Web bengali.cri.cn   
পানিসম্পদ কাজে লাগিয়ে বিদ্যুতের অভাব অনেকটা দূর করেছে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর
  2014-04-04 19:00:38  cri

প্রিয় শ্রোতা, পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নীলাম উপত্যকার প্রাকৃতি সৌন্দর্য অসাধারণ। পাকিস্তানের তথ্যমাধ্যমে এই স্থানটি "পৃথিবীর স্বর্গ" নামে পরিচিত। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে "স্বর্গ"-এর রাত ছিল অন্ধকার। তিন বছর আগে, স্থানীয় অধিবাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ছোট টারবাইন জেনারেটর ব্যবহার করে পানিবিদ্যুত উত্পাদন শুরু করে। এদিকে, ২০১৬ সালে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে বৃহত্ সহযোগিতামূলক প্রকল্প নীলাম ঝেলাম জলবিদ্যুত প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবার কথা। তখন পুরোপুরিভাবে "পৃথিবীর স্বর্গ"-কে আলোকিত করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে পাকিস্তান গুরুতর জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করছে। গ্রীষ্মকালে দেশটিতে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকে ৪ হাজার মেগাওয়াট। দেশটির কোন কোন অঞ্চলে দিনে ২২ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুত থাকে না। বিদ্যুতের অভাব শুধু মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ওপর প্রভাব ফেলে তা নয়, বরং দেশের অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত বছরের জুলাই মাসে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াজ শরীফ জানান, আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে দেশের জ্বালানি সমস্যার সমাধান করা হবে। চলতি বছরের প্রথম দিকে দেশটির জলসেচ ও বিদ্যুত মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ জানান, বর্তমান সরকার জ্বালানির জন্য পেট্রোলিয়ামের ওপর নির্ভরতা কমাতে কয়লা থেকে উত্পাদিত বিদ্যুত এবং জলবিদ্যুত ও বায়ুবিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।

আসলে তিন বছর আগেই, নীলাম উপত্যকার অধিবাসীরা এক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হতে শুরু করে। তারা দূষণমুক্ত ও পরিবেশ সহায়ক পানিসম্পদ কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত সমস্যার অনেকটা সমাধান করে। ৩৫ বছরের রাহিমুল্লাহ হচ্ছেন একটি টারবাইন বিদ্যুত উত্পাদন যন্ত্রের অপারেটর। তিনি বলেন,

"৫০টি পরিবার যৌথভাবে টারবাইন জেনারেটরটি কিনে ফেলেছে। মোট ৩ লাখ রুপি অর্থাত ৩ হাজার মার্কিন ডলার লেগেছে এটি ক্রয় করতে।"

নীলাম উপত্যকা জলবিদ্যুত ব্যুরোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শাফিক উসমানি বলছেন, 'এতদঞ্চলে নদীর স্রোত প্রবল এবং দু'শ কিলোমিটার দীর্ঘ নীলাম নদীটি উপত্যকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে।' অঞ্চলটির বার্ষিক বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ থেকে ২০ মেগাওয়াট। উসমানি বললেন, 'টারবাইন জেনারেটরের ব্যাপক ব্যবহার শুধু বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করেছে তা নয়, বরং স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এখন আর স্থানীয় বাসিন্দাদে জ্বালানির জন্য গাছ কাটতে হয় না।" তিনি আরও বলেন,

'নীলাম উপত্যকার সব সৌন্দর্যের উত্স বন ও নদীর স্রোত। এখানে সবাই শুধু বিশুদ্ধ জ্বালানিসম্পদ ব্যবহার করে। তাই এসব সৌন্দর্য চিরকাল সংরক্ষিত থাকবে।"

স্থানীয় অধিবাসী মুশতাক আহমেদ জানালেন, জলবিদ্যুত ব্যবহার করার পর থেকে তাঁর এবং তার পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। তিনি বলেন,

'আগে বিদ্যুত ছিল না। আমাদের ঘরের আবহাওয়া সবসময় প্রতিকূল থাকতো। কারণ, কাঠ পুড়িয়ে রান্না করা হতো ও ঘর গরম রাখা হতো। তাতে ব্যাপক ধোঁয়া সৃষ্টি হতো এবং আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতাম। তিন বছর আগে জলবিদ্যুত ব্যবহার শুরুর পর থেকে আমরা এ ধরনের রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পেয়েছি এবং পাশাপাশি অনেক সুবিধাও ভোগ করছি।"

আহমেদ ও তার পরিবারের জীবন ভবিষ্যতে আরো সহজ ও আরামদায়ক হবে। কারণ, তাঁর বাসার অদূরেই নির্মিত হচ্ছে নীলাম-ঝেলাম জলবিদ্যুত প্রকল্প। নির্মাণকাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তি—চীনের গে জৌ বা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের মহা-পরিচালক নিয়ে খাই বলেন,

'চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের মে মাসে এ প্রকল্পে বিদ্যুত উত্পাদন শুরু হবে। আসলে পাকিস্তান ও আমাদের অভিন্ন প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালেই এখানে বিদ্যুত উত্পাদন শুরুর সম্ভাবনা আছে। নির্মাণকাজ এক বছর আগেই সম্পন্ন হতে পারে।"

নীলাম-ঝেলাম জলবিদ্যুত প্রকল্প হচ্ছে পাকিস্তানের বৃহত্তম জলবিদ্যুত প্রকল্প। একে পাকিস্তানের "তিন-গিরিখাত প্রকল্প" হিসেবে ডাকা হয়। নিয়ে খাই জানান, প্রকল্পের মোট বিদ্যুত উত্পাদন ক্ষমতা হবে ৯৬৯ মেগাওয়াট। বিদ্যুত উত্পাদন শুরু হলে প্রকল্প থেকে বছরে বিদ্যুত উত্পাদিত হবে ৫১.৫ কোটি কিলোওয়াট-ঘন্টা। এ পরিমাণ হবে পাকিস্তানের মোট উত্পাদিত বিদ্যুতের ১২ শতাংশ। তখন দেশটির বিদ্যুতের অভাব কমে আসবে; জ্বালানি পরিস্থিতিও উন্নত হবে। এ ছাড়া, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তান যে উপকার পাবে তার আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে প্রতি বছর ৪ হাজার ৫শ' কোটি রুপি। দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এই প্রকল্প উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040