা তাঁর চরিত্রের উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেছিলেন, যদি তুমি অন্যদেরকে হুঁশিয়ার করো, তাহলে তুমি তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, অন্যরা তোমাকে শ্রদ্ধাও করবে। এটাই হল তাঁর জীবনের তর্কশাস্ত্র। এর জন্য তিনি সফল হয়েছেন, এর জন্য তিনি ব্যর্থও হয়েছেন।